Saturday, August 3, 2019

জিলহাজ্জ মাসের আইয়ামে তাশরীক বা তাকবীরে তাশরীকের বিধিবিধান কি?

 ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻢ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ

তাকবীরে তাশরীক / ইয়াওমুল আরাফার তাকবীর / ঈদুল আযহার আজহার তাকবীর / কুরাবানির কুরবানীর ঈদের তাকবির / তাকবিরে তাশরীকের বিধান হুকুম মাসয়ালা ইতিহাস ও পটভূমিঃ

আল্লহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
ﻭَ ﺍﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﻓِﯽْۤ ﺍَﯾَّﺎﻡٍ ﻣَّﻌْﺪُﻭْﺩٰﺕٍ অর্থাৎ আর তোমরা আল্লহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে।সূরা বাকারা (১) : ২০৩
(উল্লেখ্য এখানে আইয়ামে তাশরীকের দিনসমুহকে বুঝানো হয়েছে)
একাধিক সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে যে, তারা জিলহাজ্জ মাসের নয় তারিখ আরাফার দিন ফজর থেকে তের তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর পড়তেন। তন্মধ্যে হলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব, আলী ইবনে আবি তালিব,আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. যুহরী, মাকহুল, সুফিয়ান সাওরীসহ প্রমুখ সাহাবা-তাবেয়ীগণ।
তাকবীরে তাশরীকের জন্য বিভিন্ন শব্দ হাদীসে উল্লেখ হয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বজনবিদিত পাঠ হল,

ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ، ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ، ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ .
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৫৬৯৬-৯৯; আল আওসাত, ইবনে মুনযির ৪/৩৪৯; এলাউস সুনান ৮/১৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫৮)

জিল হজ্জ মাসে তাকবীর পাঠের পদ্ধতি:
▬▬▬▬❖ ❖▬▬▬▬
জিল হজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকেই উঁচু
আওয়াজে বেশী বেশী তাকবীর পাঠ করা
সুন্নত। ফরজ নামাযের পর, মসজিদে, বাজারে এবং
রাস্তায় চলার সময় এ তাকবীর বেশী করে পাঠ
করা। মহিলাগণ নিচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করবে।
তবে দলবদ্ধভাবে সমস্বরে তাকবীর পাঠ করা
সুন্নতের পরিপন্থী। কারণ সাহাবীদের থেকে
দলবদ্ধভাবে তাকবীর পাঠ করার কোন প্রমাণ পাওয়া
যায়না। অথচ তারা ছিলেন সৎকাজে আমাদের চেয়ে
অনেক অগ্রগামী। এই তাকবীর দু ধরণের:
(ক) অনির্দিষ্ট তাকবীর: ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﺍﻟﻤﻄﻠﻖ
সময় ও স্থান নির্ধারণ না করে বাড়ী, মসজিদ, রাস্তা ও
বাজারে উঁচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করা। জিল
হজ্জের প্রথম দিন থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত এ
তাকবীর চলতে থাকবে। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন,
ইবনে উমর ও আবু হুরায়রা (রা:) এই দিন গুলোতে
তাকবীর বলতে বলতে বাজারে যেতেন।
তাদেরকে তাকবীর বলতে শুনে লোকেরাও
তাকবীর পাঠ করত।
(খ) নির্দিষ্ট তাকবীর: ﺍﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﺍﻟﻤﻘﻴﺪ অর্থাৎ
নির্দিষ্টভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাকবীর পাঠ
করা:
এই তাকবীর জিল হজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজরের
নামাযের পর থেকে শুরু করে আইয়ামে তাশরীক
তথা জিল হজ্জ মাসের ১৩তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব
পর্যন্ত চলতে থাকবে।
তাকবীরের শব্দ:
ُ ﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛﺒﺮ ﻻ ﺇﻟﻪَ ﺇﻟَّﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪُ ﺃﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ
ﺍﻟﺤَﻤْﺪ
" আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু
ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

,
নয় যিলহজ্ব হতে তের যিলহজ্ব আছর পর্যন্ত মোট তেইশ ওয়াক্ত ফরজ সলাতের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা অধিকাংশ আলিমের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।  জামাতে সলাত পড়া হোক বা একাকি, পুরুষ বা নারী, মুকীম বা মুসাফির সকলের জন্য প্রযোজ্য। তবে কেউ কেউ এটাকে ওয়াজিব বলেছেন। কিন্তু এর স্বপক্ষে শক্ত কোন দলিল নাই। 

, ﻋﻦ ﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻜﺒﺮ ﻣﻦ ﻏﺪﺍﺓ ﻳﻮﻡ ﻋﺮﻓﺔ ﺇﻟﻰ ﺁﺧﺮ ﺃﻳﺎﻡ ﺍﻟﺘﺸﺮﻳﻖ
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ আরাফার দিন তথা ৯ ই জিলহজ্বের ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন পর্যন্ত পর্যন্ত তথা ১৩ ই জিলহজ্ব [আসর সলাত] পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন।
(সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৬০৭১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৬৮১)
,
প্রত্যেক ফরয সলাতের সালামের পর পরই প্রাত্যাহিক সুন্নাহ আমল অনুযায়ী একবার আল্লহু আকবার তিনবার আস্তাগফিরুল্লহ বলার পরে কোনো কথাবার্তা না বলে তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে। তাকবীরে তাশরীক পুরুষের জন্য জোরে পড়া উচিত। আর মহিলাগণ নিম্ন আওয়াজে অর্থাৎ নিজে শুনতে পায় এমন আওয়াজে পড়বে। আশে পাশে নন মাহরাম থাকলে এমন স্বরে পড়তে হবে যে তারা শুনতে না পায়।
,
তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস ও পটভূমিঃ
তাকবীরে তাশরীক কোন ঘটনা থেকে শুরু হয়েছে, তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন৷ তবে প্রচলিতভাবে যতদূর জানা যায় তা হলোঃ বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (রহ.) বলেন, হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করার জন্য মাটিতে শুয়ায়ে তার গলায় ছুড়ি চালাচ্ছিলেন, ঠিক এমনই মূহুর্তে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাইল (আঃ) কে নির্দেশ দিলেন,একটি জান্নাতী দুম্বা নিয়ে দ্রুত হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কাছে পোঁছার জন্য৷ তখন হযরত জিবরাইল (আঃ) খুবদ্রুত আসছিলেন৷ কিন্তু দূর থেকেই দেখতে পেলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন৷ তখন জিবরাইল আঃ আশংকা করলেন যে,তিনি পৌঁছার পূর্বেই বুঝি ইসমাইল আঃ জবাই হয়ে যাবেন৷ তাই তিনি ঘাবড়ে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলেনঃ
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ
হযরত জিবরাইল (আঃ) এর তাকরীর পাঠ শুনে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলে উঠলেনঃ
ﻻﺍﻟﻪ ﺍﻻ الله ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ .
আর হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর তাকবীর শুনে এবং দুম্বা জবাই হতে দেখে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলে উঠলেনঃ
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ
এভাবে তিনজনের যিকিরকে একত্রিত করে হয়েছে তাকবীরে তাশরিক৷
(কুরবানীর ইতিহাস ২২)  (ফাতাওয়া শামি : ২/১৭৮)।

ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ .

⏬ আরো বিস্তারিত জানার জন্য নিম্ন ভিডিও লেকচার ২টি দেখা যেতে পারে। 

➤ তাকবীর কখন দিতে হয় এর কোন সুনিদৃষ্ট নিয়ম আছে কি? 
শায়খ ডাঃ আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া

➤ ঈদুল আযহার তাকবীর | 
ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...