Wednesday, December 25, 2019

কোন কোন ক্ষেত্রে গীবত বৈধ?

হারাম কাজ- ৩
সৎকার্যের আদেশ করো এবং অসৎকার্য হতে নিষেধ করো। [সূরা লোকমান ৩১:১৭]
বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক করো না। [সূরা নিসা ৪:১০৫]
জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ও উত্তম যুক্তি দ্বারা আল্লাহ্‌ তা’আলার প্রতি আহ্বান করো। [সূরা নাহ্‌ল ১৬:১২৫]
________________________________________________
গ্রন্থঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন হাদিস নম্বরঃ ১৫৩৯
পরিচ্ছেদ ২৫৬ : যে সব কারণে গীবত বৈধ

জেনে রাখুন যে, সঠিক শরয়ী উদ্দেশ্যে গীবত বৈধ; যখন গীবত ছাড়া সে উদ্দেশ্য পূরণ হওয়া সম্ভবপর হয় না। এমন কারণ ৬টিঃ-

১। অত্যাচার ও নির্যাতনঃ নির্যাতিত ও অত্যাচারিত ব্যক্তির পক্ষে বৈধ যে, সে শাসক, বিচারক প্রমুখ [প্রভাবশালী] ব্যক্তি যারা অত্যাচারীকে উচিত সাজা দিয়ে ন্যায় বিচার করার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রাখেন তাঁদের নিকট নালিশ করবে যে, ‘অমুক ব্যক্তি আমার উপর এই অত্যাচার করেছে।’

২। মন্দ কাজের অপসারণ ও পাপীকে সঠিক পথ ধরানোর কাজে সাহায্য কামনা। বস্ত্ততঃ শরীয়ত বহির্ভূত কর্মকাণ্ড বন্ধ করার ব্যাপারে শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিকে গিয়ে বলবে যে, ‘অমুক ব্যক্তি মন্দ কাজে লিপ্ত। সুতরাং আপনি তাকে তা থেকে বাধা দিন’ ইত্যাদি। তবে এর পিছনে কেবল অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে বাধা দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে; অন্যথা তা হারাম হবে।

৩। ফতোয়া জানা। মুফতি [বা আলেমের] নিকট গিয়ে বলবে, ‘আমার পিতা আমার ভাই বা আমার স্বামী অথবা অমুক ব্যক্তি এই অন্যায় অত্যাচার আমার প্রতি করেছে। তার কি কোন অধিকার আছে? [এমন করার অধিকার যদি না থাকে] তবে তা থেকে মুক্তি পাবার এবং অন্যায়ের প্রতিকার করার ও নিজ অধিকার অর্জন করার উপায় কি?’ অনুরূপ আবেদন পেশ করা। এরূপ বলা প্রয়োজনে বৈধ। তবে সতর্কতামূলক ও উত্তম পন্থা হল, নাম না নিয়ে যদি বলে, ‘এক ব্যক্তি, বা লোক বা স্বামী এই করেছে, সে সম্পর্কে আপনি কি বলেন?’ নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নাম না নিয়ে এরূপ বললে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে। এ সত্ত্বেও নির্দিষ্ট করে নাম নিয়ে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা বৈধ। যেমন এ মর্মে পরবর্তীতে হিন্দের হাদিস উল্লেখ করব---ইন শাআল্লাহ তা'আলা।

৪। মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক করা ও তাদের মঙ্গল কামনা করা। এটা অনেক ধরণের হতে পারে। তার মধ্যে যেমনঃ-

[ক] হাদিসের দোষযুক্ত রাবী ও [বিচারকার্যে] সাক্ষীর দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করা। সর্বসম্মতিক্রমে এরূপ করা বৈধ; বরং প্রয়োজন বশতঃ ঐরূপ করা অত্যাবশ্যক।

[খ] কোন ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক জোড়ার জন্য, কোন ব্যবসায়ে অংশীদারি গ্রহণের উদ্দেশ্যে, কারো কাছে আমানত রাখার জন্য, কারো সাথে আদান-প্রদান করার মানসে অথবা কারো প্রতিবেশী হবার জন্য ইত্যাদি উদ্দেশ্যে পরামর্শ চাওয়া। আর সে ক্ষেত্রে যার নিকট পরামর্শ চাওয়া হয়, তার উচিত প্রকৃত অবস্থা খুলে বলা। বরং হিতাকাঙ্ক্ষী মনোভাব নিয়ে যত দোষ-ত্রুটি থাকবে সব ব্যক্ত করে দেবে। অনুরূপভাবে যখন কোন দ্বীনী জ্ঞান পিপাসুকে দেখবে যে, সে কোন বিদআতী ও মহাপাপী লোকের নিকট জ্ঞানার্জন করতে যাচ্ছে এবং আশংকা বোধ করবে যে, ঐ বিদআতী ও ফাসেক [মহাপাপী] দ্বারা সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাহলে সে আবশ্যিকভাবে তাকে তার অবস্থা ব্যক্ত করে তার মঙ্গল সাধন করবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শর্ত হল যে, এর পিছনে তার উদ্দেশ্য যেন হিতাকাঙ্ক্ষী হয়। এ ব্যাপারটি এমন যে, সাধারণত: এতে ভুল হয়ে থাকে। কখনো বা বক্তা হিংসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐ কথা বলে। কিন্তু শয়তান তার ব্যাপারটা গোলমাল করে দেয় এবং তার মাথায় গজিয়ে দেয় যে, সে হিত উদ্দেশ্যেই ঐ কাজ করছে [অথচ বাস্তব তার বিপরীত]। এ জন্য মানুষের সাবধান থাকা উচিত।

[গ] যখন কোন উচ্চপদস্থ সরকারী অফিসার, গভর্নর বা শাসক, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে---হয় তার অযোগ্যতার কারণে কিংবা পাপাচারী বা উদাসীন থাকার কারণে ইত্যাদি---তাহলে উক্ত ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রনেতার নিকট তার স্বরূপ তুলে ধরা একান্ত কর্তব্য। যাতে সে তার স্থানে অন্য উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ করতে পারে কিংবা কমপক্ষে তার সম্পর্কে তার জানা থাকবে এবং সেই অনুযায়ী তার সাথে আচরণ করবে এবং তার প্রতারণা থেকে মুক্ত থাকবে, আর সে তাকে সংশোধন হবার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করবে, তারপর তাকে পরিবর্তন করে দেবে।

৫। প্রকাশ্যভাবে কেউ পাপাচরণ বা বিদআতে লিপ্ত হলে তার কথা বলা। যেমন প্রকাশ্যভাবে মদ্য পান করলে, লোকের ধন অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করলে, বলপূর্বক ট্যাক্স বা চাঁদা আদায় করলে, অন্যায়ভাবে যাকাত ইত্যাদি অসূল করলে, অন্যায় কাজের কর্তৃত্ব করলে, তার কেবল সেই প্রকাশ্য অন্যায়ের কথা উল্লেখ করা বৈধ। [যাতে তার অপ-নোদন সম্ভব হয়] পক্ষান্তরে তার অন্যান্য গোপন দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করা বৈধ নয়। তবে যদি উল্লিখিত কারণসমূহের মধ্যে অন্য কোন কারণ থাকে, যেমন আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, তাহলে তাও ব্যক্ত করা বৈধ হবে।

৬। প্রসিদ্ধ নাম ধরে পরিচয় দেওয়া। সুতরাং যখন কোন মানুষ কোন মন্দ খেতাব দ্বারা সুপরিচিত হয়ে যাবে; যেমন চোখ-ওঠা, খোঁড়া, কালা, অন্ধ, টেরা ইত্যাদি তখন সেই পরিচায়ক খেতাবগুলি উল্লেখ করা সিদ্ধ। তবে অবমাননা বা হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায়ে সে সব উল্লেখ করা নিষিদ্ধ। পক্ষান্তরে উক্ত পদবী ছাড়া অন্য শব্দ বা নাম দ্বারা যদি পরিচয় দান সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই সব চাইতে উত্তম।

এই হল ছয়টি কারণ, যার ভিত্তিতে গীবত করা বৈধ। আর এর অধিকাংশ সর্ববাদিসম্মত। সহীহ হাদিস থেকে এর বিভিন্ন দলীলও প্রসিদ্ধ। যার কিছু নিম্নরূপ:-

১/১৫৩৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও। ও নিজ বংশের অত্যন্ত মন্দ ব্যক্তি।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]

এ হাদিস দ্বারা ইমাম বুখারী [রহঃ] ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ও সন্দিগ্ধ ব্যক্তিদের গীবত করার বৈধতা প্রমাণ করেছেন।

[1] সহীহুল বুখারী ৬০৩২, ৬০৫৪, ৬১৩১, মুসলিম ২৫৯১, তিরমিযী ১৯৯৬, আবূ দাউদ ৪৭৯১, ৪৭৯২, আহমাদ ২৩৫৮৬, ২৩৯৮৪, ২৪২৭৭, ২৪৭২৬, ২৪৮৭৮, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭২ হাদিসের মানঃ সহিহ
________________________________________________

রিয়াযুস স্বা-লিহীন
হাদিস নম্বরঃ ১৫৪১
পরিচ্ছেদ ২৫৬ : যে সব কারণে গীবত বৈধ

৩/১৫৪১। ফাতেমাহ বিন্তে ক্বাইস রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, ‘আবুল জাহাম ও মুয়াবিয়াহ আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছেন। [এ ক্ষেত্রে আমি কি করব?]’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘মুআবিয়াহ তো গরীব মানুষ, তার নিকট মালধনই নেই। আর আবুল জাহম, সে তো নিজ কাঁধ হতে লাঠিই নামায় না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, ‘আবুল জাহাম তো স্ত্রীদেরকে অত্যন্ত মারধর করে।’ আর এই বর্ণনাটি ‘সে তো নিজ কাঁধ হতে লাঠিই নামায় না’--এর ব্যাখ্যা স্বরূপ। কারো মতে তার অর্থ, সে অধিকাংশ সময় সফরে থাকে।

[1] মুসলিম ১৪৮০, তিরমিযী ১১৩৫, ১১৮০, নাসায়ী ৩২২২, ৩২৩৭, ৩২৪৪, ৩২৪৫, ৩৪০৩, ৩৪০৪, ৩৪০৫, ৩৪১৮, ৩৫৪৫ ৩৫৪৯, ৩৫৫১, ৩৫৫২, আবূ দাউদ ২২৮৪, ২২৮৮, আহমাদ ২৬৫৬০, ২৬৭৭৫, ২৬৭৮৭, ২৬৭৯১, ২৬৭৯৩, ২৬৭৯৭, মুওয়াত্তা মালিক ১২৩৪, দারেমী ২১৭৭, ২২৭৪, ২২৭৫ হাদিসের মানঃ সহিহ
________________________________________________

গ্রন্থঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন
হাদিস নম্বরঃ ১৫৪৩
পরিচ্ছেদ ২৫৬ : যে সব কারণে গীবত বৈধ

৫/১৫৪৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সুফয়ানের স্ত্রী হিন্দ্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন যে, ‘আবূ সুফয়ান একজন কৃপণ লোক। আমি তার সম্পদ থেকে [তার অজান্তে] যা কিছু নিই তা ছাড়া সে আমার ও আমার সন্তানকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খরচ দেয় না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমার ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন মোতাবেক খরচ [তার অজান্তে] নিতে পার।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]

[1] সহীহুল বুখারী ২২১১, ২৪৬০, ৫৩৫৯, ৫৩৬৪, ৫৩৭০, ৬৬৪১, ৭১৬১, ৭১৮০, মুসলিম ১৭১৪, নাসায়ী ৫৪২০, আবূ দাউদ ৩৫৩২, ৩৫৩৩, ইবনু মাজাহ ২২৯৩, আহমাদ ২৩৫৯৭, ২৩৭১১, ২৫১৮৫, ২৫৩৬০, দারেমী ২২৫৯ হাদিসের মানঃ সহিহ
________________________________________________
গ্রন্থঃ রিয়াযুস স্বা-লিহীন   হাদিস নম্বরঃ ১৫৪২
পরিচ্ছেদ ২৫৬ : যে সব কারণে গীবত বৈধ

৪/১৫৪২। যায়েদ ইবনে আরক্বাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক সফরে বের হলাম, যাতে লোকেরা সাংঘাতিক কষ্ট পেয়েছিল। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই [মুনাফিকদের সর্দার, স্ব-মতাবলম্বী লোকদেরকে সম্বোধন করে] বলল, ‘তোমরা আল্লাহর রাসূলের সঙ্গীদের জন্য ব্যয় করো না, যতক্ষণ না তারা সরে দাঁড়ায়।’ এবং সে আরও বলল, ‘আমরা মদিনায় ফিরে গেলে সেখান হতে সম্মানী অবশ্যই হীনকে বহিষ্কার করবে।’ [যায়েদ বলেন,] আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তা জানিয়ে দিলাম। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে ডেকে পাঠালেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই [কিন্তু] বারবার শপথ করে বলল যে, সে তা বলেনি। লোকেরা বলল, ‘যায়েদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিথ্যা কথা বলেছে।’ [যায়েদ বলেন,] লোকদের কথা শুনে আমার মনে অত্যন্ত দুঃখ হল। অবশেষে আল্লাহ আমার কথার সত্যতায় সূরা ‘ইযা জা-আকাল মুনাফিক্বূন’ অবতীর্ণ করলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [আল্লাহর নিকট] তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে তাদেরকে ডাকলেন। কিন্তু তারা নিজেদের মাথা ফিরিয়ে নিল। (বুখারী ও মুসলিম) [1]

[1] সহীহুল বুখারী ৪৯০০, মুসলিম ২৭৭২, তিরমিযী ৩৩১২-৩৩১৪, আহমাদ ১৮৭৯৯, ১৮৮০৯, ১৮৮৪৬ হাদিসের মানঃ সহিহ
________________________________________________
ইসলামে বিরুদ্ধে গেলে তার প্রতি প্রতিবাদ করুন!

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...