Monday, May 22, 2023

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ 

১। 

মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে -

দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস প্রতিটি ৩বার করে পড়ে ডান কানে হালকা করে ফুঁ দিয়ে অতঃপর সমস্ত শরীরে ফুঁ দিয়ে দিতে হবে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায়। 

আর ঘুমাতে যাওয়ার সময় এগুলো পড়েই নিজ দুই হাতের তালু একত্র করে ফুঁ দিয়ে বাচ্চার শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত হাত দিয়ে মুছে/মাসেহ করে দিতে হবে এবং নিজের উপরেও প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ডান হাত দিয়ে প্রথমে মাথা থেকে সামনের দিকে পা পর্যন্ত আবার মাথা থেকে পেছনের দিকে পা পর্যন্ত। অতঃপর দুই হাত দিয়ে মাথা থেকে দুই পার্শ্ব একই সাথে কিংবা আলাদা ভাবে মুছে দিতে হবে। 

২। 

এই দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ৩ বার করে পড়ে ফুঁ দিয়ে দিতে হবেঃ 

রছুল ছঃ হাসান ও হুসাইন রঃ -এর জন্য এই বলে (আল্লাহ্‌র) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন-

أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ

অর্থঃ আমি তোমাদের দু’জনকে আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি যাবতীয় শয়তান ও বিষধর জন্তু থেকে এবং যাবতীয় ক্ষতিকর চক্ষু (বদনযর) থেকে।

উচ্চারণঃ উ‘ইযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তাম্মাতি মিং কুল্লি শাইত্ব-নিওঁয়া হা-ম্মাহ্‌, ওয়ামিং কুল্লি য়া'ইনিল্লা-ম্মাহ্‌ 

(বুখারী ৪/১১৯, নং ৩৩৭১; ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীস থেকে) 


৩। 

এই দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ১ বার পড়ে ফুঁ দিয়ে দিতে হবেঃ 

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রব্বান্নাসি আযহিবিল বা’স,   ইশফিহি ওয়া আংতাশ শা-ফী-,   লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উক,   শিফা-আন লা-ইউ গ-দিরু সাক্বমা-


৪। 

উত্তমরূপে পানি পড়া তৈরি করে নিতে হবে যা প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ বেলা খাওয়াতে হবে এবং চোখে মুখে ছিটা দিয়ে দিতে হবে। 

গোসলের সময় মগের পানির সাথে পড়া পানি বিসমিল্লাহ বলে একটু মিশিয়ে নিয়ে পানি মাথায় ঢেলে দিতে হবে। 

পানি পড়া তৈরির পদ্ধতিঃ 

ক) অজুসহ পাকপবিত্র অবস্থায় মানুষ ও জ্বীনের বদনজর এবং জ্বীনের আছর ও শয়তানের কুপ্রভাব থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়ত মনে মনে করে নিতে হবে।

খ) প্রথমে আউজুবিল্লা বলে শুরু করে দুরুদে ইব্রাহিম (৩বার) এরপর বিসমিল্লাহ সহকারে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস প্রতিটি ৭বার করে ধীরস্থীর সহিহ উচ্চারণে পড়ে হাত স্পর্শ ব্যতিত পরিস্কার পানিতে ফুঁ দিতে হবে। ফুঁ দেয়ার ক্ষেত্রে একেকবার পড়ার পরেই একবার ফুঁ দিতে হবে। অর্থাৎ দুরুদ একবার পড়া হলে একবার ফুঁ পুনরায় পড়ে আবার ফুঁ এভাবে ফুঁ দিতে হবে। 

গ) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ১ বার পড়ে ফুঁ দিতে হবে।  

ঘ) একবার তৈরী করা পানি কয়েকদিন ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে পড়া পানির পাত্র নিচে না রেখে উঁচুতে রাখতে হবে। 



বিধিনিষেধঃ 

১। মাগরিবের ১০-১৫ মিনিট পূর্ব থেকে পরের ১০-১৫ পর্যন্ত বাচ্চাদের নিয়ে বের হওয়া যাবে না। 

২। বাচ্চাদের রুমে (পুরো বাসাতেই রাখা ঠিক না) কোন প্রকাশমাণ প্রাণীর ছবি ও পুতুল রাখা যাবে না।

৩। মাগরিবের ২০মিনিট পুর্বে দরজা ও জানালা বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করে দিতে হবে এবং মাগরিবের ১৫-২০ মিনিট পর খুলে দেয়া যাবে যদি প্রয়োজন হয়। খোলার সময় বিসমিল্লাহ বলে খুলতে হবে। 

৪। রাতের বেলা অযথা বাচ্চাকে বাহিরে নেয়া যাবেনা। 

৫। বাচ্চাকে জাগ্রত অবস্থায় বিশেষ করে রাতে বেলা একাকি রাখা যাবে না। 

৬। ছলাত আদায়ের সময় বাচ্চাকে সাথে নিয়ে ছলাত শুরু করা উচিত এরপরে সে যা করে করুক। 

রুকইয়াহ এবং দোয়া

কেউ যাদু আক্রান্ত হলে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দোয়া করা।

আমরা জানি জাদুর জিনিসগুলো যদি পাওয়া যায় আর সেগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়, তাহলে মানুষ খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। তাই তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত যেন আল্লাহ জানিয়ে দেন, যাদুর জিনিশগুলো কোথায় পাওয়া যাবে, কিভাবে পাওয়া যাবে, কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

এটা কিন্তু রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ।

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে যে ঘটনাটি বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন যাদু করা হয়েছিল, উনি কয়েকদিন খুব বেশি বেশি দোয়া করেছেন, এরপর একদিন হঠাৎ বললেন “আয়েশা তুমি কি বুঝতে পেরেছ যে ব্যাপারে আমি দোয়া করছিলাম আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন?

ওই সময়েই রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুকইয়ার জন্য সুরা ফালাক সুরা নাস নাযিল হয়। রাসুলুল্লাহকে জানিয়ে দেয়া হয়, আপনাকে এভাবে যাদু করা হয়েছে, অমুক যায়গায় আছে যাদুর জিনিস। ইত্যাদি… (বুখারি ৫৪৩০, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, মুসনাদে আহমাদ)

তো এখানে মুল যে বিষয়ে আমি ফোকাস করতে চাচ্ছি, তা হচ্ছে দোয়া করা। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই রুকইয়াহ অসম্পূর্ণ যেখানে দোয়া নেই। তাই আমাদের অবশ্যই দোয়া করা উচিত।

১. বেলাল রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের সম্পদ হিফাজত কর যাকাত প্রদানের মাধ্যমে, তোমাদের রোগের চিকিৎসা কর সাদকার মাধ্যমে, আর তোমাদের বিপদ দূর কর দু’আর মাধ্যমে। (মুজামুল আওসাত ২০০৬, বায়হাক্বি ৩২৭৪)

২. জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, রাতে এমন একটি সময় রয়েছে যে, কোন মুসলমান ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখিরাতের কোন কল্যাণের প্রার্থনা করা অবস্থায় যদি সময়টি পেয়ে যায়, তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। আর এই সময় আছে প্রতিটি রাতেই। (মুসলিম ৭৫৭)

৩. আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের বরকতময় ও মহান প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকার সময় পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আছে আমাকে ডাকবে, তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে আমার কাছে চাইবে, তবে আমি তাকে দিয়ে দিব। কে আছে আমার কাছে ইস্তিগফার করবে, তবে আমি তাকে মাফ করে দেব। (বুখারি ৫৯৬২, তিরমিযি)

সংগৃহীত 

বাচ্চাদের রুকইয়াহ করতে লক্ষণীয় বিষয়সমূহ

 বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহ করা বড়দের রুকইয়াহ করার চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ, আবার ফলাফল পাওয়া যায়ও তাড়াতাড়ি। বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি-


১) বাচ্চার মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিতভাবে পাওয়া না যায়ঃ


যদি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া না যায় যেমন- “এমন কোন শারীরিক সমস্যা যেটা “দেখে মনে হয়” মেডিক্যালে এর কোন “ব্যাখা নেই” অথবা “মনে হচ্ছে” যে নজর লেগেছে অথবা বাচ্চারা তাদের স্বাভাবিক আচরণ করছে না” এক্ষেত্রে আমরা বাচ্চাদের জন্য “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” বা দীর্ঘ মেয়াদি কোন রুকইয়ার পরামর্শ দিবো না। বরঞ্চ এই পর্যায়ে আমরা “বদনজরের সাধারণ রুকইয়া” অথবা “৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম” করার পরামর্শ দিবো। বাচ্চার বয়স যদি এক বছরের নিচে হয় তাহলে ডিটক্স প্রোগ্রাম থেকে মধু বাদ দিবেন। ছোট বাচ্চা এক কাপ বা আধা গ্লাস পানি না খেতে পারলে সেটারও অর্ধেক খাওয়ান। আর তিলাওয়াত বাবা অথবা মা করে দিতে পারেন। ৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম সাধারণত সব বয়সের মানুষের জন্যই উপযোগী।


২) বাচ্চার মধ্যে নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু জ্বিনও হাজির হচ্ছে না এবং বাচ্চার খুব বেশি ইফেক্টও হচ্ছে নাঃ


যদি আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া যায় কিন্তু বাচ্চা শক্ত কোন প্রতিক্রিয়াও না দেখায় আবার জ্বিন দ্বারা আসর নাও হয় তাহলে সেটা হতে পারে উপরে উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি নেওয়ার কারণে (৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম)। এক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিবো সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম করার জন্য। কিন্তু রুকইয়াহ করতে হবে আরমাদায়ক ভাবে। অর্থাৎ বাচ্চাকে জোর করে মূর্তির মত এক জায়গায় বসিয়ে রাখা যাবে না, বাচ্চা ভয় পায় এমন কিছু করা যাবে না। আর এসব ক্ষেত্রে সাধারণত হিজামাও করার দরকার পরে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এত টুকুতেই বাচ্চা ভাল হয়ে যায়। এতে বাচ্চার কোন অসুবিধাও হয় না আবার জ্বিনের আসরের মত কিছুও ঘটে না।


৩) যদি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে, যেমন বাচ্চা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে বা চিৎকার চেঁচামেচি করে, বাচ্চার ওপর জ্বিন হাজির হয়ে যায় বা আসর করে বসে তাহলে এক্ষেত্রে প্রতিদিন সরাসরি রুকইয়ার পাশাপাশি আমরা সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম অনুসরণ করার পরামর্শ দিবো। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে প্রয়োজনে হিজামাহ করানো যেতে পারে। আর একটু খেয়াল রেখে (সতর্কভাবে) রুকইয়াহ করতে হবে। যেমন বাচ্চাকে কাছে বসিয়ে রাখতে হবে, রুকইয়াহ এর আয়াতগুলোতে বেশি বেশি জোর দিতে হবে।


বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ


ক) বাচ্চার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। যেহেতু বাচ্চার আচরণ ও মানসিকতা পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত নয়, তাই বাচ্চার সাথে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত আচরণ করা যাবে না। রুকইয়াহ করার সময় বাচ্চা যেন পরিপূর্ণ আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রুকইয়াহ করার সময় একটু পর পরে চেক করতে হবে, বাচ্চারা রিল্যাক্সড ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে কিনা। তাদের সাথে হালকা খেলাধূলাও করতে পারেন, তাদেরকে বলতে পারেন “আমার সাথে সাথে পড়।” যদি আপনি বাচ্চার অপরিচিত কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে রুকইয়াহ করার আগে ও পরে তার সাথে কিছু সময় কাটান। যেন সে আপনাকে সহজ ভাবে নিতে পারে।


খ) কখনোই, কখনোই বাচ্চাকে প্রহার বা আঘাত করবেন না। সত্যিকার অর্থে রুগী যেই হোক না কেন, বাচ্চা অথবা পূর্ণবয়স্ক, তাকে প্রহার করা সাধারণত ভালো রেজাল্ট দেয় না। বরং এর কারণে অনেক সময় জ্বিন আরো দীর্ঘ সময় শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে। আর বাচ্চার গায়ে আঘাত করা হলে, বাচ্চা সিরিয়াস ইনজুরিতে পড়ে যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রে রুকইয়াহ চলাকালীন সময়ে “জ্বিনকে” প্রহার করার কারণে বাচ্চা মারাও যায়। তাই প্রহার করা এক্ষেত্রে জ্বিনকে সাহায্য করারই নামান্তর।


যদি বুঝতে পারেন জ্বিন শরীরের এখানে সেখানে ছুটোছুটি করছে, তাহলে মৃদুভাবে সেই জায়গায় মালিশ করবেন। ফলে বাচ্চাও আরাম বোধ করবে আর জ্বিনও প্রেশারে থাকবে।


গ) বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে, বাচ্চারা বড়দের মত তাদের অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারে না। স্বভাবগত ভাবেই বাচ্চারা একটু ছুটোছুটি বা দৌড়াদৌড়ি পছন্দ করে। এটাকে জ্বিনের লক্ষণের সাথে গুলিয়ে ফেললে হবে না। সময় নিয়ে বাচ্চার আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে; বিশেষ করে রুকইয়াহ করার সময় ও রুকইয়াহ করার আগে বা পরের সময়ের আচরণে পার্থক্য ভালো করে খেয়াল করতে হবে। তাহলে আপনি বাচ্চার স্বাভাবিক আচরণ আর অস্বাভাবিক আচরণের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারবেন।


ঘ) যদি বাচ্চা বয়সে একটু বড় হয়, নিজের কথা বুঝিয়ে বলতে পারে; তাহলে বাচ্চার সাথে তার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তার মন থেকে শয়ত্বান জ্বিনের ভয় দূর করতে হবে। বাচ্চাদের মনে বড়দের তুলনায় শয়ত্বান জ্বিনের ভয় বেশি প্রভাব ফেলে। এমন যেন না হয়, জ্বিনের ভয়ে বাচ্চা ঘুমাতেই পারছে না। বাচ্চার কাছে শয়ত্বান জ্বিনের দূর্বলতাগুলো তুলে ধরবেন। তাদেরকে বুঝান শয়ত্বান জ্বিন কিভাবে কুর’আনের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। বাচ্চাদেরকে শয়ত্বান জ্বিন থেকে সুরক্ষার জন্য মাসনূন দু’আ গুলো শিখিয়ে দিন।


ঙ) যদি জ্বিন হাজির হয়েই যায় এবং কথাও বলা শুরু করে, তাহলে জ্বিনের সাথে অপ্রয়োজনীয় ও বেশি কথা বার্তা বলবেন না। জ্বিনকে “ইসলাম গ্রহণ করে বাচ্চার শরীর থেকে বের” হয়ে যেতে বলবেন। আর যদি “ইসলাম” গ্রহণ করতে না চায়, তাহলে বলবেন যেন “চলে যায় এবং আর ফিরে না আসে।” জ্বিনের কোন গাল-গল্পই বিশ্বাস করবেন না, তাদের সাথে কোন বোঝাপড়াতেও যাবেন না।


চ) রুকইয়াহ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় ধরাবাঁধা নেই। কিন্তু আপনি যদি দেখেন কোন নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চার মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকট হয় (যেমনঃ মাগরিবের পর), তাহলে সে সময়ে রুকইয়াহ করাটাই সবচেয়ে ভালো। অন্যথায় যে সময় বাচ্চা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সে সময়ই রুকইয়াহ করবেন।


ছ) অবস্থা বুঝে রুকইয়াহ করার পদ্ধতি ও সময় পরিবর্তন করতে পারেন। তবে খুব দ্রুত রুকইয়াহর পদ্ধতি পরিবর্তন করবেন না, কারণ এতে জ্বিন শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলা করার বা ম্যানুপুলেট করার সুযোগ পাবে।


আল্লাহই ভালো জানেন।

Collected from Ruqyah Support BD

বাচ্চাদের জন্য সহজ রুকইয়াহ ও নিরাপত্তার প্রেসক্রিপশন

 ১. মাগরিবের ১০-১৫ মিনিট পূর্ব থেকে পরের ১০-১৫ পর্যন্ত বাচ্চাদের নিয়ে বের হবেন না। (updated)

২. বাচ্চাদের রুমে(পুরো বাসাতেই রাখা ঠিক না) কোন প্রকাশমাণ প্রাণীর ছবি ও পুতুল রাখবেন না।

৩. ফজর ও মাগরিবের পর আয়াতুল কুরসি-১ বার, ইখলাস, ফালাক ও নাস ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিবেন।

৪. রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস ১বার করে পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে শরীর মুছে দিবেন -৩বার।

৫. মাগরিবের ২০মিনিট পুর্বে দরজা ও জানালা বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করে দিবেন এবং মাগরিবের ১৫-২০ মিনিট পর খুলে দিতে পারবেন যদি প্রয়োজন হয়। খোলার সময় বিসমিল্লাহ বলে খুলবেন।

৬. মানুষ ও জ্বীনের বদনজর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে :- দুরুদে ইব্রাহিম (১বার), সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস (প্রতিটি ৭বার করে পড়বেন), দুরুদে ইব্রাহিম (১বার) পড়ে ডান কানে হালকা করে ফুঁ দিয়ে দিবেন এবং সমস্ত শরীরে ফুঁ দিয়ে দিবেন।

৭. পানি(উপরে উল্লেখিত সুরা ও আয়াত পড়ে পানি তৈরি করবেন) অল্প করে পান করাবেন এবং অল্প পানি দিয়ে মাথা, আইভ্রু, হাত ও‌ পায়ের তালুতে মাসেহ করে দিবেন(দিনে কমপক্ষে ৩বার)

৮. এই দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ১/৩/৫/৭ বা এর বেশি বেজোড় সংখ্যকবার পড়ে ফুঁ দিবেন:-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-এর জন্য এই বলে (আল্লাহ্‌র) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন-
أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
আমি তোমাদের দু’জনকে আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি যাবতীয় শয়তান ও বিষধর জন্তু থেকে এবং যাবতীয় ক্ষতিকর চক্ষু (বদনযর) থেকে।
উ‘ইযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁয়া হা-ম্মাহ্‌, ওয়ামিন কুল্লি আইনিল্লা-ম্মাহ্‌(একজনের ক্ষেত্রে উ’ইযুকা পড়বেন)।
বুখারী ৪/১১৯, নং ৩৩৭১; ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীস থেকে।

Collected from Ruqyah Support BD

বাচ্চাদের সমস্যার জন্য প্রাথমিক রুকইয়াহ

 বাচ্চাদের নজর লাগা ও এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য নিয়ত করে রুকইয়াহ করতে পারেন। দ্রত ফল পাবেন ইনশা আল্লাহ্‌

রুকইয়া করার নিয়মঃ

বাচ্চাকে সামনে বসিয়ে মাথায় হাত রেখে (হাত রাখতে অসুবিধা হলে দরকার নাই) সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস এগুলো বার বার করে পড়ে পড়ে ফুঁ দিতে থাকুন। অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট করেন। সাথে এই দুটি দোয়া পড়তে পারেন-

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উচ্চারণ: উঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তাম্মাহ। মিন কুল্লি শাইত্বা-নিন ওয়া হা-ম্মাহ ওয়ামিন কুল্লি ‘আইনিন লা-ম্মাহ।

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রাব্বান নাস আযহিবিল বা’স । ইশফিহি ওয়া আনতাশ শা-ফী । লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উক। শিফা-আন লা-ইউগা-দিরু সাকামা ।
এভাবে দিনে দুই-তিনবার রুকইয়াহ করতে পারেন। সমস্যা বেশি থাকলে এর সাথে রুকইয়ার গোসল দেয়াবেন এবং পানি খাওয়াবেন।

রুকইয়াহ গোসলঃ
গোসলের পানিতে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস যতবার ইচ্ছা পড়ে ফুঁ দিয়ে ঐ পানি দিয়ে গোসল করান। গোসল আবশ্যক না, সমস্যা বেশি দেখলে করাবেন।

পানি খাওয়ানোঃ
গোসলের পানি তৈরির মতই পানি তৈরি করে খাওয়ান দিনে ২/৩ বার। পানি খাওয়ানোও আবশ্যক না।

অন্যান্যঃ

  • কারো নজর লেগেছে বলে অনুমান করতে পারলে ঐ ব্যক্তির অযুর পানি নিয়ে বাচ্চার গায়ে ঢেলে দিবেন। দ্রুত উপকার পাবেন ইনশা আল্লাহ
  • বাচ্চার কিছু সমস্যা মায়ের কারনেও হতে পারে। বিশেষ করে মা-র স্তন্যপান না করতে চাইলে মায়ের উচিত নিজেরও সমস্যা আছে কিনা যাচাই করে রুকইয়াহ করা। 
  • অভিভাবকদের ফরজ, ওয়াজিবগুলো ভালভাবে আদায়ের সাথে সাথে সুরক্ষার আমলগুলি করা উচিত। আর নিজে আমলগুলো করার পর বাচ্চাকেও ফুঁ দিয়ে দিবেন। অথবা হিফাজতের নিয়াতে শুধু ৩ কুল পড়ে ফুঁ দিবেন – 
  • সন্ধ্যার আগে দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়া উচিত। সন্ধ্যার খানিক পরে খুলে দিতে পারে। বাচ্চাদের চেহারাওয়ালা পুতুল ইত্যাদির খেলনা দেয়া উচিত না। সন্ধ্যার সময় বাইরে থাকতে দেয়া উচিত না। আরো কিছু বিষয় এখানে জানতে পারবেন –
  • হাদীসে আরো কিছু দুয়ার কথা পাওয়া যায় রুকইয়ার জন্য। সেসব দিয়ে রুকইয়াহ করতে চাইলে এবং বাচ্চাদের সমস্যার জন্য রুকইয়ার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে এই গাইডটি পড়ুন… 
Collected from Ruqyah Support BD

শিশুদের জন্য যেভাবে রুকইয়াহ করবেন

ছোট বাচ্চাদের ওপর রুকইয়াহ করা বেশ সহজ। উপরন্তু তাদের গুনাহ থাকে না বিধায় রুকইয়াহ করলে অল্পতেই অনেক বেশি উপকার হয়।

প্রথমত: বাচ্চাদের সাথে কোন তাবিজ-কবচ, নজর লাগার টিপ থাকলে নষ্ট করার ব্যবস্থা করুন। কোন সমস্যা না থাকলেও এসব জিনিসের কারণে সমস্যা তৈরি হয়।


দ্বিতীয়ত: ঘরে কোন প্রাণীর ছবি, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র বা এমন কিছু যেন না থাকে, যা রহমতের ফেরেশতা প্রবেশে প্রতিবন্ধক।


তৃতীয়ত: বাচ্চাদের সরাসরি জিন বা জাদুর সমস্যা খুব কম হয়, তাই একটু অস্বাভাবিক আচরণ দেখলেই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। হ্যা! বদনজর লাগতে পারে, এজন্য বদনজরের রুকইয়াহ করতে পারেন।


আরেকটি বিষয় হলো, যেহেতু সমস্যা অনেক কারণেই হয়, তাই নির্দিষ্টভাবে বদনজরের নিয়াত না করে, যে সমস্যা হচ্ছে সেই নিয়াতে রুকইয়াহ করাই ভালো। তবে নিশ্চিতভাবে বোঝা গেলে ভিন্ন কথা।


বাচ্চাদের রুকইয়ার নিয়ম খুবই সহজ— কাছে ডেকে স্বাভাবিকভাবে বসান, অথবা কোলে নিন। আপনার সম্পূর্ণ মনযোগ বাচ্চার প্রতি নিবদ্ধ করুন। এরপর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার রুকইয়ার দোয়া বা আয়াতগুলো পড়ুন। পড়ার মাঝেমাঝে ফুঁ দিন। এতটুকুই!


হাদীসে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়তে পারেন:


أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ


উচ্চারণ: উ‘ইযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ, মিন কুল্লি শাইত-নিন ওয়াহা-ম্মাহ, ওয়ামিন কুল্লি ‘আইনিন লা-ম্মাহ।


সাথে সূরা ফাতিহা এবং তিন কুল পড়া যায়। এছাড়া এই কিতাবের বিভিন্ন যায়গায় (অথবা ওয়েবসাইটের পিডিএফগুলোতে) লেখা দুআ বা আয়াতগুলো থেকেও পড়তে পারেন।

প্রয়োজনে পরপর কয়েকদিন সকাল বিকাল রুকইয়াহ করুন। পানি বা খাবারে ফুঁ দিয়ে খাইয়ে এবং গোসল করিয়ে দিন।


তবে সমস্যা যদি জটিল হয়, অর্থাৎ জাদু অথবা জিনের আসরের লক্ষণগুলো প্রকট আকারে দেখা যায়। তাহলে বড়দের মত একটু দীর্ঘ সময় রুকইয়াহ করা এবং সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।

এক্ষেত্রে বাচ্চার বয়স, শারিরীক এবং মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে পরিমাণে কম-বেশি করতে হবে। প্রয়োজনে ৭ দিনের ডিটক্স রুকইয়াও করানো যাবে।


খেয়াল রাখার বিষয় হলো,

১. রুকইয়ার সময় বাচ্চাদের কখনো মারধর করবেন না।

২. একই যায়গায় বা একইভাবে বসে থাকতে বাধ্য করবেন না। এমন কোন কাজ করবেন না, যাতে সে ঘাবড়ে যাবে।

৩. জিন বা শয়তানের ব্যাপারে ভয় না দেখিয়ে সাহস দিন। গল্পে গল্পে আল্লাহর কালামের শ্রেষ্ঠত্ব এবং শয়তানদের দূর্বলতা বোঝান।

৪. একদম শুরু থেকেই ছোট ছোট জিকির-আজকারগুলো মুখস্ত করান এবং সেগুলো পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৫. সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো সে নিজে না করতে পারলে অন্য কেউ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিন।

৬. পরিবারের সবাই পাক-সাফ থাকার প্রতি গুরুত্ব দিন।

৭. আর ছোট থেকেই মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।


Collected from Ruqyah Support BD

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...