Sunday, January 3, 2021

নারীদের মুখের বাড়তি লোম অপসারণ বা কাটা কি জায়েজ?


 প্রশ্ন : আমার মুখে অন্যদের তুলনায় বেশি লোম। আমি কি এগুলো লেজার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে উপড়ে বা তুলে ফেলতে পারি? ইসলামে কোনো বিধি-নিষেধ আছে?


উত্তর : নারীদের এ ধরনের লোম যেগুলোকে অতিরিক্ত বা সৌন্দর্যবর্ধনে প্রতিবন্ধক বলা যেতে পারে বা যে লোম শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট করে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের ফতোয়া হচ্ছে, সেটা তারা ইচ্ছে করলে উঠাতে পারবে।

আর শরীরের লোমের বিষয় দীর্ঘ একটি আলোচ্য বিষয়। আমি শুধু এতটুকু বলব যে, এই বিষয়গুলো শরিয়ার মধ্যে ‘আলাল আফ’ অর্থাৎ ‘চুপ’ করা হয়েছে। এগুলোর ওপর সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ওলামায়ে কেরাম তাঁদের তাহকিকের মধ্যে বলেছেন, এগুলো ক্ষমার ওপর রয়েছে, নিষেধ করা হয়নি।

সুতরাং, এটি নিষেধ করা হয়নি যেহেতু, তাই এ ক্ষেত্রে অবকাশ রয়েছে। যদি নারীদের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, লোম অপসারণ জায়েজ।

এনটিভি’র প্রশ্নোত্তর দিয়েছেন: ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ

----------------------------*********************************----------------------------

মহিলাদের হাত এবং পায়ের অবাঞ্চিত লোম বিশেষ উপায় তুলে ফেলা কি যায়েয আছে

প্রথমত:

লোম ফেলে দেয়া ও না-দেয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা শরীরের লোমগুলোকে তিনশ্রেণীতে ভাগ করেছেন:

[১]- ঐ সমস্ত লোম বা চুল যেগুলো ফেলে দেয়া বা ছেঁটে ছোট রাখার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে। এটি সুনান আল-ফিতরাহ্‌ বলে পরিচিত। যেমন: নাভীর নিচের লোম চেঁছে ফেলা, গোঁফ ছেঁটে ছোট রাখা এবং বগলের লোম তুলে ফেলা। হজ্জ্ব কিংবা ওমরাহ্‌ পালনের সময় মাথার চুল কামিয়ে বা কেটে ফেলাও এর অন্তর্ভুক্ত।

উল্লিখিত মতের স্বপক্ষে দলিল হলো ‘আয়েশাহ্‌ (রা) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস যাতে তিনি বলেন: আল্লাহ্‌র রাসূল () বলেছেন: দশটি কাজ প্রকৃতির অন্তর্গত [অর্থাৎ, মানুষের স্বভাবগত আচরণ]। গোঁফ ছেঁটে রাখা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা, নখ কাটা, আঙ্গুলের গিরাগুলো ঘষে-মেজে ধৌত করা, বগলের লোম তুলে ফেলা, নাভীর নিচের লোম চেঁছে ফেলা এবং মলমুত্র ত্যাগের পর পানি ব্যবহার করে নিজেকে পরিষ্কার করা।”

যাকারিয়্যা বলেন: মুস’আব বলেছেন: আর আমি দশ নম্বরটি ভুলে গেছি। তবে ওটা পানি দিয়ে কুলি (মুখ পরিষ্কার) করা হতে পারে।

হাদিসটি মুসলিম (২৬১) সংকলন করেছেন।

[২]- ঐ সমস্ত লোম যেগুলো ফেলে দেয়া নিষিদ্ধ যার মধ্যে ভ্রূ-ও রয়েছে। চোখের ভ্রূ ফেলে দেয়ার এই কাজটিকে বলা হয় আল-নামাস। একইভাবে দাড়ি কাটাও হারাম।

উল্লিখিত মতের স্বপক্ষে দলিল হলো ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবন মাস‘ঊদ (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসটি যাতে তিনি বলেন: আমি আল্লাহ্‌র রাসূলকে () বলতে শুনেছি: “আল্লাহ্‌ অভিসম্পাত করেছেন ঐ নারীর ওপর যে শরীরে উল্কি আঁকে ও যে আঁকিয়ে নেয়; যে ভ্রু তুলে ফেলে (আল-নামিসাহ্‌) এবং যে তুলে ফেলায় (আল-মুতানাম্মিসাহ্‌), এবং সে যে সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে তার দাঁত চিকন করে।”

[আল-বুখারি (৫৯৩১); মুসলিম (২১২৫)]

আবদুল্লাহ্‌ ইবন ‘উমর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আল্লাহ্‌র রাসূলকে () বলতে শুনেছি: “মুশরিকদের থেকে আলাদা হও – দাড়ি লম্বা করো ও গোঁফ ছেঁটে রাখো।”

[আল-বুখারি (৫৮৯২); মুসলিম (২৫৯)]

আন-নাওয়াবী (রহঃ) বলেছেন:

নামাসিয়াহ্‌ হলো ঐ নারী যে মুখের লোম তুলে ফেলে এবং মুতানাম্মিসাহ্‌ হলো ঐ নারী যে অন্য কাউকে দিয়ে এমনটি করিয়ে নেয়। এই ধরনের কাজ হারাম। তবে কোনো নারীর যদি দাড়ি বা গোঁফ গজায় তাহলে সেক্ষেত্রে ঐগুলো তুলে ফেলা হারাম নয়। বরং আমাদের দৃষ্টিতে সেটা মুস্তাহাব (উৎসাহিত)।

[শারহ্‌ আল-নাওয়াবী লি সহীহ্‌ মুসলিম, ১৪/১০৬]

[৩]- ঐ সমস্ত লোম বা চুল যেগুলো ফেলে দিতে হবে নাকি যেমন আছে তেমনি রেখে দিতে হবে সে ব্যাপারে শারিয়াহ্‌ কোনো মন্তব্য করেনি। যেমন: হাত-পা, গাল বা কপালের লোম।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।

কেউ বলেছেন যে, এগুলো ফেলে দেয়ার অনুমতি নেই। কারণ এগুলো ফেলে দেয়ার অর্থ হলো আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা। যেমনটি আল্লাহ্‌ বলেন যে, শয়তান বলেছিল:

“ ‘এবং তাদেরকে আল্লাহ্‌র সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেবো।’ ” [আন-নিসা’ ৪:১১৯]

আবার কেউ বলেছেন যে, এগুলো ঐ সব বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যেগুলোর ব্যাপারে কোনোকিছু বলা নেই। তাই এগুলোর ব্যাপারে হুকুম হলো এগুলো ফেলে দেয়া অনুমোদিত। এগুলো ফেলেও দেয়া যাবে অথবা যেমন আছে তেমন রেখে দেয়া যাবে। কারণ কোরআন এবং সুন্নাহ্‌তে যা কিছুর উল্লেখ নেই তা অনুমোদিত।

এই মত স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ এবং শায়েখ ইবন ‘ঊসাইমীন কর্তৃক সমর্থিত মত। ফাতাওয়া আল-মার’আহ্‌ আল-মুসলিমাহ্‌, ৩/৮৭৯ দ্রষ্টব্য।

ফাতাওয়া আল-লাজনাহ্‌ আল-দা’ইমাহ্‌- তে রয়েছে:

[ক] কোনো নারী যদি ঠোঁটের উপরের, উরুর, পায়ের গোড়ালির উপরের অংশের (হাঁটুর নিচে) এবং বাহুর লোম ফেলে দেয় তাহলে তার কোনো পাপ হবে না। এগুলো তুলে ফেলা তানাম্মুস (প্লাকিং) এর মধ্যে পড়ে না যা নিষিদ্ধ।

(ফাতাওয়া আল-লাজনাহ্‌ আল-দা’ইমাহ্‌, ৫/১৯৪, ১৯৫)

[খ] কমিটির আছে প্রশ্ন করা হয়েছিল:

দুই ভ্রূর মাঝখানের লোম তুলে ফেলার ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?

তারা উত্তর দিয়েছিলেন:

এগুলো তুলে ফেলার অনুমতি রয়েছে। কারণ এগুলো ভ্রূর কোনো অংশ নয়।

(ফাতাওয়া আল-লাজনাহ্‌ আল-দা’ইমাহ্‌, ৫/১৯৭)

স্থায়ী কমিটির কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল:

শরীরের লোম পরিষ্কার করার ব্যাপারে একজন নারীর ক্ষেত্রে হুকুম কী?

তারা উত্তর দিয়েছিলেন:

ভ্রূ এবং মাথার চুল ছাড়া এমনটি করার তার জন্য অনুমতি আছে। মাথার চুল কিংবা ভ্রূর কোনো অংশ ফেলে দেয়া তার জন্য বৈধ নয়। সেটা চেঁছে ফেলেই হোক বা অন্য কোনো উপায়েই হোক।

ফাতাওয়া আল-লাজনাহ্‌ আল-দা’ইমাহ্‌, ৫/১৯৪

প্রশ্নকারীর “আমি জানি যে, ভ্রূ তুলে ফেলা হারাম এবং মুখের লোমের ক্ষেত্রেও তাই”- এই কথাগুলোর ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে চাই।

ভ্রূ তুলে ফেলার ব্যাপারে বক্তব্য হলো, এমনটি করা হারাম এবং কাবীরা গুনাহ্‌। কারণ যারা এমনটি করে, নাবী () তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন।

তবে চেহারা বা মুখের লোম তুলে ফেলার ব্যাপারে বলা যায়, এই লোমগুলো তুলে ফেলা যাবে কিনা তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতবিরোধ আছে। আল-নামাস শব্দটির ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যার দরুন এই ধরনের মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, আল-নামাস বলতে মুখের লোম তুলে ফেলাকে বোঝায়। তারা একে কেবল ভ্রূ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেননি। আবার অন্যান্যদের মতে, আল-নামাস বলতে কেবল ভ্রূ তুলে ফেলাকেই বোঝায়। এই দ্বিতীয় মতটিই স্থায়ী কমিটি কর্তৃক সমর্থিত যা উপরোল্লিখিত ফাতাওয়া থেকে স্পষ্ট।

ফাতাওয়া আল-লাজনাহ্‌ আল-দা’ইমাহ্‌-তে রয়েছে:

আল নামাস বলতে ভ্রূ তুলে ফেলাকে বোঝায় যা করা নিষিদ্ধ। কারণ যে নারী ভ্রূ তুলে ফেলে (আল-নামিসাহ্‌) এবং যে কাউকে দিয়ে তুলিয়ে ফেলায় (আল-মুতানাম্মিসাহ্‌) তাদের নাবী () লা’নাত করেছেন।

ফাতাওয়া আল-লাজনাহ্‌ আল-দা’ইমাহ্‌, ৫/১৯৫

আল্লাহ্‌ রব্বুল ‘আলামীন সমস্ত বিষয়ে সর্বজ্ঞ।

----------------------*******************---------------------

প্রশ্নঃ মেয়েদের মুখে দাড়ি গোফ গজালে করণীয় কি ? (Shaik ahmedullah)


প্রশ্নঃ মেয়েদের মুখে যদি লোম গজায়, সেই লোম সাফ করতে পারবে কিনা? (শায়খ মতিউর রহমান মাদানী)



No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...