Tuesday, July 16, 2019

ইস্তেগফার বা তওবা করার নিয়ম ও শর্ত & দুয়া সমূহ এবং এর সলাত

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্‌র শপথ, নিশ্চয় আমি দৈনিক সত্তর -এর অধিকবার আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাই এবং তাওবা করি।” [ বুখারী, ফাতহুল বারীসহ, ১১/১০১, নং ৬৩০৭।] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা কর, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্‌র কাছে দৈনিক একশত বার তাওবা করি।” [মুসলিম, ৪/২০৭৬, নং ২৭০২।]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “রব একজন বান্দার সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয় রাতের শেষ প্রান্তে, সুতরাং যদি তুমি যদি সে সময়ে আল্লাহ্‌র যিক্‌রকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে সক্ষম হও, তবে তা-ই হও।” [তিরমিযী নং ৩৫৭৯, নাসায়ী, ১/২৭৯ নং ৫৭২; হাকেম ১/৩০৯। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ৩/১৮৩; জামে‘উল উসূল, আরনাউতের তাহকীকসহ ৪/১৪৪।] 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, “একজন বান্দা তার রবের সবচেয়ে কাছে তখনই থাকে, যখন সে সিজদায় যায়, সুতরাং তোমরা তখন বেশি বেশি করে দোয়া কর।” [মুসলিম, ১/৩৫০; নং ৪৮২।]


তাওবা ইস্তেগফার করার জন্য কি কি দুয়া করতে পারেন?

হাদিসে বর্ণিত তাওবার দোয়া সমূহ:

দোয়া-১:

মূল আরবীঃ ﺃَﺳﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
প্রতি ওয়াক্তের ফরয সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। [মিশকাত-৯৬১]

দোয়া-২:
======
মূল আরবীঃ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। [বুখারী-৬৩০৭]

দোয়া-৩:
======
মূল আরবীঃ ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ‏( ﺃﻧْﺖَ ‏) ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ ‏( ﺍﻟﻐَﻔُﻮْﺭُ )
উচ্চারণঃ রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনয় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফূর’।
অনুবাদঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। [আবূ দাঊদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪, মিশকাত-২৩৫২]

দোয়া-৪:
======
মূল আরবীঃ ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি।
এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবূ দাউদ ২/৮৫, নং ১৫১৭; তিরমিযী ৫/৫৬৯, নং ৩৫৭৭; আল-হাকিম এবং সহীহ বলেছেন, তার সাথে ইমাম যাহাবী ঐকমত্য পোষণ করেছেন, ১/৫১১, আর শাইখুল আলবানীও সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহুত তিরমিযী ৩/১৮২, জামেউল উসূল লি আহাদীসির রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৪/৩৮৯-৩৯০, আরনাঊত এর সম্পাদনাসহ, মিশকাত-২৩৫৩]

দোয়া-৫:
======
মূল আরবীঃ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ'বদুকা ওয়া আনা আ'লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ'উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি'মাতিকা আ'লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা
অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।
এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬]

পবিত্র কুরআনুল কারীমে তওবা করার ব্যপারে তাগিদঃ
==============================
===========
• যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অত্যাচার করে পরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পাবে। [সূরা নিসা ৪/১১০]

• নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে এবং তুমি কখনও তাদের জন্য সাহায্যকারী পাবে না। কিন্তু যারা তওবা করে ও সংশোধন হয় তারা ব্যতীত। [সূরা নিসা ৪/১৪৫-১৪৬]

• যারা ঈমানদান নর-নারীর উপর যুলুম-নির্যাতন করেছে এবং পরে তওবা করেনি, তাদের জন্যে জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা রয়েছে’ (সূরা বুরূজ ৮৫/১০)।
আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
ﻭَﺗُﻮْﺑُﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﺟَﻤِﻴْﻌﺎً ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮْﻥَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮْﻥَ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার। [সূরা নূর ২৪/৩১]


★ উল্লেখ্য যে,  ইস্তেগফারের বিশেষ কোন সলাত নেই। তবে ইচ্ছামত দুই রাকায়াত করে যতখুশি নফল সলাত পরা যাবে। এক্ষেত্রে সলাতের মধ্যে (রুকু, সিজদাহ, বৈঠক) ও বাহিরে বিভিন্ন দুয়া করা যেতে পারে।

★ ইস্তেগফার বা তওবা কবুলের শর্তঃঃ

সাধারণভাবে তওবা কবুলের জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে।
(১) তওবা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত হতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন নিয়তে করলে তওবা হবে না। মানুষকে দেখানোর জন্য বা শোনানোর জন্য বা অন্য কোন স্বার্থ হাসিলের স্বার্থে তওবা করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
فَاعْبُدِ اللَّهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ (الزمر : ২)
সুতরাং আল্লাহর এবাদত কর, তার আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে।[১৬]
তওবা করা যেহেতু একটি এবাদত তাই তা একমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যেই করতে হবে।
(২) যে পাপ বা গুনাহ করা হয়েছে তার জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, আফসোস করতে হবে। কেননা হাদিসে এসেছে :
الندم توبة (صحيح الجامع رقم ৬৮২০)
'অনুতপ্ত হওয়ার নামই তওবা।'[১৭]
তাই যে গুনাহ হয়ে গেছে তার জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত হতে হবে।
(৩) গুনাহ বা পাপকে পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা। যদি পাপ থেকে তওবা করে আবার সে পাপ কাজে লিপ্ত থাকা হয় তবে তা আল্লাহ তাআলার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করার শামিল।
যদি পাপ কাজটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অধিকার (হুকুকুল্লাহ) খর্ব করা সংশ্লিষ্ট হয় তবে সেটা ছেড়ে দিতে হবে। আর যদি পাপ কাজটি মানুষের অধিকার (হকুকুল এবাদ) ক্ষুণ্নকারী হয় তবে তা তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি কোন মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা হয় তবে তা তার মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি কারো সম্মানের হানি করা হয়্তযেমন গিবত বা দোষ-চর্চা করা হল বা গালি দেয়া হল অথবা মিথ্যা অপবাদ দেয়া হল তাহলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বা অন্য কোনভাবে মিটমাট করে দাবি ছাড়িয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন করা এমন পাপ যা আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইলেও তিনি ক্ষমা করবেন না।
(৪) 'ভবিষ্যতে কখনো এ পাপে লিপ্ত হব না'্তএমন দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে। যদি আবার উক্ত পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে আবার তওবা করতে হবে।
(৫) তওবা করতে হবে তওবার সময়ের মাঝে। যদি তওবার সময় পার হয়ে যাওয়ার পর তওবা করা হয় তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

#এখন প্রশ্ন হল তওবার সময় পার হয়ে যায় কখন ?

তওবার সময় পার হয়ে যাওয়ার দুটি অবস্থা আছে। একটি সাধারণ অবস্থা অন্যটি বিশেষ অবস্থা।
(ক) সাধারণ অবস্থা : যখন কিয়ামতের আলামত হিসেবে সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। তখন কোন মানুষের তওবা কবুল করা হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آَيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آَمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا (الأنعام : ১৫৮)
'যে দিন তোমার প্রতিপালকের কোন নিদর্শন আসবে সেদিন তার ঈমান কোন কাজে আসবে না, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনে নাই কিংবা ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করে নাই।'[১৮]
এ আয়াতে 'প্রতিপালকের নিদর্শন'-এর ব্যাখ্যায় রাসূলে কারীম স. যা বলেছেন তা হল সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উদিত হওয়া। অর্থাৎ যখন সূর্য পশ্চিম দিক দিয়ে উদিত হবে তখন কোন কাফেরের ইসলাম কবুল করা হবে না এবং পাপী ব্যক্তির তওবা গ্রহণ করা হবে না।
(খ) বিশেষ অবস্থা : যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়ে যায়। যখন কোন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন তওবা করলে তা আল্লাহ গ্রহণ করেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴿১৭﴾ وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآَنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا ﴿১৮﴾ ( النساء : ১৭-১৮)
'আল্লাহ অবশ্যই সে সব লোকের তওবা কবুল করবেন যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তওবা করে, এরাইতো তারা যাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। তওবা তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে 'আমি এখন তওবা করলাম' এবং তাদের জন্যও নয় যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরাই তো তারা যাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করেছি।'[১৯]
এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় খুব গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করতে হবে তা হল পাপ বা গুনাহ দু প্রকার। এক প্রকার যা আল্লাহর অধিকার সম্পর্কিত। অন্য প্রকার যা মানুষের অধিকার সম্পর্কিত। মানুষের অধিকার ক্ষুণ্নকারী কোন পাপে যদি কেউ লিপ্ত হয় তবে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে যথাযথ পাওনা পরিশোধ করতে হবে বা তার সাথে মিটমাট করে দাবি ছাড়িয়ে নিতে হবে। অন্যথায় তওবা হবে না। যেমন কেউ অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করল। পরে সে খুব কান্নাকাটি করে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করল, এতে কাজ হবে না। যার সম্পদ আত্মসাৎ করা হল তাকে তার সম্পদ ফিরিয়ে দিয়ে তওবা করতে হবে। এমনিভাবে কেউ কাউকে মারপিট করে বা গালি দিয়ে অথবা পরনিন্দা বা গিবত করে কিংবা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তার সম্মান ক্ষুণ্ন করল, তা হলে তাকে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে ও দাবি ছাড়িয়ে নিতে হবে। যদি তাকে পাওয়া না যায় তবে তার জন্য দোয়া করতে হবে। এ বিষয়টির গুরুত্ব দিয়ে ইমাম নবভী রহ. সহ অনেক উলামায়ে কেরাম এ বিষয়টিকে তওবার জন্য স্বতন্ত্র শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন : তওবার শর্ত তিনটি :্তএক. অনুতপ্ত হওয়া, দুই. গুনাহ পরিত্যাগ করা, তিন. ভবিষ্যতে আর করব না বলে দৃঢ় সংকল্প করা। আর যদি গুনাহটি মানুষের অধিকারের সাথে সম্পর্কিত হয় তাহলে উক্ত গুনাহ থেকে তওবা করার শর্ত চারটি। চতুর্থ শর্ত হল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাওনা আদায় করে তার কাছ থেকে দাবি ছাড়িয়ে নেয়া বা অন্য কোন উপায়ে মিটমাট করে নেয়া।

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...