Wednesday, July 10, 2019

কারো হক নষ্ট করা ও বান্দার সাথে সম্পর্কিত গুনাহের বিধিবিধান

কারো হক কখনো নষ্ট করবেন না , কাউকে কষ্ট দিবেন না ! যদি ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে কষ্ট দিয়েও ফেলেন তাহলে তার কাছ থেকে অবশ্যই মাফ চেয়ে নিন কেননা ঐ ব্যক্তি যদি আপনাকে মাফ না করে তাহলে আল্লাহ ও আপনাকে মাফ করবেন না !
বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার আল্লাহ নিজ হাতে রাখেন-নি। যেমন, আমি যদি একজন-কে ধোঁকা দিয়ে ১ টি টাকা –ও নিয়ে নিই, কোন কথা বা গালির সাহায্যে মনে কষ্ট দেই,
তবে একমাত্র সেই লোক (যার হক নষ্ট করলাম); সে বাদে আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না।
কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে যে ভাবেই হোক তাকে তার পাওনা ফিরিয়ে দিতে হবে, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। উল্লেখ্য, তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ জমীন থেকে আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন ইনশা-আল্লাহ।
কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করে থাকলে সেটা বান্দা মাফ না করলে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।
হাদীসে পাই-
# একবার রাসুলূল্লাহ (সাঃ) তাঁর পাশে উপবিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)কে বললেন-"তোমরা কি জানো,গরীব কে ?" সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন-আমাদের মধ্যে তো গরীব তাদেরকে বলা হয়,যাদের কাছে ধন-সম্পদ,টাকা-পয়সা না থাকে। তখন রাসুলূল্লাহ (সাঃ)বললেন-"প্রকৃত পক্ষে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে গরীব সে,যে কিয়ামতের দিন নামায,রোযা,যাকাত, সবকিছু নিয়ে উঠবে,কিন্তু তার এ কর্মগুলো থাকবে যে,সে দুনিয়াতে কারো সাথে মন্দ আচরন করেছে,কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে,কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে,কাউকে আঘাত করেছে,কাউকে খুন করেছে ইত্যাদি,তাই এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার কিছু নেকী একে দিবে,কিছু নেকী ওকে দিবে। এভাবে দিতে দিতে বান্দার হক আদায়ের পূর্বে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়,তাহলে এই হকদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।" (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)
আল্লাহ আরো বলেন-
• যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। (সূরা আহযাব: 58)
অর্থাৎ কোন মানুষকে যেকোন ভাবে কষ্ট দিলে তা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না । ক্ষমা কেবল সেই ব্যক্তিই করতে পারবেন ।
এখন এই বান্দার হক নষ্ট করলে তা হতে ক্ষমা চাওয়ার উপায় ।
১। যার হক নষ্ট করেছি তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে ।
২। এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন; সেই ক্ষেত্রে তার উপযুক্ত উত্তরাধিকার এর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। [এই নজীর মক্কা বিজয়- এর পরে দেখা যায়]
.৩। এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন বা পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার উপযুক্ত কোন উত্তরাধিকার কেও পাওয়া যাচ্ছে না; তখন দেখতে হবে, অপরাধ এর ধরন কি? যদি, অপরাধটি আর্থিক ক্ষতি বিষয়ক হয়; তবে, সমপরিমাণ অর্থ “কোন সওয়াব এর প্রত্তাশা না করে” কোন ভাল কাজে দিয়ে দিতে হবে [যেমন, মসজিদ নির্মাণ]। এবং আল্লাহ-র কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে।
.৪। এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন বা পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার উপযুক্ত কোন উত্তরাধিকার কেও পাওয়া যাচ্ছে না; তখন, যদি, অপরাধটি ঐ লোককে অপমান করার মত কিছু হয়, যেমন ব্যাক্তিগত আক্রমণ (অহংকার, হিংশা, ঘৃণা) এর মত হয়; তখন [“কোন সওয়াব এর প্রত্তাশা না করে”] কাফফরা-স্বরূপ ১০ জন মিসকিনকে এক বেলা খাইয়ে দিয়ে, আল্লাহ-র কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে। [মনে রাখতে হবেঃ আল্লাহ মুখ দেখেন না; মন দেখেন].
৫। উপরের কোন ভাবেই ক্ষমা না চাইলে , তাকে অবশ্যই “কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের সময়” বিচারের মুখোমুখী হতেই হবে।
তাই ভাই ও বোনদের বলবো , কিয়ামতের ময়দানে ধরা খেয়ে চিরস্থায়ী আজাবে গ্রেফতার হতে না চাইলে কাউকে কষ্ট দেবেন না কিংবা কারো হক নষ্ট করবেন না , যদি কারো এমন অপরাধ হয়েও থাকে তাহলে অবশ্যই মাফ চেয়ে নিবেন, মনে রাখবেন মাফ চাইলে কেউ ছোট হয়না বরং আল্লাহর কাছেই বড় হবেন ।
এবং চিরস্থায়ী জান্নাত পাবেন ইংশা-আল্লাহ । 


⏩প্রশ্ন : সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যাঁরা পরের হক ফেরত দিচ্ছেন না, তাঁদের পরকালে কী ধরনের শাস্তি হবে?

উত্তরঃ এটা তাঁদের দুনিয়াতে ফেরত দিতে হবে। তাঁরা হক দুনিয়াতে ফেরত দেবে এবং বাধ্য হয়ে ফেরত দেবে। কারণ, আল্লাহ জালেমকে সুযোগ দেন, কিন্তু জালেমের ব্যাপারে আল্লাহ অমনোযোগী নন। আল্লাহ জালেমের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করেন। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘অবশ্যই অচিরে আমি তাদের পাকড়াও করব, সেটা তারা বুঝতেও পারবে না।
প্রায় সব ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্যে সাব্যস্ত হয়েছে যে, জালেম ব্যক্তি কোনোভাবেই পৃথিবীতে পার পাবে না। সে যতই চেষ্টা করুক না কেন, যতই চালাকি করুক না কেন। কারণ, আল্লাহ তার ব্যাপারে বেখবর নন। হয়তো আজকে তাকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, আগামীকাল তাকে সুযোগ দেওয়া হবে, কিছুদিন তাকে সুযোগ দেওয়া হবে, কিন্তু একদিন না একদিন সে ধরা পড়বেই। আপনি যদি গোটা পৃথিবীর ইতিহাস দেখেন, জালেমদের ইতিহাস দেখেন, তাহলে আপনার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে জালেমদের কাউকে আল্লাহ ছেড়ে দেননি। তাদের পতনের কথা ইতিহাসে লেখা আছে।
দ্বিতীয়ত, জালেমদের ওই আধিকারটুকু কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে আবার বুঝিয়ে দিতে হবে ওই মাজলুমের কাছে, যার হক সে নষ্ট করেছে। তাকে অবশ্যই কেয়ামতের দিন তার হক বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সেদিন টাকা পাবে না, ডলার পাবে না, দিনার আর দেরহাম পাবে না, তখন তার নেক আমল দিয়ে হক বুঝিয়ে দিতে হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে, তখন ওই অত্যাচারিত ব্যক্তির যত গুনাহ আছে, সেই গুনাহ জালেমের মাথায় নিতে হবে। সুতরাং, এটি কঠিন শাস্তির বিষয়। তাদের সর্বশেষ পরিণতি হবে জাহান্নাম।



⏩প্রশ্ন: মহান আল্লাহ বিচারের মাঠে বান্দাদের সব পাপ ক্ষমা করবেন যদি শিরক না থাকে। তাহলে কি তিনি বান্দার সাথে সম্পর্কিত গোনাহও মাফ করবেন?

উত্তর : শিরকের গুনাহ আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দার হক বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট, যা বান্দা ক্ষমা না করলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তার নিজস্ব তওবা এক্ষেত্রে কোন কাজে আসবে না (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : রিয়াযুছ ছালেহীন তওবা অনুচ্ছেদ--এর আলোচনা)
রাসূল (ছাঃ) বলেন, শহীদদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয় তার ঋণ ব্যতীত (মুসলিম হা/১৮৮৬; মিশকাত হা/২৯১২) ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ঋণ বলে এখানে বান্দার সকল প্রকারের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে (নববী, শরহ মুসলিম ১৩/২৯, হা/১৮৮৫-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ) ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, মাযলূমের হক কেবলমাত্র তওবা দ্বারা পূরণ হয় না।... বরং তওবা তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন সে যুলুমের প্রতিদান মাযলূমকে বুঝিয়ে দিবে। যদি সে দুনিয়াতে তা পূরণ না করে, তবে আখেরাতে তাকে তা পূরণ করতে হবে ...(মাজমূ ফাতাওয়া ১৮/১৮৭-১৮৯)
আবু হুরায়রা (রাঃ) তে বর্ণিত একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে ছালাত-ছিয়াম-যাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে। সাথে ঐসব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারু উপরে অপবাদ দিয়েছে, কারু মাল গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ঐসব পাওনাদারকে ব্যক্তির নেকী থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তখন ঐসব লোকদের পাপসমূহ এই ব্যক্তির উপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (মুসলিম হা/২৫৮১; মিশকাত হা/৫১২৭)। 


No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...