Monday, June 17, 2019

বিয়ে আটকে রাখা ও কালো জাদু থেকে মুক্তির উপায়

প্রশ্ন : কোনো মানুষ বা জিন-পরী কি কোনো মানুষের বিয়ে জাদুটোনা করে তালাবদ্ধ করে রাখতে পারে? অর্থাৎ বিয়ে হবে না, এমন অবস্থা করে রাখা যায়? যদি যায়, সে ক্ষেত্রে কী করা উচিত? এ পর্যন্ত ৭০ জায়গা থেকে পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছে, কিন্তু বিয়ে হয়নি। পরে একদিন এক জিন হুজুরের কাছ থেকে জানতে পারলাম, বিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সে জন্য বিয়ে হচ্ছে না। তার কথা শুনে আটবার জাদুটোনা কাটিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। এখন আমার কী করা উচিত? দয়া করে উত্তর দেবেন? পারিবারিক ও মানসিক অশান্তিতে ভুগছি। মানুষ আমাকে নিয়ে উপহাস করে। (NTV)

উত্তর : এটা বাস্তব কথা বলেছেন। এটি আসলেই অশান্তির বিষয়। এখন কথা হচ্ছে, জাদু করতে পারে। জাদুর মাধ্যমে কারো ক্ষতিও করতে পারে। জাদুর মাধ্যমে এ ধরনের কারো ক্ষতি করার কেউ যদি চেষ্টা করে, সেটা করাও সম্ভব; অসম্ভব নয়। জাদুর একটা প্রভাব স্বীকৃত। এটি আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কোরআনের মধ্যে বলেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে মানুষের তাকদিরের পরিবর্তন হয় না। এটি খেয়াল রাখতে হবে, এর মাধ্যমে তার তাকদিরের পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এটি জাদু। এর মাধ্যমে মানুষের কিছু ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে। একমাত্র আল্লাহু রাব্বুল আলামিনের হুকুমেই তা সম্ভব।
পরে আপনি যে কাজটি করেছেন, সেটি হলো কথিত জিন হুজুর আবিষ্কার করে নিয়েছেন। এই জিন হুজুরের কাছে যাওয়ার কারণে শেষে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে ক্ষতি আপনার হয়েছে, তা আপনি নিজেই বলেছেন যে আপনি আটবার জাদু কাটিয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এ ক্ষেত্রে ওই জিন হুজুর জাদুটোনা কাটিয়ে দেননি। তিনি এক ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। এই প্রতারণার কারণে আপনি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এখন আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে, আপনাকে সত্যিকার তওবা করতে হবে যে, এটি অন্যায় কাজ হয়েছে। কারণ এটি কুফরি কাজ। আল্লাহর রাসূল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘সে মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর যা নাজিল হয়েছে, তার সঙ্গে কুফরি করল।’
আর ওই জিন হুজুরকে বিশ্বাস করার কোনো সুযোগই ছিল না। এই ব্যক্তির কোনো কথাই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার কাছে গিয়ে আপনি যে বক্তব্য বিশ্বাস করেছেন, এ বিশ্বাসটুকু কুফরি। এখন আপনাকে প্রথমে তওবা করতে হবে। এর পর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চেয়ে বেশি বেশি করে যেসব সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দাদের দোয়া কবুল করে থাকেন, ওই সময়ে বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। শেষ রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করেন। ইনশাআল্লাহ আপনার যে সমস্যা রয়েছে, তা আল্লাহতায়ালা সমাধান করে দেবেন।
➽ বিয়ে ভাঙ্গার যাদু এবং তার ইসলাম সম্মত চিকিৎসাঃ
আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি যে যাদুর নাম শুনা যায় তা হচ্ছে বিয়ে ভাঙ্গার যাদু। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি শুধুমাত্র মানুষের ধারণা এবং সন্দেহ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষেই অনেকে এরূপ যাদু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যাদুর ইসলাম সম্মত চিকিৎসা না জানার কারণে অনেকেই এ থেকে মুক্তি লাভের জন্য বিভিন্ন প্রকার কুফরি ও শিরকের কাজে লিপ্ত হন। তাই এ বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক।
সাধারণত বিয়ের বিরোধী ও হিংসুক ব্যক্তি খবীস যাদুকরের কাছে গিয়ে আবদার করে যে, অমুকের মেয়েকে এমন যাদু কর যেন সে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। যাদুকর তাকে বলে, এই কাজ সহজ। তুমি শুধু সেই মেয়ের কোন বস্তু যেমনঃ চুল, কাপড় ইত্যাদি এনে দাও। আর তার ও তার মার নাম এনে দাও। যাদুকর এই কাজের জন্যে জ্বিন নির্ধারণ করে। অতঃপর জ্বিন সেই মেয়ে অথবা ছেলের পিছু করতে থাকে এবং তার মধ্যে প্রবেশ করে। জ্বিন ছেলে অথবা মেয়ের মধ্যে প্রবেশ করে তার অন্তরে ঘৃণা জন্মায়। ফলে যে ব্যক্তিই তাকে প্রস্তাব দেয় সে তা প্রত্যাখ্যান করে।
এই যাদুর লক্ষণ সমূহ হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে মাথা ব্যাথা হওয়া যার চিকিৎসা কোন ঔষধে হয় না, মানসিক অশান্তি বিশেষ করে আসরের পর থেকে অর্ধরাত পর্যন্ত, বিয়ের প্রস্তাবকারীকে খুব খারাপ মনে হওয়া, সর্বদা মস্তিষ্কে অশান্তি বিরাজ করা, ঘুমের মধ্যে স্বস্তি না পাওয়া, পেটে সর্বদা ব্যাথা অনুভব করা, পিঠের নিম্নাংশের জোড়ে ব্যাথা অনুভব হওয়া।
যাদুর চিকিৎসা করার পূর্বে করণীয় কাজ হচ্ছে সেই ঘরে ঈমানী পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেমনঃ সর্বপ্রথম সেই ঘরকে সকল প্রকার ছবি থেকে পবিত্র করতে হবে যেন ফেরেশতা প্রবেশ করতে পারে। সেই ঘরকে সকল প্রকার গান-বাজনা থেকে পবিত্র করতে হবে। সেই ঘরের কেউ শরীয়তের বিধান অমান্য করবে না যেমনঃ পুরুষ সোনা পরবে না আর মহিলা বেপর্দা থাকবে না এবং কোন ব্যক্তি ধূমপান করবে না। অসুস্থ ব্যক্তির সাথে তাবিজ, কড়ি বা এ ধরণের কিছু থাকলে তা খুলে জ্বালিয়ে দিবে। পরিবারের সকলকেই বিশুদ্ধ আকীদায় বিশ্বাসী হিসেবে তৈরি করা যেন সবাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উপরই নির্ভর করে। অসুস্থ ব্যক্তিকে তার অবস্থা নির্ণয় ও তার লক্ষণ বুঝার জন্য জিজ্ঞাসা করা হবে। যদি লক্ষণ সমূহ বিদ্যমান থাকে তাহলে চিকিৎসা শুরু করবে। চিকিৎসা আরম্ভ করার পূর্বে নিজে এবং সহযোগী উভয়েই ওযু করে নিবে। অসুস্থ রোগী যদি মহিলা হয়ে থাকে তাহলে পর্দা অবস্থায় না হলে চিকিৎসা করবে না। কোন এমন মহিলার চিকিৎসা করবে না, যে শরীয়ত পরিপন্থী পোশাকে রয়েছে যেমনঃ মুখ খোলা, সুগন্ধি ব্যবহৃত অবস্থায় বা নখ বড় করে কাফের মহিলা সদৃশ রয়েছে। মহিলার চিকিৎসা তার মাহরামের (একান্ত আপনজন) উপস্থিতিতে হতে হবে। মাহরাম ব্যতীত অন্য পুরুষ তার সাথে থাকতে পারবে না। সফলতার জন্যে নিজকে সকল কলুষতা ও অন্যের প্রতি সকল আস্থা থেকে মুক্ত রাখবে। আর একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে ও তার উপরেই আস্থা রাখবে।
বিয়ে ভাঙ্গার যাদুর চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
চিকিৎসক তার হাত যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথায় রাখতে পারে এবং তার কানের কাছে এ সকল দুয়া ও আয়াত সতর্কতার সাথে এবং বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারে। আয়াতগুলো হচ্ছেঃ সূরা ফাতেহা ।। সূরা বাকারার ১-৫ নং আয়াত ।। সূরা বাকারার ১০২ নং আয়াত (এ আয়াতটি বেশি বেশি পড়বে) ।। সূরা বাকারার ১৬৩-১৬৪ নং আয়াত ।। সূরা বাকরার ২৫৫ নং আয়াত ।। সূরা বাকারার ২৮৫ নং আয়াত ।। সূরা আলে ইমরানের ১৮-১৯ নং আয়াত ।। সূরা আ’রাফের ৫৪-৫৬ নং আয়াত ।। সূরা আ’রাফের ১১৭-১২২ নং আয়াত (আয়াতগুলো বেশি বেশি পড়বে, বিশেষ করে وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ অংশটি) ।। সূরা ইউনুসের ৮১-৮২ নং আয়াত (এটিও বেশি বেশি পড়বে, বিশেষ করে إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ অংশটি বেশি বেশি পড়বে) ।। সূরা ত্বাহা এর ৬৯ নং আয়াত ।। সূরা মুমিনুন এর ১১৫-১১৮ নং আয়াত ।। সূরা সাফফাত এর ১-১০ নং আয়াত ।। সূরা আহকাফের ২৯-৩২ নং আয়াত ।। সূরা রহমানের ৩৩-৩৬ নং আয়াত ।। সূরা হাশরের ২১-২৪ নং আয়াত ।। সূরা জ্বিনের ১-৯ নং আয়াত ।। সূরা ইখলাস ।। সূরা ফালাক ।। সূরা নাস।। এছাড়াও অন্যান্য জীন যাদু বিষয়ক কুরআনের আয়াত পাঠ করা যেতে পারে।

কিছু আলিমদের নিম্ন ভিডিও দেখে নিতে পারেনঃ
কুরআনী আমল জিন বা যাদু টোনা থেকে মুক্তিরযাদু কিভাবে নষ্ট করতে হবেঃ
https://www.youtube.com/watch?v=RnnzVd4-E2g

প্রশ্নঃ খারাপ যাদু থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
উত্তর দিচ্ছেন ডা. জাকির নায়েক

যাদু টোনা থেকে বাচার উপায়ঃ
শাইখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ

যাদু টোনা থেকে বাচার উপায় কি?
শাইখ আবদুল্লাহ আল মাহমমুদ

যাদু কিভাবে নষ্ট করতে হবে?
শাইখ মতিউর রহমান মাদানী

No comments:

Post a Comment

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...