Wednesday, July 17, 2019

সিয়াম রাখার হারাম দিনগুলো & তাশরিকের সিয়াম রাখার বিধান

দুই ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম। দলিল হচ্ছে আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) এর হাদিস; তিনি বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন রোযা রাখতে বারণ করেছেন”।[সহিহ বুখারী (১৯৯২) ও সহিহ মুসলিম (৮২৭)]।
আলেমগণ ইজমা করেছেন যে, ‘এ দুইদিন রোযা রাখা হারাম’।
অনুরূপভাবে তাশরিকের দিনগুলোতে রোযা রাখাও হারাম। তাশরিকের দিনগুলো হচ্ছে- ঈদুল আযহার পরের তিনদিন (১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ্জ)। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তাশরিকের দিনগুলো হচ্ছে- পানাহার ও আল্লাহ্‌কে স্মরণ করার দিন”।[সহিহ মুসলিম (১১৪১)]
উম্মে হানির আযাদকৃত দাস আবু মুর্‌রা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন আমরের সাথে তার পিতা আমর বিন আসের কাছে যান। তিনি তাদের দুইজনের জন্য খাবার পেশ করে বলেন: খাও। সে বলল: আমি রোযা রেখেছি। তখন আমর (রাঃ) বললেন: খাও; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিনগুলোতে আমাদেরকে রোযা না-রাখার নির্দেশ দিতেন এবং রোযা রাখতে নিষেধ করতেন। ইমাম মালেক বলেন: এ দিনগুলো হচ্ছে- তাশরিকের দিন।[সুনানে আবু দাউদ (২৪১৮), আলবানী ‘সহিহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

তবে যে হাজীসাহেব কোরবানীর পশু সংগ্রহ করতে পারেননি তার জন্যে এ দিনগুলোতে রোযা রাখা জায়েয। আয়েশা (রাঃ) ও ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: “যে ব্যক্তি হাদির পশু সংগ্রহ করতে পারে নাই সে ব্যক্তি ছাড়া তাশরিকের দিনগুলোতে অন্য কাউকে রোযা রাখার অবকাশ দেয়া হয়নি”।[সহিহ বুখারী (১৯৯৮)]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “তামাত্তু ও ক্বিরান হজ্জকারী হাদির পশু না পেলে তার জন্য এই তিনদিন রোযা রাখা জায়েয; যাতে করে রোযা রাখার পূর্বে হজ্জের মৌসুম শেষ হয়ে না যায়। এ ছাড়া অন্য কোন রোযা এ দিনগুলোতে রাখা নাজায়েয। এমনকি কোন ব্যক্তির উপর যদি দুই মাসের লাগাতর রোযা রাখা ফরয হয়ে থাকে সে ব্যক্তিও ঈদের দিন এবং ঈদের পর আরও তিনদিন রোযা রাখবে না। এ দিনগুলোর পর পুনরায় লাগাতর রোযা থাকা শুরু করবে”।[ফাতাওয়া রমাদান, পৃষ্ঠা-৭২৭]


৩০ শে শাবান এ দিনটিকে সন্দেহের দিন বলা হয় (যেহেতু এ দিনটি নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়- এটি কি শাবানের শেষ দিন; নাকি রমজানের প্রথম দিন)। এ দিনে রোজা রাখা হারাম। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখবে এবং চাঁদ দেখে রোজা ছাড়বে। আর যদি তোমাদের দৃষ্টি থেকে চাঁদ লুক্কায়িত থাকে তাহলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করবে।”[সহিহ বুখারি (১৯০৯)]
আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি সন্দেহের দিন রোজা রাখবে সে আবুল কাসেম (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপনাম) এর অবাধ্য হল।[হাদিসটি তিরমিযি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানি সহিহ তিরমিযি গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন (৫৫৩)]
ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
এ বাণীটি দিয়ে সন্দেহের দিন রোজা রাখা হারাম হওয়ার পক্ষে দলিল দেয়া হয়। কারণ সাহাবী নিজের মন থেকে এমন বক্তব্য দিতে পারেন না। বরং এটি রাসূলের হাদিসের পর্যায়ভুক্ত।
সন্দেহের দিন রোজারাখার ব্যাপারে স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন:
“হাদিসের দলিলের ভিত্তিতে এই দিন রোজা রাখা হারাম।” [ফাতাওয়াল লাজনা (১০/১১৭)]
শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন সন্দেহের দিন রোজা রাখার ব্যাপারে বিভিন্ন অভিমত উল্লেখ করার পর বলেন: “এ অভিমতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে- এ দিন রোজা রাখা হারাম। কিন্তু খলিফার নিকট যদি এই দিন রোজা রাখা ফরজ সাব্যস্ত হয় এবং তিনি মানুষকে এই দিন রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন তাহলে তার সাথে দ্বিমত করা যাবে না। দ্বিমত না করার অর্থ হচ্ছে- রোজা পালন না-করার বিষয়টি গোপন রাখবে; প্রকাশ করবে না।[আল-শারহুল মুমতি (৬/৩১৮)]

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...