ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ
১. প্রথমে জানতে হবে মানুষ জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন কিনা?
আল্লাহু রাব্বুল ‘আলামীন বলেন :
{الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً}
“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। (মূলক : ২)
এর দ্বারা বুঝা গেল মানুষ মৃত্যুও জীবনের মালিক নয় তা কারো নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।
২. জন্ম নিয়ন্ত্রণের নামে কোন পদ্ধতি যায়েয কিনা তা নির্ভর করবে প্রত্যেকের নিয়তের উপর কারণ রসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন :
إنما لاعمال باالنيات
সকল কর্মই নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
(বুখারী প্রথম হাদীস মিশকাত প্রথম হাদীস মুত্তাফাকুন আলাইহে)
এবার দেখার বিষয় হল আপনি কোন নিয়তে জন্মনিন্ত্রণের পদ্ধতিগ্রহণ করবেন।
আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির একটি নিয়ম আছে আর মানুষ সৃষ্টির নিয়ম হল স্বামী স্ত্রী মিলনের মাধ্যমে জন্ম দান করা অতএব এ নিয়মের মধ্যে ব্যতিক্রম করা যাবে না যথা আল্লাহ বলেন-
{وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ}
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশিত সীমালঙ্ঘন করে, সে নিজের উপর যুলুম করে থাকে”। (তালাক : ১)
শয়তান বলে ছিল :
{وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ}
“(শয়তান বললো) আমি আদম সন্তানদের আদেশ দেব, আর তারা আল্লাহর গঠন প্রকৃতিতে পরিবর্তন সাধন করবে।” (নিসা : ১১৯)
আর পস্পরের মিলনের মধ্যেই রয়েছে শান্তি ও ভালবাসা যথা আল্লাহ বলেন-
{وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً}
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গীণীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসাও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (রূম : ২১)
নারীরা হল ক্ষেত স্বরূপ :
{نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ وَقَدِّمُوا}
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ফসলের জমির মত। সুতরাং তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী জমিতে যাও এবং ভবিষ্যতের সংস্থান কর।” (বাকারাহ : ২২৩)
আপনি কি খাদ্যের অভাবে তা গ্রহণ করবেন?
তা করা যাবে না তার কারণ আল্লাহ বলেন :
{قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ قَتَلُوا أَوْلادَهُمْ سَفَهاً بِغَيْرِ عِلْمٍ وَحَرَّمُوا مَا رَزَقَهُمُ اللَّهُ افْتِرَاءً عَلَى اللَّهِ}
যারা অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার দরুণ আল্লাহ প্রদত্ত রিযিককে আল্লাহরই প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে নিজেদের জন্য হারাম করে দিয়েছে এবং সন্তানদের হত্যা করেছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
(আনআম : ১৪০)
অন্যত্র বলেন-
{وَلا تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئاً كَبِيراً}
“তোমরা অভাবের আশঙ্কায় সন্তানকে হত্যা করো না। আমি তাদের ও তোমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকি, তাদের হত্যা করা নিঃসন্দেহে মহাপাপ।” (বানী ইসরাঈল : ৩১)
জোর করে ইচ্ছামত করবেন তাও করা যাবে না
আল্লাহ তা‘আলা বলেন
{وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللَّهُ لا يُحِبُّ الْفَسَادَ}
“আর যখন যে ক্ষমতা হাতে পায় তখন আল্লাহর দুনিয়ার বিপর্যয় সৃষ্টি এবং ফল শস্য ও সন্তান-সন্ততি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে।” (বাকারাহ : ১০৫)
অন্যত্র বলেন :
{وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ}
“এমন কোন জীব নেই যার জীবন ধারনোপযোগী সরঞ্জামাদি আমার কাছে নেই এবং একটি সুনির্দিষ্ট পরিমান ব্যতিত আমি কোন কিছুই প্রেরণ করি না।” (হিজর : ২১)
অন্যত্র বলেন :
{وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا}
“পৃথিবীতে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই যার রিযিকের দাইত্ব আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেননি। (হূদ : ৬)
অন্যত্র বলেন :
{وَكَأَيِّنْ مِنْ دَابَّةٍ لا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اللَّهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ}
“অসংখ্য জীব এমন আছে যারা কোন মওজুদ খাদ্য ভাণ্ডার বয়ে বেড়ায় না, অথচ আল্লাহ-ই এদের রিয্ক দিয়ে থাকেন তিনি তোমাদেরও রিয্কদাতা।” (আনকাবুত : ৬০)
তিনি আরো বলেন :
{إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ}
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলাই রিয্কদাতা, মহাশক্তিশালী ও পরাক্রান্ত।” (যারিয়াহ : ৫৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন :
{لَهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ}
“আসমান ও জমিনের যাবতীয় সম্পদ একমাত্র তারই আয়ত্তাধীন তিনি যাকে ইচ্ছা প্রচুর্য দান করেন এবং যাকে ই্চছা অভাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন।” (শুরা : ১২)
আল্লাহ আরো বলেন :
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ - {وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ
“আমি পৃথিবীতে তোমাদের জন্যও রিয্কের সংস্থান করেছি এবং তাদের জন্যও যাদের রিয্কদাতা তোমারা নও। এমন কোন বস্তু নেই যার ভাণ্ডার আমার হাতে নেই আর ভাণ্ডার থেকে আমি এক পরিকল্পিত হিসাব অনুসারে বিভিন্ন সময় রেযেক নাজিল করে থাকি।” (হিজর : ২০-২১)
অন্যত্র বলেন :
{وَلا تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ}
“দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না আমি তাদের এবং তোমাদের রিয্ক দাতা।
(বানী ইসরাঈল : ৩১)
{فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ}
“সুতরাং আল্লাহর কাছে রিয্ক অনুসন্ধান করো, তারই বন্দেগী করো এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো। (আনকাবুত : ১৭)
যদি জায়গার অভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করবেন তাও করা যাবে না
কারণ আল্লাহ বলেন :
{إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ}
“নিশ্চয়ই আমি যাবতীয় বস্তু পরিমাণ মতো সৃষ্টি করেছি।” (কামার : ৪৯)
অন্যত্র বলেন :
{وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غَافِلِينَ}
“আমি সৃষ্টি সম্পর্কে অমনোযোগী নই।” (মু’মিনূন : ১৭)
দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হল যে, খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান কোন অভাবের জন্য পরিবার পচিকল্পানার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। তবে শারীরিক সুস্থতার জন্য অস্থায়ীভাবে যে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায় তাও ১২০ দিনের পূর্বে কারণ ১২০দিন পর আল্লাহ পাক আত্মা দান করেন আর আত্মা আসার পর সন্তান নষ্ট করার নামই হল সন্তান হত্যা করা।
যেমন বুখারী-মুসলিম হাদীসে রয়েছে :
أربعين يوما نطفة ثم يكون علقة مثل ذلك ثم يكون مضغة مثل ذلك ....ثم ينفخ فيه الروح (يخاري ومسلم)
অর্থাৎ মাতৃগর্ভে প্রথম ৪০ দিন শুক্ররূপে, অতঃপর ৪০ দিন জমাট রক্ত পিণ্ডরূপে। এরপর ৪০ দিন মাংস পিণ্ডরূপে......এরপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেন। (মিশকাত হাদীন- ৭৫)
আর সে দুনিয়ায় এসে কোথায় কখন কি খাবে, কোথায় থাকবে তাও লিখে দেয়া হয় তাও পাবেন উক্ত হাদীসে
كتب الله المقادير قبل أن يخلق السموات والأرض
আর মানুষ সৃষ্টির ৫০,০০০ পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্ব তার ভাগ্য লিখে রাখা হয়েছে দেখুন :
(মিশকাত- ৭২)
অতএব আপনার খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানের জন্য চিন্তা করাটাই মহা পাপের কাজ।
আর এ অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা অনুমতি নবী (সাঃ) থেকে পাওয়া যায়
যথা :
عن أبى سعيد الخدرى رضى الله عنه فاردنا انعذل ثم قفنا نعذل ورسول الله بين اظهرنا قبل أن نسأله عن ذلك قسالناه عن ذلك فقال ما عليكم أن لا تفعلوا ما من نسمة كائنة إلى يوم القيمة إلا وهي كائنة (بخاري صـ ৭৮৪، ومسلم صـ ৪৬৪، أبو داود صـ ২৯৫)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন আমরা আযল করার চিন্তা-ভাবনা করলাম অথচ রসূলুল্লাহ (সাঃ) তো আমাদের সঙ্গেই আছেন, তাকে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করছি না কেন? অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন : যদি তোমরা তা কর, তবে তাতে দোষের কিছু নেই, তবে কিয়ামাত পর্যন্ত যারা সৃষ্টি হওয়ার, তারা সৃষ্টি হবেই- (রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই)।
(বুখারী- আরবী ২য় খণ্ড- ৭৮৪ পৃঃ ১৫ লাইন পরে; মুসলিম- আবরী ৪৬৪ পৃঃ, ১৬ লাইন পরে; আবূ দাউদ- আরবী ২৯৫ পৃঃ, ইসলামিক ফাউ.- হাঃ ২১৬৯)
অন্যত্র নবী (সাঃ) অনুমতি প্রদান করেন :
আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি আযল করার অনুমতি চাইলে নবী (সাঃ) তাকে অনুমতি প্রদান করেন যথা-
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اعذل عنها أن شئت فانه سياتيها ما قدرلها-
একদিন এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)’র নিকট এসে আরয করলেন, আমার একটি দাসী আছে, যার সাথে আমি সহবাসও করি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না। তিনি বললেন : তুমি ইচ্ছা করলে তার সাথে আযল করতে পার, তবে জেনে রেখ! তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত তা হবেই।
(আবূ দাউদ- ই. ফা. বাংলা তৃতীয় খণ্ড- ২১৬৮)
মূল কথা হল শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য যে কোন অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু অন্য কোন নিয়তে কোন স্থায়ী পদ্ধতিগ্রহণ করা যাবে না। বিস্তারিত দেখুন নিুের প্রমাণপুঞ্জিতে :
আল কুরআন, বুখারী আরবী- ২য় খণ্ড- ৭৮৪ পৃঃ ১৫ লাইন পরে; মুসলিম- ১ম ৪৬৪ পৃঃ ১৬ লাইন পরে। আবূ দাউদ- ২৯৫ পৃঃ ৩ লাইন পরে।
বিঃ দ্রঃ কুরআন ও সহীহ হাদীস থাকতে কারো কোন মনগড়া ফাতওয়া মানা কোন প্রকার ঠিক হবে না দেখুন- সূরা নাহল : ৪৩ ও ৪৪ আয়াত।
আল্লাহু রাব্বুল ‘আলামীন বলেন :
{الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلاً}
“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। (মূলক : ২)
এর দ্বারা বুঝা গেল মানুষ মৃত্যুও জীবনের মালিক নয় তা কারো নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।
২. জন্ম নিয়ন্ত্রণের নামে কোন পদ্ধতি যায়েয কিনা তা নির্ভর করবে প্রত্যেকের নিয়তের উপর কারণ রসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন :
إنما لاعمال باالنيات
সকল কর্মই নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
(বুখারী প্রথম হাদীস মিশকাত প্রথম হাদীস মুত্তাফাকুন আলাইহে)
এবার দেখার বিষয় হল আপনি কোন নিয়তে জন্মনিন্ত্রণের পদ্ধতিগ্রহণ করবেন।
আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির একটি নিয়ম আছে আর মানুষ সৃষ্টির নিয়ম হল স্বামী স্ত্রী মিলনের মাধ্যমে জন্ম দান করা অতএব এ নিয়মের মধ্যে ব্যতিক্রম করা যাবে না যথা আল্লাহ বলেন-
{وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ}
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশিত সীমালঙ্ঘন করে, সে নিজের উপর যুলুম করে থাকে”। (তালাক : ১)
শয়তান বলে ছিল :
{وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ}
“(শয়তান বললো) আমি আদম সন্তানদের আদেশ দেব, আর তারা আল্লাহর গঠন প্রকৃতিতে পরিবর্তন সাধন করবে।” (নিসা : ১১৯)
আর পস্পরের মিলনের মধ্যেই রয়েছে শান্তি ও ভালবাসা যথা আল্লাহ বলেন-
{وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً}
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গীণীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসাও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (রূম : ২১)
নারীরা হল ক্ষেত স্বরূপ :
{نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّى شِئْتُمْ وَقَدِّمُوا}
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ফসলের জমির মত। সুতরাং তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী জমিতে যাও এবং ভবিষ্যতের সংস্থান কর।” (বাকারাহ : ২২৩)
আপনি কি খাদ্যের অভাবে তা গ্রহণ করবেন?
তা করা যাবে না তার কারণ আল্লাহ বলেন :
{قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ قَتَلُوا أَوْلادَهُمْ سَفَهاً بِغَيْرِ عِلْمٍ وَحَرَّمُوا مَا رَزَقَهُمُ اللَّهُ افْتِرَاءً عَلَى اللَّهِ}
যারা অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার দরুণ আল্লাহ প্রদত্ত রিযিককে আল্লাহরই প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে নিজেদের জন্য হারাম করে দিয়েছে এবং সন্তানদের হত্যা করেছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
(আনআম : ১৪০)
অন্যত্র বলেন-
{وَلا تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئاً كَبِيراً}
“তোমরা অভাবের আশঙ্কায় সন্তানকে হত্যা করো না। আমি তাদের ও তোমাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকি, তাদের হত্যা করা নিঃসন্দেহে মহাপাপ।” (বানী ইসরাঈল : ৩১)
জোর করে ইচ্ছামত করবেন তাও করা যাবে না
আল্লাহ তা‘আলা বলেন
{وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللَّهُ لا يُحِبُّ الْفَسَادَ}
“আর যখন যে ক্ষমতা হাতে পায় তখন আল্লাহর দুনিয়ার বিপর্যয় সৃষ্টি এবং ফল শস্য ও সন্তান-সন্ততি ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে।” (বাকারাহ : ১০৫)
অন্যত্র বলেন :
{وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ}
“এমন কোন জীব নেই যার জীবন ধারনোপযোগী সরঞ্জামাদি আমার কাছে নেই এবং একটি সুনির্দিষ্ট পরিমান ব্যতিত আমি কোন কিছুই প্রেরণ করি না।” (হিজর : ২১)
অন্যত্র বলেন :
{وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا}
“পৃথিবীতে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই যার রিযিকের দাইত্ব আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেননি। (হূদ : ৬)
অন্যত্র বলেন :
{وَكَأَيِّنْ مِنْ دَابَّةٍ لا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اللَّهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ}
“অসংখ্য জীব এমন আছে যারা কোন মওজুদ খাদ্য ভাণ্ডার বয়ে বেড়ায় না, অথচ আল্লাহ-ই এদের রিয্ক দিয়ে থাকেন তিনি তোমাদেরও রিয্কদাতা।” (আনকাবুত : ৬০)
তিনি আরো বলেন :
{إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ}
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলাই রিয্কদাতা, মহাশক্তিশালী ও পরাক্রান্ত।” (যারিয়াহ : ৫৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন :
{لَهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ}
“আসমান ও জমিনের যাবতীয় সম্পদ একমাত্র তারই আয়ত্তাধীন তিনি যাকে ইচ্ছা প্রচুর্য দান করেন এবং যাকে ই্চছা অভাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন।” (শুরা : ১২)
আল্লাহ আরো বলেন :
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَنْ لَسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ - {وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ
“আমি পৃথিবীতে তোমাদের জন্যও রিয্কের সংস্থান করেছি এবং তাদের জন্যও যাদের রিয্কদাতা তোমারা নও। এমন কোন বস্তু নেই যার ভাণ্ডার আমার হাতে নেই আর ভাণ্ডার থেকে আমি এক পরিকল্পিত হিসাব অনুসারে বিভিন্ন সময় রেযেক নাজিল করে থাকি।” (হিজর : ২০-২১)
অন্যত্র বলেন :
{وَلا تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ}
“দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না আমি তাদের এবং তোমাদের রিয্ক দাতা।
(বানী ইসরাঈল : ৩১)
{فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ}
“সুতরাং আল্লাহর কাছে রিয্ক অনুসন্ধান করো, তারই বন্দেগী করো এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো। (আনকাবুত : ১৭)
যদি জায়গার অভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করবেন তাও করা যাবে না
কারণ আল্লাহ বলেন :
{إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ}
“নিশ্চয়ই আমি যাবতীয় বস্তু পরিমাণ মতো সৃষ্টি করেছি।” (কামার : ৪৯)
অন্যত্র বলেন :
{وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غَافِلِينَ}
“আমি সৃষ্টি সম্পর্কে অমনোযোগী নই।” (মু’মিনূন : ১৭)
দীর্ঘ আলোচনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হল যে, খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান কোন অভাবের জন্য পরিবার পচিকল্পানার কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। তবে শারীরিক সুস্থতার জন্য অস্থায়ীভাবে যে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায় তাও ১২০ দিনের পূর্বে কারণ ১২০দিন পর আল্লাহ পাক আত্মা দান করেন আর আত্মা আসার পর সন্তান নষ্ট করার নামই হল সন্তান হত্যা করা।
যেমন বুখারী-মুসলিম হাদীসে রয়েছে :
أربعين يوما نطفة ثم يكون علقة مثل ذلك ثم يكون مضغة مثل ذلك ....ثم ينفخ فيه الروح (يخاري ومسلم)
অর্থাৎ মাতৃগর্ভে প্রথম ৪০ দিন শুক্ররূপে, অতঃপর ৪০ দিন জমাট রক্ত পিণ্ডরূপে। এরপর ৪০ দিন মাংস পিণ্ডরূপে......এরপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেন। (মিশকাত হাদীন- ৭৫)
আর সে দুনিয়ায় এসে কোথায় কখন কি খাবে, কোথায় থাকবে তাও লিখে দেয়া হয় তাও পাবেন উক্ত হাদীসে
كتب الله المقادير قبل أن يخلق السموات والأرض
আর মানুষ সৃষ্টির ৫০,০০০ পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্ব তার ভাগ্য লিখে রাখা হয়েছে দেখুন :
(মিশকাত- ৭২)
অতএব আপনার খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানের জন্য চিন্তা করাটাই মহা পাপের কাজ।
আর এ অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা অনুমতি নবী (সাঃ) থেকে পাওয়া যায়
যথা :
عن أبى سعيد الخدرى رضى الله عنه فاردنا انعذل ثم قفنا نعذل ورسول الله بين اظهرنا قبل أن نسأله عن ذلك قسالناه عن ذلك فقال ما عليكم أن لا تفعلوا ما من نسمة كائنة إلى يوم القيمة إلا وهي كائنة (بخاري صـ ৭৮৪، ومسلم صـ ৪৬৪، أبو داود صـ ২৯৫)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন আমরা আযল করার চিন্তা-ভাবনা করলাম অথচ রসূলুল্লাহ (সাঃ) তো আমাদের সঙ্গেই আছেন, তাকে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করছি না কেন? অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন : যদি তোমরা তা কর, তবে তাতে দোষের কিছু নেই, তবে কিয়ামাত পর্যন্ত যারা সৃষ্টি হওয়ার, তারা সৃষ্টি হবেই- (রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই)।
(বুখারী- আরবী ২য় খণ্ড- ৭৮৪ পৃঃ ১৫ লাইন পরে; মুসলিম- আবরী ৪৬৪ পৃঃ, ১৬ লাইন পরে; আবূ দাউদ- আরবী ২৯৫ পৃঃ, ইসলামিক ফাউ.- হাঃ ২১৬৯)
অন্যত্র নবী (সাঃ) অনুমতি প্রদান করেন :
আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি আযল করার অনুমতি চাইলে নবী (সাঃ) তাকে অনুমতি প্রদান করেন যথা-
فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اعذل عنها أن شئت فانه سياتيها ما قدرلها-
একদিন এক ব্যক্তি নবী (সাঃ)’র নিকট এসে আরয করলেন, আমার একটি দাসী আছে, যার সাথে আমি সহবাসও করি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না। তিনি বললেন : তুমি ইচ্ছা করলে তার সাথে আযল করতে পার, তবে জেনে রেখ! তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত তা হবেই।
(আবূ দাউদ- ই. ফা. বাংলা তৃতীয় খণ্ড- ২১৬৮)
মূল কথা হল শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য যে কোন অস্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু অন্য কোন নিয়তে কোন স্থায়ী পদ্ধতিগ্রহণ করা যাবে না। বিস্তারিত দেখুন নিুের প্রমাণপুঞ্জিতে :
আল কুরআন, বুখারী আরবী- ২য় খণ্ড- ৭৮৪ পৃঃ ১৫ লাইন পরে; মুসলিম- ১ম ৪৬৪ পৃঃ ১৬ লাইন পরে। আবূ দাউদ- ২৯৫ পৃঃ ৩ লাইন পরে।
বিঃ দ্রঃ কুরআন ও সহীহ হাদীস থাকতে কারো কোন মনগড়া ফাতওয়া মানা কোন প্রকার ঠিক হবে না দেখুন- সূরা নাহল : ৪৩ ও ৪৪ আয়াত।
No comments:
Post a Comment