Friday, May 7, 2021

একই তারিখে বিশ্বব্যাপী সিয়াম ও ঈদ প্রসঙ্গে হাদীস থেকে দলীল

 


একই তারিখে বিশ্বব্যাপী সিয়াম ও ঈদ প্রসঙ্গে হাদীস থেকে দলীল

-------------------------------------------

হাদীসের নির্দেশনাঃ- চাঁদ দেখে সিয়াম শুরু, চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন। দূর থেকে চাঁদ দেখার সংবাদ পেলে সেই চাঁদ দেখা অনুযায়ী আমল করা। 

-------------------------------------------

{হাদীস নং ১} 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ حَدَّثَنَا مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَكَرَ رَمَضَانَ فَقَالَ لاَ تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْا الْهِلاَلَ وَلاَ تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের কথা আলোচনা করে বললেনঃ (রমজানের) চাঁদ না দেখে "তোমরা" সিয়াম পালন করবে না এবং (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখে ইফতার (ঈদ) করবে না। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় (৩০ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করবে। 

📙 সহীহ বুখারী  ১৯০৬ (শামেলা), সহীহ বুখারী  ১৭৮৫ (ইফাবা)

[নোট-১ঃ উক্ত হাদীসের "তোমরা" শব্দ পৃথিবীর সকল মুসলিম মানুষ ও জ্বীনদের উপর প্রযোজ্য। সে যেই দেশেই বাস করুক না কেন।  ]

{হাদীস নং ২} 

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ، الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، - رضى الله عنه - قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا رَأَيْتُمُ الْهِلاَلَ فَصُومُوا وَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَأَفْطِرُوا فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَصُومُوا ثَلاَثِينَ يَوْمًا ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন "তোমরা" চাঁদ দেখবে তখন সাওম (রোযা) আরম্ভ করবে এবং যখন চাঁদ দেখবে তখন ইফতার (ঈদ) করবে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন সিয়াম পালন করবে।

📙 সহীহ মুসলিম  ২৩৮৫ (ইফাবা)

-------------------------------------------

স্বয়ং রাসূল (সা) এর আমলঃ-

{হাদীস নং ৩}

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ السَّمْرَقَنْدِيُّ، وَأَنَا لِحَدِيثِهِ، أَتْقَنُ قَالَا: حَدَّثَنَا مَرْوَانُ هُوَ ابْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ وَهْبٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَالِمٍ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ نَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: تَرَائِى النَّاسُ الْهِلَالَ، فَأَخْبَرْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنِّي رَأَيْتُهُ فَصَامَهُ، وَأَمَرَ النَّاسَ بِصِيَامِهِ

إسناده صحيح

ইবনু উমার (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা রমাযানের চাঁদ অন্বেষণ করছিল। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি। অতঃপর তিনি নিজেও সওম রাখলেন এবং লোকদেরকেও রমাযানের সাওম পালনের নির্দেশ দিলেন।

📙 সুনানে আবু দাউদ ২৩৪২ (ইফাবা)

{হাদীস নং ৪} 

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، وَخَلَفُ بْنُ هِشَامٍ الْمُقْرِئُ، قَالَا: حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ رِبْعِيِّ بْنِ حِرَاشٍ، عَنْ رَجُلٍ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اخْتَلَفَ النَّاسُ فِي آخِرِ يَوْمٍ مِنْ رَمَضَانَ، فَقَدِمَ أَعْرَابِيَّانِ، فَشَهِدَا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِاللَّهِ لَأَهَلَّا الْهِلَالَ أَمْسِ عَشِيَّةً، فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّاسَ أَنْ يُفْطِرُوا، زَادَ خَلَفٌ فِي حَدِيثِهِ،: وَأَنْ يَغْدُوا إِلَى مُصَلَّاهُمْ

إسناده صحيح

রিব‘ঈ ইবনু হিরাশ (রহ.) থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রমাযানের শেষদিন সম্পর্কে লোকদের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দিলো, এমতাবস্থায় দু‘জন বেদুঈন এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দিলেন যে, তারা উভয়ে গতকাল সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছেন। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে সওম ভঙ্গ করার নির্দেশ দিলেন। খালফ (রহ.) তার হাদীসে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে সকালে তাদের ঈদগাহে গমনের নির্দেশ দিয়েছেন।

📙 সুনানে আবু দাউদ ২৩৩৯ (ইফাবা)

{হাদীস নং ৫}

حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ أَبِي وَحْشِيَّةَ، عَنْ أَبِي عُمَيْرِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ عُمُومَةٍ، لَهُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَكْبًا جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَشْهَدُونَ أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلاَلَ بِالأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يُفْطِرُوا وَإِذَا أَصْبَحُوا أَنْ يَغْدُوا إِلَى مُصَلاَّهُمْ ‏.‏

إسناده صحيح

হাফস্‌ ইবনে উমর (রহঃ) ..... আনাস (রাঃ) থেকে তাঁর চাচা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত। একদা কয়েকজন অশ্বারোহী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাযির হয়ে বলেন যে, তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছেন। তখন তিনি (সা) তাদেরকে সিয়াম ভঙ্গ করতে এবং পরের দিন সকালে ঈদের সালাত আদায় করতে বলেন। 

📙 সুনানে আবু দাউদ ১১৫৭  (ইফাবা), নাসাঈ ১৫৫৭, ইবনে মাজাহ ১৬৫৩, মুসনাদে আহমাদ ২০৫৮৪ , দারাকুতনী ২২০৪, মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক ৭৩৩৯, মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৯৪৬১, মিশকাত ১৪৫০.

▬▬▬▬ ◈◉◈ ▬▬▬▬

এবার আসুন হাদিসগুলোর ব্যাখ্যা দেখিঃ-

(হাদীস নং ১) এর ব্যাখ্যাঃ

☞ ফাতহুল বারী লি ইবনু হাজার আসক্বালানী (৪/১২৩) শামেলা

قوله «فلا تصوموا حتى تروه» ليس المراد تعليق الصوم بالرؤية في حق كل أحد بل المراد بذلك رؤية بعضهم وهو من يثبت به ذلك إما واحد على رأي الجمهور أو اثنان على رأي آخرين ووافق الحنفية على যالأول إلا أنهم خصوا ذلك بما إذا كان في السماء علة من غيم وغيره وإلا متى كان صحو لم يقبل إلا من جمع كثير يقع العلم بخبرهم وقد تمسك بتعليق الصوم بالرؤية من ذهب إلى الزام أهل البلد وغيرها ومن لم يذهب إلى ذلك قال لأن قوله حتى تروه خطاب لأناس مخصوصين فلا يلزم غيرهم ولكنه مصروف عن ظاهره فلا يتوقف الحال على رؤية كل واحد فلا يتقيد بالبلد

অর্থঃ “রাসূলুল্লাহ (সা:) এর বাণী (তােমরা চাদ না দেখা পর্যন্ত সিয়াম রাখবে না) এর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখতে হবে এমন উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা। বরং পবিত্র বাণীটির উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু ব্যক্তির চাঁদ দেখা। জমহুর ফকীহ গণের মতানুসারে রমযানের

চাঁদ একজনের দেখাই যথেষ্ট হবে। যা হানাফী ফকীহগণের মত। আর অন্যদের মতে দুজনের দেখা যথেষ্ট হবে। এ মতামত অপরিচ্ছন্ন আকাশের ক্ষেত্রে, কিন্তু আকাশ যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এমন সংখ্যক ব্যক্তির চাঁদ দেখতে হবে যাদের সংখ্যা দ্বারা চাঁদ দেখার সংবাদ প্রমাণিত হবে। যারা এক দেশের দেখা অন্য দেশের জন্য প্রযােজ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন এটা তাদের মত। আর যারা প্রত্যেক দেশের জন্য চাঁদ দেখার মত প্রকাশ করেছেন তারা বলেছেন “যতক্ষণ না তাকে দেখবে” এর মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চলের মানুষকে সম্বােধন করা হয়েছে। যা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রযােজ্য নয় । কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের এ মত হাদীসের প্রকাশ্য বক্তব্যের পরিবর্তন ও বিকৃতি। অতএব চাঁদ দেখাকে প্রত্যেক মানুষের সাথে এবং প্রত্যেক দেশের সাথে সীমিত করা যাবে না। 

-------------------------------------------

(হাদীস নং ২) এর ব্যাখ্যাঃ- 

☞ শারহে নাবাবী আলা মুসলিম (৭/১৯০) শামেলা

قوله صلى الله عليه وسلم (صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته) المراد رؤية بعض المسلمين ولا يشترط رؤية كل إنسان بل يكفي جميع الناس رؤية عدلين وكذا عدل على الأصح هذا في الصوم وأما الفطر فلا يجوز بشهادة عدل واحد على هلال شوال عند جميع العلماء

অর্থঃ “এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তােমরা সাওম ছাড়, ঈদ কর।”

এর অর্থ হলাে কিছু মুসলিমের দেখার মাধ্যমে উদয় প্রমাণিত হওয়া। এ শর্ত করা যাবেনা যে প্রত্যেক মানুষেরই চাঁদ দেখতে হবে। বরং যে কোন দেশের যে কোন দু'জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির দেখাই সকল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। বরং সর্বাধিক বিশুদ্ধ মতে সাওমের ক্ষেত্রে একজন সৎ ব্যক্তির দেখাই সকলের আমলের জন্য যথেষ্ট । আর অধিকাংশ ফকীহগণের মতে শাওয়ালের নতুন চাঁদ প্রমাণের জন্য একজনের সাক্ষ্য যথেষ্ট হবেনা।”

-------------------------------------------

(হাদীস নং ৫) এর ব্যাখ্যাঃ

☞ মিরকাতুল মাফাতিহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ (৩/১০৭৪) হাদিস নং ১৪৫০ এর ব্যাখ্যা (শামেলা)

قال المظهر: يعني لم يروا الهلال في المدينة ليلة الثلاثين من رمضان، فصاموا ذلك اليوم، فجاء قافلة في أثناء ذلك اليوم، وشهدوا أنهم رأوا الهلال ليلة الثلاثين، فأمر النبي - صلى الله عليه وسلم - بالإفطار، وبأداء صلاة العيد في اليوم الحادي والثلاثين

অর্থঃ “তারা ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমাবেত হল। আল্লামা মাজহার বলেন যে ঐ বছর মদীনা শরীফে ২৯শে রামাদান দিবাগত রাতে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মদীনা বাসী ৩০ রামাদানের সাওম রেখে ছিলেন। এমতাবস্থায় ঐ দিন দ্বিপ্রহরে একদল ছাওয়ারী দূর থেকে আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, নিশ্চয়ই তারা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নতুন চাঁদ দেখেছে। অতপর, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের এ সংবাদ গ্রহণ করে সকলকে সাওম ভঙ্গের নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন (২রা শাওয়াল) ঈদের নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন।” (মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৫/১৫৩)

▬▬▬▬ ◈◉◈ ▬▬▬▬

উক্ত হাদীস গুলোতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিজ আমল দ্বারা নিম্নোক্ত বিষয় গুলাে প্রতিষ্ঠিত হয়।

(এক) মাস প্রমাণের জন্য সকলের চাঁদ দেখা জরুরী নয় বরং রামাদানে একজন আর ঈদে দুইজন ন্যায়পরায়ণ মুসলিমের চাঁদ দেখাই সকলের আমলের জন্য যথেষ্ট হবে।

(দুই) নিজ দেশের আকাশে নতুন চাঁদ দেখতে হবে এমন শর্ত করা যাবে না

(তিন) দূরবর্তীদের চাঁদ দেখার সংবাদ পেলে অন্য সকলের উপর আমল জরুরী হবে।

-------------------------------------------

অতএব, উক্ত দলীলসমূহের ভিত্তিতে একই তারিখে বিশ্বব্যাপী সিয়াম শুরু করা ও ঈদ পালন করা যাবে বলে প্রমাণিত হয়। 

الله أعلم

-------------------------------------------

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ

▬▬▬▬ ◈◉◈ ▬▬▬▬

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...