Monday, January 20, 2020

ছলাতুল ইশরাকের গুরুত্ব কতটুকু ও ফজিলত এবং এ সংক্রান্ত মাসায়েল

প্রশ্ন: সালাতুল ইশরাকের গুরুত্ব কতটুকু? ফজরের নামাজ পড়ে, মসজিদে না বসে বাড়িতে এসে ইশরাকের নামাজ পড়লে কি হবে বা এতে সওয়াবের কি কোন কমতি হবে?
উত্তর:
সালাতুল ইশরাক বা সালাতুশ শুরুক অর্থ: সূর্যোদয়ের সালাত। এর গুরুত্ব ও মর্যাদার ব্যাপারে হাদিস এসেছে।
নিম্নে হাদিস তুলে ধরে এ প্রসঙ্গে জরুরি কিছু মাসায়েল তুলে ধরা হল:
আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِيْ جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ
“যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের সালাত আদায়ের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকল অতঃপর (সূর্যোদয়ের পর) দুই রাকআত সালাত আদায় করল, তার জন্য একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি পূর্ণ ওমরার নেকী রয়েছে।’ [[তিরমিযী হা/৫৮৬; মিশকাত হা/৯৭১। এ হাদিসটি সহিহ না কি জইফ এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। শাইখ আলবানি সহ কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিস এটিকে হাসান এবং অন্য একদল আলিম এ হাদিসটিকে যঈফ (দুর্বল) বলেছেন]
যাহোক, কেউ যদি পড়তে চায় তাহলে পড়তে পারে। এতে আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে হাদিসে বর্ণিত উক্ত সওয়াব দান করবেন।
➤ কতিপয় লক্ষণীয় বিষয়:
● এখানে ফজর সালাত জামাআতে পড়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এ ফযিলত লাভ করতে হলে মসজিদে গিয়ে ফজর সালাত জামাআতে আদায় করা শর্ত।
● জামাআতে পড়ার পর থেকে নামাযের স্থানে বসে জিকির-আজকার, তাসবীহ-তাহলীল, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআনের তরজমা ও তাফসির পাঠ ইত্যাদি নেকির কাজে লিপ্ত থাকতে হবে। (অবশ্য পেশাব-পায়খানা বা প্রয়োজনে ওযু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর আবার যথাস্থানে ফিরে এসে জিকির-আজকার, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদিতে লিপ্ত হলেও কোন সমস্যা নেই।)
● এক ধনুক পরিমাণ সূর্য উদিত হওয়ার পর (সূর্য ওঠাার প্রায় ১৫/২০ মিনিট পর) উক্ত সালাত আদায় করতে হবে। কেননা, ফজরের সালাতের পর থেকে সূর্য এক ধনুক পরিমাণ উদিত হওয়া পর্যন্ত (সূর্য ওঠার প্রায় ১৫/২০ মিনিট পর্যন্ত) সাধারণ নফল সালাত পড়া নিষিদ্ধ।
সুতরাং কেউ যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরে এসে সূর্য উদিত হওয়ার ১৫/২০ মি: পর দু রাকআত সালাতুল ইশরাক পড়ে তাহলে উক্ত সাওয়াব লাভ করবে না। তবে দু রাকআত ইশরাকের নফল সালাতের সাধারণ সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।
অবশ্য -বিজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন- যদি ফজর সালাতের পরে মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয় (যেমনটি শহরের অনেক মসজিদে করা হয়) বা বিশেষ কোন কারণে মসজিদে থাকা সম্ভব না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে যদি মসজিদ থেকে ফিরে আসে এবং বাড়িতে বসে জিকির-আজকার করা অবস্থায় সূর্য উদিত হওয়ার ১৫/২০ মি: পর উক্ত সালাত পড়ে তাহলেও যথাযথ সওয়াব পাওয়া যাবে আশা করি।

সালাতুল ইশরাকের ফযিলত এবং এ সংক্রান্ত মাসায়েল
▰▰▰▰▰▰▰▰▰▰▰▰▰
প্রশ্ন: সালাতুল ইশরাক এর ফযিলত কি?
আমরা জেনেছি যে, ইশরাক নামাজ সূর্য উদিত হওয়ার ১৫/২০ মিনিট পরে এবং ফজর পরে একই জায়গায় বসে থাকতে হবে। আমার প্রশ্ন হল, কেউ যদি একই জায়গায় বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি বা ঘরের টুকটাক কাজ করে এবং ইশরাকের সময় হলে নামাজটা পরে নেয় তাহলে এতে কি ইশরাকের সওয়াব পাওয়া যাবে?
দয়া করে এ সংক্রান্ত মাসআলাগুলো জানাবেন।
উত্তর:
সালাতুল ইশরাক অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ সালাত। এ মর্মে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ، ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ ، كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ
“যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতে পড়ে, অতঃপর সূর্যোদয় অবধি বসে আল্লাহর জিকির করে তারপর দুই রাকআত নামায পড়ে, সেই ব্যক্তির একটি হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ হয়।”
বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ।” অর্থাৎ কোন অসম্পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব নয় বরং পূর্ণ হজ্জ-উমরার সওয়াব। (তিরমিযী, সুনান, সহিহ তারগিব ৪৬১নং)
উল্লেখ্য যে, এ হাদিসটি অনেক মুহাদ্দিস জঈফ বলেছেন। কিন্তু মুহাদ্দিস আলবানি রহ. এটিকে সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
❑ কতিপয় জরুরি জ্ঞাতব্য বিষয়:
💠 একান্ত জরুরি প্রয়োজনে যদি কাউকে উঠতে হয় (যেমন, টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন) আর প্রয়োজন সেরে পুনরায় এসে সালাতের স্থানে বসে দুআ, জিকির, কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল হয় তারপর সূর্য এক ধনুক পরিমাণ উদিত হওয়ার পর দু রাকআত সালাত আদায় করে তাহলে ইনশাআল্লাহ সওয়াবের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটবে না।
💠 অনুরূপভাবে অসুস্থ জনিত কারণে যদি যদি নামাযের স্থানে বসে থাকা সম্ভব না হয় তাহলেও নিয়তের কারণে পূর্ণ সওয়াব অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। কেননা, হাদিসে এসেছে-
«إذا مرضَ العبدُ أو سافر، كُتب له مثل ما كان يعمل، مقيماً صحيحا».
“বান্দা অসুস্থ হলে বা সফর করলে (তার আমলনামায়) ঐ সওয়াব লেখা হবে সুস্থ ও আবাস অবস্থায় যে সওয়াব লেখা হত।”(সহীহুল জামে, হা/৭৯৯)
💠 তবে কেউ যদি একান্ত অপরিহার্য কাজ ছাড়া ঘর-সংসার, বা অন্য দুনিয়াবি কাজে লিপ্ত হয়ে যায় আর কাজ সেরে এসে দু রাকআত সালাত আদায় করে তাহলে উক্ত হাদিসে বর্ণিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। কিন্তু সাধারণ নফল ইবাদত হিসেবে সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহু আলাম।
-------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...