Saturday, November 30, 2019

গায়রে মাহরাম যেমনঃ ভাসুর, দেবর, ভগ্নিপতি, স্বামীর মামা খালু ইত্যাদি এদের খোজ খবর নেওয়া ও কথা বলা কি জায়েজ কোন মহিলার জন্য?

প্রশ্ন : কোনো মহিলার জন্য তার দেবর বা ভাসুর কিংবা তার স্বামীর ভগ্নিপতি এবং অন্যান্য গাইরে মাহরাম আত্মীয়স্বজন যেমন স্বামীর মামা, খালু, ফুফা ইত্যাদি এদের সাথে পর্দার অন্তরালে থেকে বা ফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলা কিংবা খোঁজখবর নেওয়া জায়েয হবে কি? বা ঐ সকল লোকেরা ঐ মহিলার সাথে কথাবার্তা বলতে গেলে জায়েয হবে কি না? এমনিভাবে স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর ঐ সকল আত্মীয়স্বজন যাদের সাথে পর্দা করা ফরয তাদের সাথে পর্দা করে বা ফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলা বা খোঁজ-খবর নেওয়া জায়েয হবে কি? বা ঐ সকল মহিলারা ঐ পুরুষের সাথে কথা বলতে চাইলে তা জায়েয হবে কি?
উত্তর:
পর্দার আড়াল থেকে বেগানা পুরুষের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েয। তবে বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে কথাবার্তা বলা যাবে না। তদ্রূপ জরুরতবশত কথা বললেও যদি গুনাহে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সেক্ষেত্রেও তাদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর প্রয়োজনবশত কথা বলার ক্ষেত্রেও কোমলতা পরিহার করে কথা বলতে হবে।
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমরা (পর পুরুষের সাথে) বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন কর না। যাতে এরূপ লোকের অন্তরে আকাঙ্ক্ষা (সঞ্চার) হয়, যার অমত্মরে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে। -সূরা আহযাব : ৩২
আর পুরুষের জন্যও বিনা প্রয়োজনে কোনো বেগানা নারীর সাথে কথা বলা নিষেধ।
তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোনো মহিলার জন্য তার স্বামী পক্ষের গায়রে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে এবং পুরুষের জন্য তার স্ত্রী পক্ষের গায়রে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা পর্দার আড়ালে থেকে বলতে পারবে।
-সূরা আহযাব : ৩২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৭৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৩৮; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ২৬৯

মহাকাশ নিয়ে আল কুরআনের ১০টি বিস্ময়কর তথ্য

★ মহাকাশ নিয়ে আল কুরআনের বিস্ময়কর ১০ তথ্য:

মহান আল্লাহর সৃষ্টিতত্ত্ব বিশ্লেষণ নিঃসন্দেহে একটি বড় ইবাদত। পবিত্র কোরআনে মানুষকে তার নিজের সৃষ্টি ও আশপাশের সৃষ্টিজগতের প্রতি অনুসন্ধিত্সু দৃষ্টিদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর পবিত্র কোরআন এ জন্য অদ্বিতীয় নির্ভরযোগ্য উৎস। চলুন দেখি মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মহাকাশবিষয়ক কী কী বিস্ময়কর তথ্য রয়েছে।
মহাকাশ কক্ষপথবিশিষ্ট
পবিত্র কোরআনের ভাষায় এর আলোচনা এসেছে সুরা জারিয়াতের ৭ নম্বর আয়াতে ‘জাতুল হুবুক’ তথা রাস্তা বা পথবিশিষ্ট শব্দে। মহাকাশের ছোট-বড় গ্রহ-উপগ্রহগুলো প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণমান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সূর্য তার নির্ধারিত পথে ছুটে চলে। চাঁদেরও রয়েছে নির্ধারিত কক্ষপথ।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৩৮, ৩৯)
মহাকাশ তারকাবেষ্টিত
মহাকাশবেষ্টিত তারকাগুলো প্রধানত দুই ধরনের। রাতের ঝলমলে আকাশে আমরা যেগুলো মিটমিট করে জ্বলতে দেখি কোরআনের ভাষায় এগুলো ‘কাউকাব’ তথা স্টার শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ছাড়া মহাকাশে একধরনের বৃহৎ আকৃতির তারকা রয়েছে, যেগুলো স্বয়ং বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ, উপগ্রহ ও তারকার সমষ্টি। কোরআনের ভাষায় এগুলো ‘বুরুজ’ তথা গ্যালাক্সি শব্দে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথম প্রকারের বিবরণে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আমি দুনিয়ার আকাশ অসংখ্য তারকারাজির দ্বারা সুসজ্জিত করেছি। (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ৬)
দ্বিতীয় প্রকার প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি মহাকাশে অসংখ্য গ্যালাক্সি স্থাপন করেছেন যাতে সূর্য ও আলোকোজ্জ্বল চন্দ্রও স্থাপন করেছি। (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬১)
বহুরূপী মহাকাশ
আকাশের রং কী? নীল আকাশ বলে মানুষের মুখে পরিচিত হলেও বাস্তবে আকাশের সুনির্দিষ্ট কোনো রং নেই। বায়ুমণ্ডলের ক্ষুদ্র অণুগুলো দৃষ্টিসীমার প্রান্তে নীল হয়ে দেখা দেয়। অবস্থাভেদে আকাশ বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। আবার রংধনুর মেলায় একই সঙ্গে সাত রঙেও সেজে ওঠে। আকাশের এই বহুরূপী সজ্জার বর্ণনা পবিত্র কোরআনে এভাবে এসেছে। ‘কসম ওই আকাশের, যা বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। (সুরা : তারিক, আয়াত : ১১)
মহাকাশ সপ্তস্তরে বিন্যস্ত
সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান মহাকাশের সাতটি স্তর আবিষ্কার করেছে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে এ রকম—১. ট্রাপোস্ফিয়ার। ২. স্ট্রাটোস্ফিয়ার। ৩. ওজনোস্ফিয়ার। ৪. মেসোস্ফিয়ার। ৫. থার্মোস্ফিয়ার। ৬. আয়নোস্ফিয়ার। ৭. এক্সোস্ফিয়ার।
অথচ পবিত্র কোরআনে এক হাজার ৫০০ বছর আগেই একাধিক আয়াতে এ তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সুরা মুমিনুনের ১৮ নম্বর আয়াতে ‘সাবআ তরাইক’ শব্দে, সুরা মুলকের তিন নম্বর আয়াতে ‘তিবাকা’ শব্দে এবং সুরা নাবার ১২ নম্বর আয়াতে ‘সিদাদা’ শব্দে মহাকাশের সপ্তস্তরের বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে।
ক্রমবিস্তৃত মহাকাশ
সাম্প্রতিক সময়ে সর্ববৃহৎ মহাকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নাসা এ তথ্য আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে যে ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে এবং মহাকাশের পরিধি ক্রমেই বিস্তৃতি লাভ করছে। চাঞ্চল্যকর এ তথ্যে অনেকেই চোখ কপালে তুলেছিল। কিন্তু আজ থেকে এক হাজার ৫০০ বছর আগে মরুভূমির বালুতে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন থেকে এ তথ্য সরবরাহ করেছিলেন মুহাম্মাদে আরাবি (সা.)। মহান আল্লাহ বলছেন, আমি নিজ হাতে আসমান সৃষ্টি করেছি এবং আমিই এর বিস্তৃতি ঘটাই। (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৪৭)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না আমি ভূপৃষ্ঠের পরিধি ক্রমশ সংকুচিত করে আনছি, এর পরও কি তারাই বিজয়ী!’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৪)
খুঁটিহীন আসমান
যেখানে শূন্যের ওপর এক টুকরা টিস্যু পেপারের অস্তিত্বও কল্পনা করা যায় না। সেখানে এত বিশাল মহাকাশ মহাশূন্যের মাঝে কিভাবে ভাসমান থাকতে পারে? জবাব আল্লাহ তাআলা নিজেই দিচ্ছেন, ‘তার নিদর্শনাবলি থেকে এটাও একটি যে আসমান-জমিন কেবলমাত্র তাঁর আদেশের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। (সুরা : রোম, আয়াত : ২৫)। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত আসমান আমি খুঁটিবিহীন ভাসমান অবস্থায় সৃষ্টি করেছি, যা তোমরা দেখছ।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১০)
মহাকাশ দরজাবিশিষ্ট
পবিত্র কোরআনের বেশ কিছু আয়াত পাশাপাশি রাখলে বিষয়টি সহজে অনুধাবন করা সম্ভব হবে। সুরা আম্বিয়ার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, আমি সুদৃঢ় ছাদরূপে আসমান সৃষ্টি করেছি। আর আকাশের এপার-ওপার সংযোগের জন্য রয়েছে দরজা। কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা অহংকারবশত আমার নিদর্শনাবলি অস্বীকার করে তাদের জন্য আকাশের দরজা উন্মোচিত হবে না। আবার এসব দরজায় রয়েছে শক্ত পাহারার ব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহান আল্লাহ, যিনি মাত্র দুই দিনে মহাকাশে সপ্তস্তর নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করেছেন। প্রতিটি স্তরের কার্যক্রম বিন্যস্ত করেছেন। এবং পৃথিবীর আকাশ অসংখ্য আলোকবাতি দ্বারা সুসজ্জিত করেছেন এবং সুদৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।’ (সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ১২)
ধোঁয়াশাঘেরা মহাকাশ
প্রথমবারের মতো আমেরিকান মহাকাশ গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান নাসা এ তথ্য সরবরাহ করেছিল যে মহাশূন্য খুব গভীর ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। খুব সকালে সূর্যের রশ্মি ও রাতে তারার আলোতে যে বিচ্ছুরণ সৃষ্টি হয় তা মূলত এই ধোঁয়াশার কারণেই হয়। যেমন—কুয়াশাঘেরা পরিবেশে বাতির আলো ভিন্ন ধরনের রশ্মি বিচ্ছুরণ সৃষ্টি করে। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠ নির্মাণের কাজ সমাধার পর তিনি আকাশ নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করলেন আর তখন তা ছিল ধোঁয়াশাঘেরা।’ (সুরা : ফুসিসলাত, আয়াত : ১১)
মহাকাশের বাসিন্দা
ভূপৃষ্ঠের এই ক্ষুদ্র পরিধিতে কয়টা জীব-জানোয়ারই বা বসবাস করে। অথচ এই বিশাল আকাশজুড়ে আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টি জীব রয়েছে। যারা সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহকে সিজদা করে এবং তাঁর গুণগানে মগ্ন। যাদের সংখ্যা শুধু আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আমি আসমানের দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম তা শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত।’ (সুরা : জিন, আয়াত : ৮)
সব শেষে মহাকাশ
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন যে একমাত্র তাঁর পবিত্র সত্তা ছাড়া মহাবিশ্বের সব কিছুই ধ্বংসশীল। বিন্দু থেকে শুরু হওয়া এই বৃহৎ বিস্তৃত মহাবিশ্ব আবার শুরুতে ফিরে আসবে। আর সাত আসমান বইপত্র গোটানোর মতো গুটিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন আমি আকাশমণ্ডলী গুটিয়ে নেব যেমন লিখিত কাগজপত্র গুটিয়ে রাখা হয়।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৪)

Thursday, November 28, 2019

স্বামী স্ত্রী এর যৌনাঙ্গ কি শুধু স্পর্শ করলেই গোসল ফরজ হয় নাকি প্রবেশ করার পর গোসল ফরজ হবে?


★স্বামী-স্ত্রীর বিনোদনের সময় কখন গোসল ফরয হয় আর কখন হয় না?
▬▬▬🌹🧡🌹▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামী স্ত্রীর নিজেদের মধ্যে বিনোদন করতে গিয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ যদি কাপড়ের আড়াল ছাড়া স্ত্রীর যৌনাঙ্গ সরাসরি স্পর্শ করে -কিন্তু সহবাস হয় নি, বীর্য পাতও ঘটে নি- তাহলে তাতে কি তাদের উভয়ের জন্য গোসল ফরজ হয়ে যাবে?
এক কিতাবে পড়ে ছিলাম যে, স্বামী-স্ত্রীর লজ্জা স্থান যদি কোন আড়াল ছাড়া একে অন্যকে স্পর্শ করে, তাতেই গোসল ফরজ হয়ে যাবে। যদিও তাতে প্রবেশ করানো হই নি। শুধু মাত্র স্পর্শ করার কারণেই গোসল ফরজ হয়ে যাবে-কথা টা কি সঠিক?
উত্তর:
কাপড়ের আড়াল ছাড়া স্বামী-স্ত্রী একে অপরের লজ্জা স্থানে হাত, পা বা শরীরে অন্য কোন অঙ্গ লাগলে তাতে গোসল ফরজ হয় না। এমন কি স্বামী এবং স্ত্রীর লজ্জা স্থান একটির সাথে আরেকটির কেবল স্পর্শ হলে তাতেও গোসল ফরয হয় না যতক্ষণ না পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ (মাথা) নারীর লজ্জা স্থানে প্রবেশ করে (বীর্যপাত ঘটুক অথবা না ঘটুক)।
♦ নিম্নে এ সংক্রান্ত হাদিস সমূহ পেশ করা হল:
🔸 ১) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‏ إِذَا الْتَقَى الْخِتَانَانِ وَتَوَارَتِ الْحَشَفَةُ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
“দু’বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলে এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ অদৃশ্য হয়ে গেলেই গোসল ওয়াজিব হয়।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, পবিত্রতা ও তার সুন্নতসমূহ অধ্যায়। সনদ সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ৩/২৬০।]
🔸 ২) আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قَعَدَ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ وَأَلْزَقَ الْخِتَانَ بِالْخِتَانِ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
“তার (স্ত্রী) চার অঙ্গ (দু হাত ও দু পা অথবা দু রান ও দু পা) এর মাঝখানে বসলে এবং এক যৌনাঙ্গ অপর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দিলেই গোসল আবশ্যক হবে।” অন্য বর্ণনায় আছে, و إن لم ينزل “বীর্য নির্গত না হলেও।” অন্য বর্ণনায় আছে, বীর্যপাত হোক অথবা না হোক।
(সহিহ বুখারী ও মুসলিম। সহীহ বুখারী গোসল অধ্যায়। অনুচ্ছেদ: যখন দুটি বিপরীত লিঙ্গ মিলিত হবে।)
🔸 ৩) আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا جَلَسَ الرَّجُلُ بَيْنَ شُعَبِهَا الأَرْبَعِ ثُمَّ جَهَدَهَا فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ ‏
“যখন কোন ব্যক্তি তার (স্ত্রীর) চার অঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানে উপবিষ্ট হয় এবং তার সাথে সঙ্গম করে, তখন গোসল ওয়াজিব হয়।” [সুনানে ইবনে মাজাহ, পবিত্রতা ও তার সুন্নতসমূহ অধ্যায়, মুসনাদ আহমাদ ৬৬৩২ তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: সহীহ আবু দাউদ ২০৯, ইরওয়াহ ১২২।]
🔸 ৪) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِذَا جَاوَزَ الْخِتَانُ الْخِتَانَ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ
“এক লজ্জা স্থান অপর লজ্জা স্থানে প্রবেশ করলে গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়।” (তিরমিযী, পরিচ্ছদ: ৮০. পুরুষের লজ্জা স্থান ও স্ত্রীর লজ্জা স্থান একত্রে মিলিত হলে গোসল করা ওয়াজিব)
➰ তবে আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত যে হাদিসে বলা হয়েছে: إِذَا الْتَقَى الْخِتَانَانِ فَقَدْ وَجَبَ الْغُسْلُ “দু’ বিপরীত লিঙ্গ পরস্পর মিলিত হলেই গোসল ওয়াজিব হয়।”
[তিরমিযী ১১০, আবু দাউদ ২১৪-১৫, তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ} অনুরূপভাবে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে কেবল দুটি বিপরীত লিঙ্গ স্পর্শ করলেই গোসল ফরজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে- সেগুলো থেকে কেবল ষ্পর্শ করা উদ্দেশ্য নয় বরং সহবাস করা উদ্দেশ্য-যেমনটি উপরোল্লিখিত হাদিস সমূহ থেকে প্রমাণিত হয়।
▪ সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার ইমাম নওবী বলেন, “গোসল ফরয হওয়া বীর্যপাতের উপর নির্ভর করে না বরং পুরুষাঙ্গেরে অগ্রভাগ স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হবে। এ ব্যাপারে সাহাবী ও তৎপরর্তীদের মধ্যে কিছু দ্বিমত থাকলেও বর্তমানে কোন দ্বিমত নাই অর্থাৎ এ ব্যাপারে ইজমা সংঘটিত হয়েছে।”
▪ সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারী, এ বিষয়ে ইজমা বা সর্বসম্মত অভিমত উল্লেখ করেছেন।
▪ শাইখ খালেদ আব্দুল মুনঈম রিফাঈ বলেন, এ ব্যাপারে ইজমা তথা ফুকাহাদের সর্বসম্মত অভিমত রয়েছে যে, কেবল স্পর্শ দ্বারা গোসল ফরয হয় না যতক্ষণ না পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে।
♦ সহবাসে বীর্যপাত না হলেও গোসল ফরয হবে:
উবাই ইবনু কা’ব রা. থেকে বর্ণিত:
إِنَّمَا جَعَلَ ذَلِكَ رُخْصَةً لِلنَّاسِ فِي أَوَّلِ الإِسْلاَمِ لِقِلَّةِ الثِّيَابِ ثُمَّ أَمَرَ بِالْغُسْلِ وَنَهَى عَنْ ذَلِكَ
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় লোকদের কাপড় চোপড়ের স্বল্পতার কারণে কেবল সহবাসে বীর্য নির্গত না হলে গোসল না করার অনুমতি প্রদান করেন। তবে পরবর্তীতে এরূপ অবস্থায় (বীর্যপাত না হলেও) তিনি গোসল করার নির্দেশ দেন এবং গোসল ত্যাগ না করতে বলেন। [সুনানে আবু দাউদ অধ্যায়: পবিত্রতা অর্জন অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৫ সহবাসে বীর্যপাত না হলে-সহিহ]
এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
অর্থাৎ ইসলামের প্রথম যুগে বীর্যপাত হলেই কেবল গোসলের নির্দেশ ছিল কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত হয়ে যায়। সুতরাং পুরুষাঙ্গ নারীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করলেই গোসল ফরয হবে-বীর্যপাত ঘটুক অথবা না ঘটুক। আল্লাহু আলাম।
আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব.

পরীক্ষার সময় মেয়েদের চেহারা খুলতে বাধ্য করলে কি গুনাহ হবে?

পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ যদি ছাত্রীদের চেহারা খুলতে বাধ্য করে
▰▱▰▱▰▱▰▱▰▱▱▰

প্রশ্ন: আমাদের দেশের ভার্সিটির এক্সামগুলোতে স্যারেরা মেয়েদেরকে নিকাব খুলতে এক রকম বাধ্য করে। কেউ না খুলতে চাইলে তাকে অপমানও করে। এডমিট কার্ডের ফটোর সাথে পরীক্ষার্থীর চেহারা মিলানোর অজুহাতে তারা এমনটি করে থাকে।এমন অবস্থায় পরিপূর্ণ পর্দানশীন কোন মেয়ে কি তা করতে পারে? ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তার কী করা উচিত? মুখ খোলা? নাকি না খুলে থাকা যদি স্যার পরীক্ষা না দিতে দেয় তবুও?

উত্তর:

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি মুসলিম পর্দানশীন মেয়েদেরকে একান্তই নিকাব খুলতে বাধ্য করে এবং প্রতিবাদ করার মত সামর্থ না থাকে তাহলে নিরুপায় হয়ে তা খোলা জায়েয আছে ইনশাআল্লাহ। তবে এডমিট কার্ডের ফটোর সাথে চেহারা মিলানোর পর পূণরায় তা ঢেকে ফেলার চেষ্টা করবে। অনুরূপভাবে পরীক্ষা চলাকালীন সময় চেহারা খোলা রাখা যদি আবশ্যক হয় তাহলে যতটুকু না হলেই নয় ততটুকু খোলা রাখবে আর বাকিটুকু ঢেকে রাখবে।

তবে অন্তরে এ কাজটির প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ গুনাহ হবে না। কারণ, এখানে তাকে বাধ্য করা হচ্ছে  এবং এই নিয়ম লঙ্ঘন করতেও সে অপারগ।

◉ আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যতটুকু তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে।” (সূরা তাগাবুন: ১৬)

◉ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী :

 إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের অজ্ঞতাজনিত ভুল, স্মৃতিভ্রমজনিত ভুল ও জোরজবরদস্তির শিকার হয়ে কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে মাজাহ্ (২০৪৩)।শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ ইবনে মাজাহ’ তে সহীহ হিসেবে চি‎হ্নিত করেছেন]
অর্থাৎ এই সব ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা কাউকে পাপ বা গুনাহ দিবেন না এবং ইসলামী শরীয়াতে তার কাজ পাপ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

সুতরাং যদি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করলে তার এত দিনের কষ্ট ও পরিশ্রম বৃথা যাওয়ার এবং এটা তার জীবনের ক্ষতির আশঙ্কা করে তাহলে একান্ত বাধ্য হয়ে এমনটি করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ গুনাহ লিখবেন না।

অবশ্য কারো নিকট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করাটা যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয় তাহলে এই পরিস্থিতিতে সে বিরত থাকবে।

পরীক্ষা কর্তৃপক্ষের জন্য তো অপরিহার্য ছিল, মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পুরুষদের থেকে আলাদা পরীক্ষা হল নির্ধারণ করা এবং মহিলা দ্বারা এডমিট কার্ডের সাথে চেহারা মিলানোর বিষয়টি সম্পন্ন করা। এ নিয়ম করলে এই ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না।

প্রকৃতপক্ষে একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একজন পর্দানশীল মুসলিম নারীকে বাধ্য করে পর্দাহীন করার অধিকার তাদের নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আমাদেরকে তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে অনিচ্ছা সত্বেও এই অন্যায়ের শিকার হতে হচ্ছে!

দুআ করি, আল্লাহ তাআলা যেন এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করেন।
আমীন।
▰▰▱▰▱▰▱▰▱▰▱
উত্তর প্রদানে:
FB ID: AbdullaahilHad
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

Wednesday, November 27, 2019

নারী বিষয়ক ১০০ পর্বের বিস্তারিত আলোচনায় সম্মানিত বোন টুম্পা বিনতে ইউসুফ

পর্বঃ১
ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা-নূর : ৩১)
উক্ত আয়াতে বেশকিছু বিষয় পরিস্কার করা হয়েছে,
১. যৌনাঙ্গের হেফাজত,
২. জনসমক্ষে সৌন্দর্য প্রদর্শন না করা,
৩. ওড়না দিয়ে মাথা ও বক্ষদেশ ভালোভাবে ঢেকে রাখা,
৪. সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে এমন আপনজনদের তালিকা এবং
৫. সাজসজ্জা ও অলঙ্কারাধী পরিধান করে রাস্তা জোরে পদচারণা না করা ইত্যাদি।
নারীরা সহজেই পথভ্রষ্ট হয় এবং ফেতনার কারণ তাই আল্লহর রাসূল (সা.) এরশাদ ফরমান-
قال صلى الله عليه وسلم : اطلعت على النار فرأيت أكثر أهلها النساء- رواه البخاري
হযরত মুহাম্মদ (ছ.) ইরশাদ করেন- আমি জাহান্নামের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলাম সেখানে দেখলাম জাহান্নাম বাসীর মধ্যে অধিকাংশ নারী।
(বুখারী শরীফ)
অন্য এক হাদিসে আল্লহর রছূল (সা.) এরশাদ ফরমান- আমি জাহান্নামে মহিলাদের অনেক রকমের আযাবে ভোগতে দেখেছি, তন্মধ্যে একজনকে চুলের সাথে উল্টা লটকিয়ে রাখা হয়েছে, যার মগজ খুলে খুলে ঝরছে। তার পাপ ছিলো সে পর পুরুষের সামনে মাথার চুল ঢেকে রাখতোনা। (আল কাবায়ের, পৃষ্ঠা ১৭৭)
বিনা ওজরে স্ত্রী স্বামীর নিকট তালাক চাইতে পারেনা,
আল্লহর রছূল (ছ.) ইরশাদ করেন-
رسول الله صلى الله عليه وسلم: أيما امرأة سألت زوجها الطلاق من غير ما سبب فحرام عليها رائحة الجنة- رواه الإمام أحمد وأبو داود والترمذي وابن ماجه
কোনো মহিলা বিনা ওজরে তার স্বামী থেকে তালাক চাইলে সে বেহেস্তের গন্ধও পাবে না। (ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, তিরমীজি ও ইবনে মাজাহ)

পর্বঃ ২
#নারী, #নারীর_পর্দা ও #নারীর_ব্যবহার #এবং_বিয়ে

বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটি সুদৃঢ় বন্ধন। আল্লহ তাআলা এর চির স্থায়িত্ব পছন্দ করেন, বিচ্ছেদ অপছন্দ করেন। ইরশাদ হচ্ছে:
 ‘তোমরা কীভাবে তা (মোহরানা) ফেরত নিবে ? অথচ তোমরা পরস্পর শয়ন সঙ্গী হয়েছ এবং তোমাদের নিকট সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।’ [নিসা : ২১]

এ চুক্তিপত্র ও মোহরানার কারণে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে কতক দায়দায়িত্ব ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। যা বাস্তবায়নের ফলে দাম্পত্য জীবন সুখী ও স্থায়ী হবে—সন্দেহ নেই। সে সব অধিকারের প্রায় সবগুলোই সংক্ষেপ আকারে বর্ণিত হয়েছে কুরআনের আয়াতে: ‘যেমন, 

নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমন তাদের জন্যও অধিকার রয়েছে ন্যায্য-যুক্তিসংগত ও নীতি অনুসারে। তবে নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের। আল্লহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ [বাকারা : ২২৭]

আল্লহ তাআলা এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, প্রত্যেকের উপর প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে। যদিও আনুগত্য এবং রক্ষনা-বেক্ষন ও অভিভাবকত্বের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব পুরুষদের।
এখানে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মাঝে

#স্বামী_স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসাটা হলো সবচাইতে বেশি অন্তরঙ্গ। তবু কিন্তু স্বামীকে একটু নিজের মান বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনো মালিন্য হয় এক্ষেত্রে স্ত্রী যদি ভুল করে তার ভুল বুঝে স্বামীর কাছে মাফ চাইবে এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর পায়ে ধরলেও দোষের কিছু নাই কিন্তু স্বামী যদি ভুল করেন তাহলে তাঁর মাফ চাওয়ার ধরনটা কিরকম হবে, তিনি কি স্ত্রীর পায়ে ধরবেন ...... সেটা কেমন দেখাবে? আর স্ত্রী যদি অবুঝ হয় (তিনি হয়ত শিক্ষিত তা কোন ব্যাপার নয়) এবং অন্যদের ব্যাপারটা প্রকাশ করে দেয় তাহলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে .......? স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যেমন অগাধ বিশ্বাস এবং ভালোবাসা থাকবে তেমনি সতর্কও থাকতে হবে যাতে করে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তিনি ভুল করে না বসেন। অনেক স্ত্রীকে দেখা যায় তিনি খুব ধার্মিক এবং স্বামী ভক্ত অথচ তাঁর আচার-আচরণ চাল চলন ও যাতায়াত পরপুরুষে দৃষ্টি এড়াতে পারে না এবং নিজেকে গুণী-জ্ঞানী বা দামি ভাবার জন্য স্বামীর অনেক একান্ত বিষয় অবলীলায় বলে ফেলেন যেকারণে স্বামীর মান অন্যের কাছে অক্ষুণ্ন থাকে না, হয়তোবা স্বামী তা জানেন না বা বুঝতে পারেন না।

#নারী_পুরুষের_পোশাক_ও_আচরণ : কখনো দেখা যায় মহিলারা শার্ট প্যান্ট পরে হাটে-বাজারে মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের অভিশপ্ত বলে নিচের হাদিসে আল্লহর রসূল (ছ.) ঘোষণা করেছেন-

ابن عباس رضي الله عنهما- لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم الرجل يلبس لبس المرأة ، والمرأة تلبس لبس الرجل - رواه الإمام أحمد وأبو داود

হযরত ইবনে আব্বাস (র.) থেকে বর্ণিত, নাবী  (ছ.) ঐসকল পুরুষকে অভিশম্পাত করেছেন যারা নারীদের পোশাক পরে এবং ঐসকল নারীদের অভিশম্পাত করেছেন যারা পুরুষদের পোশাক পরে। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

চাল-চলন, কথা-বার্তা ইত্যাদি যাবতীয় আচরণে পুরুষ-মহিলা একে অপরের অনুকরণ করাকে আল্লহর রছূল লানত করেছেন-

لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المتشبهين من الرجال بالنساء ، والمتشبهات من النساء بالرجال -رواه البخاري
হযরত মুহাম্মদ ছঃ  (সা.) ঐসকল পুরুষকে অভিশম্পাত করেছেন যারা নারীদের অনুকরণ করে এবং ঐসকল নারীদের অভিশম্পাত করেছেন যারা পুরুষদের অনুকরণ করে। 
(সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

পশ্চিমা সংস্কৃতি আজ আমাদের এমনভাবে ঘ্রাস করেছে, বোরকাতো দূরের কথা ঠিকমত ঢিলেঢালা কাপড়টাও পরা মেয়েরা অপছন্দ করে, ছোটখাটো পোশাকটাই তাদের কাছে বেশি পছন্দের, যা আজ সমাজে পুরুষদের নারীদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট করতে উৎসাহিত করছে এবং সমাজে দিন দিন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

অমুসলিমদের অনুকরণ করে চলা বা পোশাক পরার ব্যাপারে হুজুর (ছ..) এরশাদ ফরমান-

عن ابن عمر رضي الله عنهما (من تشبه بقوم فهو منهم) مسند أحمد
ইবনে ওমর (রা.) হুমা থেকে বর্ণিত- যে ব্যক্তি যে সম্প্রাদায়ের অনুকরণ করবে সে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ)

من لبس ثوب شهرة في الدنيا البسه الله ثوب مذلة يوم القيام، ثم الهب في النار – رواه أبي داود
যে দুনিয়ার খ্যাতি অর্জনের আশায় পোশাক পরবে আল্লহ তায়লা তাকে কেয়ামতের দিন অপমানের পোশাক পরাবেন এবং উদ্দীপ্ত আগুনে নিক্ষেপ করবেন। (আবু দাউদ)

রছূলুল্লহ (ছ.) বলেছেন, তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের ধর্মাদর্শকে এমনভাবে আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে এক হাত এক হাত করে অনুসরণ-অনুকরণ করবে শেষ পর্যন্ত তারা যদি হিংস্র সন্তুর গুহায়ও প্রবেশ করে তাহলে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লহর রছূল: পূর্ববর্তী জাতি কি ইয়াহুদী নাছারা? উত্তরে নাবী ছঃ বললেন- এছাড়া আর কারা? (মুসলিম)

পর্বঃ ৩ 
#নারী_তুমি_তো_রানী
মায়ের চোখে,বাবার চোখে, ভাইয়ের চোখে,সন্মানিত আর স্বামীর আদুরীনি।
তাহলে এই সাজ কেন পরপুরুষ এর জন্য সাজো।এই সুগন্ধি কেন তাদের জন্য বিলাও।

মহান আল্লহ্ সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। মানব সমাজে এ পরম আকর্ষণের প্রতি ইসলাম বিধি-নিষেধ আরোপ করে সৌন্দর্য চর্চার একটি মাপকাঠি রচনা করে দেয় যাতে ভারসাম্যপূর্ণভাবে তার চর্চা হয় ও অশ্লীলতার কারণ না হয়ে যায়। তাই প্রতিটি মুছলিম নর-নারীর কর্তব্য হলো, সৌন্দর্য চর্চাকে স্বীয় স্বামী ও মহিলা অঙ্গন পর্যন্ত সীমিত রাখা। মুহরিম ব্যক্তিদের পর্যন্ত তা সম্প্রসারিত করা দোষণীয় নয়। এছাড়া অন্যদের সামনে সাজ-গোজের কোন মূল্য নেই।

#স্বামীর_উদ্দেশ্য_সাজ_সজ্জা_গ্রহণ:

স্বামীর উদ্দেশ্য সাজসজ্জা গ্রহণ করা একটি ছওয়াবের কাজ। স্বামীর উদ্দেশ্য সাজসজ্জায় থাকার জন্য স্ত্রীর প্রতি শরীয়তে নির্দেশ রয়েছে। বর্তমানে নারীদের অবস্থা হলো, স্বামীর সামনে তারা নোংরা অপরিছন্ন ও ময়লা কাপড়-চোপড় পরে থাকে। আর বাইরে বেড়াতে যাওয়ার সময় আপাদমস্তক সুসজ্জিত হয়ে যায়। কেউ স্বামীর উদ্দেশ্য সাজ-সজ্জা গ্রহণ করলে সমালোচনা শুরু হয়ে যায় যে, মেয়েটির লাজ-লজ্জা বলতে কিছুই নেই- স্বামীর সামনে সে কেমন রূপচর্চা করছে!

পরিতাপের বিষয়! যেখানে সাজসজ্জা গ্রহণ করা উচিত সেখানে তা নিন্দনীয়। আর যেখানে

সাজসজ্জা গ্রহণ করা উচিত নয় সেখানে তা প্রশংসনীয়। স্বামী যখন স্ত্রীর সাজ-সজ্জা কামনা করে তখন তা গ্রহণ না করার কি যুক্তি থাকতে পারে?

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, মহিলারা স্বগৃহে তো বাদী-দাসী ও গৃহপরিচালিকার ন্যায় অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন থাকে। আর যখন কোন বিশেষ অতিথির আগমন ঘটে তখন বিভিন্ন সাজ-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে সম্পূর্ণ আকর্ষণীয় হয়ে  যায়।

প্রতিটি জিনিসের একটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। আমার প্রশ্ন, ভাল কাপড়-চোপড় পরিধানের উদ্দেশ্য কি শুধু অন্যদেরকে দেখানো? অদ্ভুত কা-ন্ড! যাকে দেখানের জন্য এই কাপড়-চোপড়ও সাজ পোশাক তৈরি হয়েছে, যার টাকায় তৈরি বা কেনা হয়েছে, তার সামনে তা পরিধান না করে অন্যদের সামনে পরিধান করা হয়। বিষয়টা কিছুটা লজ্জাজনক হলে ও সংশোধনের প্রয়োজনের বলতে হচ্ছে। বোনেরা এখন তো এক নতুন পোষাক বের হয়েছে। প্লাজো, আর হাপ সার্ট /গেন্জি। কোন মতে এসব পড়ে বাসায় থাকেন। আর বাহিরে ফিটিং আপাদমস্তক মেকআপ।সেটআপ পারফিউম,এটা ওটাদিয়ে পর পুরুষের যৌন ক্ষুদা ও চোখের জেনার ব্যাবস্থা করে বেরান। বলি কেন হে বোন?

আজকালকার স্ত্রীরা স্বামীর সঙ্গে কখনও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলবে না । তার সামনে ভাল কাপড়-চোপড় পরিধান করবে না। অথচ অন্যের গৃহে গেলে সুমিষ্টভাষী বনে যাবে, সুন্দর থেকে সুন্দরতম এবং উন্নত থেকে উন্নততর সাজে সজ্জিত হবে এ কেমন কথা? অর্থ খরচ করবে স্বামী আর উপভোগ করবে অন্যরা?

মাহরাম ব্যতীত অন্য লোকদের উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য চর্চা করা:

যাদের জন্য সৌন্দর্যচর্চা করা জায়েয তারা হলো, স্বামীসহ ঐ সকল পুরুষ যাদের সাথে মেয়ে লোকের বিয়ে চিরস্থায়ীভাবে হারাম। তাদের তালিকা হচ্ছে: নিজ বাপ, ভাই, ছেলে, ছেলের ছেলে, শ্বশুর, স্বামীর ছেলে ইত্যাদি।

তবে শর্ত হলো, ওই ব্যক্তিকে আমানতদার হতে হবে যিনি আল্লাহ্কে ভয় করেন। সে যদি ফাসিক ও গুনাহগার হয় তাদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ করা জায়েয নেই, সেটা নিজ ভাই হলেও না। অনুরূপভাবে মহিলারা অমুসলিম মহিলাদের সামনে সৌন্দর্য প্রকাশের বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত বাণীটি তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

মহান আল্লহ্ বলেন. অর্থাৎ ‘তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর. পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভাগিনা, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে’। (সূরা আন-নূর: ৩১)

মহিলারা আয়াতে বর্ণিত সকল লোক ব্যতীত অন্যদের সামনে সুসজ্জিতাবস্থায় যতবারই আসুক ততবারই তাদের গুণাহ হবে।

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মূসা আল আশয়ারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস থেকেও এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণিত আছে।

রছূল (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) ইরশাদ করেন: ‘প্রত্যেক চোখ যেনা করে। মেয়েলোক যখন সুগন্ধি মেখে কোন মজলিশের পাশ অতিক্রম করে, সেও যেনাকারিণী”। (আবু দাউদ ও তিরমিযী)

এর অর্থ হলো, সে যেনার প্রতি আহ্বানকারিণী। এ প্রকার তৎপরতার জন্য সে গুনাহগার হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

বোন আপনী হবেন রানী,কেন আপনী নিষিদ্ধ নারীদের খাতায় নাম দিচ্ছেন।কেন এই জাহিলিয়াতিদের অনুসরন করবেন। আপনিই তো আপনার সন্তানের চোখে শ্রেষ্ঠ মা হবেন।স্বামীর আদুরীনি ও তার রানী। পরিবারের আদর্শ।  নিজেকে সবার সাথে এভাবে বন্টন করে কেন নিজেকে ছোট করছেন?

বোন ফিরে আসুন ফিরে আসুন শান্তি ও প্রশান্তি সন্ধানে হারিয়ে যেতে। রব্বের কাছে  মন খুলে চাইতে গভির রাতে চোখের পানিতে শিক্ত হতে।

বোন আপনি তো দুনিয়ার চোখে রানী 

আল্লহ আমাদের বোনদের নিজেদের সন্মান করার মত বুদ্ধি বিবেচনা দান করুন।এবং বুঝার ক্ষমতা বারিয়ে দিন। আমিন ছুম্মা আমিন 


পর্বঃ ৪
মহান আল্লহ তায়ালা পবিত্র কুুরআনের সূরা আহযাবে বলেছেন,,
“ "হে নাবী, বলুন আপনার স্ত্রী ও কন্যাদেরকে এবং বিশ্বাসী নারীদেরকে যে, তাঁরা যেন তাঁদের বহিরাবরণ পরে থাকে (যখন বাইরে যাবে)। এটা তাঁদের পরিচিতির অত্যন্ত উপযোগী। (তাঁরা যেন পরিচিত হয় বিশ্বাসী নারী হিসেবে) তাহলে আর অহেতুক উৎপিড়ীত হবে না। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়াবান।["৩৩:৫৯] ”
সাধারণত ইসলাম সর্বাবস্থায় নারীদের ঘরে আবদ্ধ করে রাখার কথা বলে না। এ সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
“ "রছূল (ছঃ) বলেন, অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের (নারীদের) বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।"[সহিহ বুখারী]”
তবে, সেক্ষেত্রে দূর যাত্রা হলে সাথে মাহ্রম নিতে হবে। মাহ্রম হল সাথে কোনো পুরুষ অভিভাবক থাকা। এ সম্পর্কে সহীহ বুখারী শারীফে হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত,
“ "রছূলুল্লহ (ছঃ) বলেছেন, মাহ্রমের উপস্থিতি ব্যতীত কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি ওঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রছূলুল্লহ! আমার স্ত্রী হজ্বে বেরিয়ে গেছে। এবং অমুক অমুক জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য আমার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। নাবী (ছঃ) বললেন, ফিরে যাও এবং স্ত্রীর সাথে হজ্ব সমাপন কর।[সহিহ বুখারী"] ”
নারীদের ক্ষেত্রে এমন কোনো রঙিন পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া নিষেধ যা অন্যের দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। নারীর পোশাক যেন এত ক্ষীণ ও পাতলা কিংবা লাগোয়া বা চিপেচাপা না হয় যা তার দেহ আবরণের জন্য যথেষ্ট নয়। ঢিলেঢালা এবং শালীন পোশাকেই নারীর প্রকৃত সৌন্দর্য ও সুরক্ষা নিহীত।
পুরুষদের আকৃষ্ট করার জন্য সুগন্ধি মেখে ঘরের বাইরে বের হতে রছূল (ছ.) নিষেধ করেছেন। তিনি এমন পোশাক পরতেও মানা করেছেন যা পুরুষদের পোশাকের সাথে মিলে যায়। বিধর্মী নারীদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কোনো পোশাক পরিধান করা এবং গর্ব ও অহঙ্কারের জন্য দামি পোশাক পড়ে মানুষকে দেখানো থেকেও বিরত থাকতে ইসলাম নারীকে তাগিদ দিয়েছে।
এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে, রসুল (ছ.) স্পষ্টভাবে বলেছেন, সুন্দর সুন্দর জামা পরিধান করা কিংবা পোশাকে পরিপাটি হয়ে থাকা অহঙ্কার নয়। বরং আল্লহ পাক সুন্দর এবং তিনি বান্দার সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। এগুলো অহঙ্কার হিসেবে তখনই গণ্য হবে যখন কেউ সুন্দর জামা গায়ে দিয়ে অন্যকে তুচ্ছ করে এবং নিজেকে সবার চেয়ে দামি ও সুন্দর ভাবতে থাকে।
খুব সংক্ষেপে ইসলামের পোশাক সম্পর্কিত নির্দেশনা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন। আরবদের পোশাক কিংবা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির পোশাক দেখে অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং পবিত্র কুরআন ও হাদীসে নববীতে যেভাবে মুসলমান পুরুষ ও নারীদের জন্য আবরণের কথা বলা হয়েছে, সেভাবে মেনে চলার মধ্যে প্রকৃত শান্তি ও সম্মান এবং নিরাপত্তা নিহিত।
ভুলে গেলে চলবে না, নিজেদের যুক্তি ও প্রবৃত্তির লালসাকে আল্লহর জন্য ত্যাগ করে তার বিধান ও হুকুমের সামনে অবনত হওয়ার নাম ইসলাম। অনেকে আজ নানা অজুহাতে ও প্রলোভনে সুকৌশলে মুসলিম দের এ পোশাক সৌন্দর্য ও আদর্শ কেড়ে নিতে চাইছে। এসব ধোঁকা থেকে সজাগ থাকা আজ ঈমানের দাবি।হে বোন আমার এখনও কি ভেবে দেখবেননা!
বোন আপনি নিজেকে পুরুষের সমান ভাবতে গিয়ে আজ পদে পদে নিজেকে ছোট করছেন বাসে,ট্রেনে রাস্তা ঘাটে কত শত আনাচে কানাচে লজ্জিত হচ্ছেন। ছোট করছেন পরিবার এর কাছে ছোট করছেন সন্তান ও স্বামীর কাছে। ছোট ও অপ্রীয় হয়ে উঠছেন রব্ব এর কাছে। এখনও কি আপনার হুস ফিরবেনা বোন আমার। ইসলাম নারীদের দিয়েছে অগ্রাধিকার সমান অধিকার নয়। বোন নিজেকে সন্মান করা শিখুন। নির্লজ্জতা ও অপমানিত জীবন কে বেছে নিবেননা না ফিরে আসুন জাহিলিয়াত থেকে।। নিজেকে সন্মান করুন দেখবেন আপনি সম্মানের হতে পারবেন সবার চোখে ইং শা আল্লহ।।।
বোন আপনি তো রাজ কন্যা বাবার চোখে,
বেন আপনি রানী হবেন স্বামীর চোখে,
আর সন্তানদের চোখে চোখ জুরানো
ভালোবাসার নীর আদর্শ মা।
আর আপনি যদি টপস,জিন্স,পাতলা ফিনফিনে জামা,পাতলা বোরখা,দশতালা হিজাব,ইহুদিদের মত,শাড়ী বেপর্দা হয়ে বাহিরে চলেন তাহলে একদিন আপনার কন্যা সন্তানটি আপনাকে অনুকরন করে করে আপনার সাথেই যোগ দিবে।
আর পুত্র সন্তানটি কু দৃষ্টি সম্পন্ন পুরুষে পরিনত হতে পারে।(আল্লহু আলাম)
হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
রব্বানা--- আ-তিনা-ফিদ্ দুন্ইয়া-হাছনাতাওঁ অয়াফি-ল্ আ-খিরতি হাছানাতাওঁ অয়াক্বিনা-‘আয্বা-বান্না-র।
সূরা আল বাকারাহ - ২:২০১

পর্বঃ ৫
📖#নারীর_শিক্ষা_সম্পর্কে_ইসলামের_নির্দেশনা

বিছ্ মিল্লা-হির রহমা-নির রহি---ম

ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ
( তুমি পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, --)

সূরা আলাক্ব (العلق), আয়াত: ১

জ্ঞানার্জনের কোনো বিকল্প ইসলামে নেই। ইসলামের প্রাথমিক যুগে জ্ঞানচর্চার যে প্রবাহ শুরু হয়, নারীরাও সেখানে শামিল হয়েছিল। পরবর্তীতে আববাসীয় ও উমাইয়্যা যুগে নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে।[ফাতেমা আলী, ইসলামে নারী, ঢাকাঃ মদীনা পাবলিকেশন্স, ১৯৯৫, পৃ. ৩৫-৪১।]

 ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য না করে উভয়কে সমভাবে জ্ঞানার্জনের আদেশ দিয়েছে, কুরআনের নির্দেশও তাই। কুরআন সকল পাঠককেই আদেশ করছে পড়তে, চিন্তা-গবেষণা করতে, অনুধাবন করতে, এমনকি বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে লুক্কায়িত বিভিন্ন নিদর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে।

 নাবী (ছ.) এর  কাছে প্রথম যে ওহী নাযিল তার প্রথম শব্দ ছিল ‘ইকর-' ’অর্থাৎ পাঠ কর। এখানে স্ত্রী-পুরুষ সকলকেই পাঠ করতে বলা হয়েছে। সুতরাং জ্ঞানার্জন শুধুমাত্র পুরুষের জন্য সীমাবদ্ধ করা হয়নি, পুরুষের মত নারীকেও জ্ঞানার্জনের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে। নাবী (ছ.) প্রত্যেক মুছলিম নর-নারীর জন্য জীবনব্যাপী জ্ঞানের সাধনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তিনি ক্রীতদাসীদেরকেও শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দান করেছেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই নাবী (ছ.) বক্তৃতার আসরে যোগ দিতেন। বদর যুদ্ধে বন্দীদের শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে যে কেউ দশজন মুসলিমকে বিদ্যা শিক্ষা দিবে তাদের প্রত্যেককেই বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ইসলামে পার্থিব শিক্ষা লাভ করার জন্য নারীকে শুধু অনুমতিই দেওয়া হয়নি; বরং পুরুষের শিক্ষা-দীক্ষা যেমন প্রয়োজন মনে করা হয়েছে, নারীদের শিক্ষা-দীক্ষাও তদ্রূপ মনে করা হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে নি, উভয়ের অধিকার সমান।

আবুদ্দারদা রদিয়াল্লহু ‘আনহু বলেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি বলে সাব্যস্ত হবে সেই আলিম, যার ইলমের দ্বারা কোনো কল্যাণ সাধিত হয় না।’’
[দারেমী, সুনান, প্রাগুক্ত, পৃ. ৯৪।]

এছাড়াও জ্ঞানীদের সুউচ্চ মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন,
«وَإِنَّ العَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الحِيتَانُ فِي المَاءِ، وَفَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ، كَفَضْلِ القَمَرِ عَلَى سَائِرِ الكَوَاكِبِ، إِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ»
‘‘জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা, এমনকি পানির নিচের মাছ। অজ্ঞ ইবাদত গুজারের তুলনায় জ্ঞানী ব্যক্তি ঠিক সেরকম মর্যাদাবান, যেমন পূর্ণিমার রাতের চাঁদ তারকারাজির উপর দীপ্তিমান। আর জ্ঞানীগণ নবীদের উত্তরাধিকারী।’’
[সুনান আত্-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৮২।]

অতএব, নারীদের শিক্ষা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরী। কেননা, নারী কখনো মা, কখনো বোন, কখনো ছাত্রী আবার কখনো পরিবারের কর্তী হিসেবে আবির্ভূত হন। তাছাড়া মা ই তার সন্তানের প্রথম শিক্ষক। সামগ্রিকভাবে সুশিক্ষিতা মা স্বভাবতই জ্ঞানী, চরিত্রবান, ব্যক্তিত্ব সম্পন্না, নিষ্ঠাবান, নম্র ও ভদ্র। শিক্ষিত মায়ের এসব গুণ আপনাআপনিই সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত হয়।
নারীরা শুধু শিক্ষিত নয়, শিক্ষকও হতে পারেন। রসূল ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রদিয়াল্লহু ‘আনহা ছিলেন অন্যতম একজন শিক্ষক। এছাড়াও উম্মে সালমা, উম্মে হাবিবা, হাফসা, আসমা বিনতে আবু বকর, মায়মুনা, উম্মে হানী প্রমুখ মহিলা সাহাবিয়ার নাম প্রথম সারিতে এসে যায়।
অতএব আল্-কুরআন ও সুন্নাহর এই অমোঘ নির্দেশের মধ্য দিয়ে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম নারী শিক্ষার উপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। শিক্ষার অধিকার প্রদানের মাধ্যমেই ইসলাম নারীকে সুউচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। কারণ, বিশ্বাসী ও জ্ঞানীদের উচ্চাসন দেবেন বলে আল্লহ্ নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
[ইসলামী দৃষ্টিতে নারী : একটি সমীক্ষা, ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, ৩৬ বর্ষ, ৩য় সংখ্যা, জানু-মার্চ, ১৯৯৭, পৃ. ৫৫]

মহান আল্লহপাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। পবিত্র কূরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এই জন্য যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত -৫৬)।

একমাত্র আল্লহর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লহপাক ইরশাদ করেন- ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার’ (সূরা বাকারা: আয়াত-২১)।

সেই ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য আল্লহপাক একটি শর্ত যুক্ত করেছেন। সেই শর্তটি হচ্ছে ইলিম বা জ্ঞান। ইলম বা জ্ঞান ব্যতীত কোন ইবাদত আল্লহর দরবারে কবুল হবে না। এজন্য ইবাদত করার পূর্বে এ সম্পর্কে শিক্ষা অর্জন করা সকলের উপর ফরজ। শিক্ষা লাভ করা থেকে নর-নারী কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। কেউ বিরত থাকতে পারবে না। আল্লহপাক পুরুষকে যেমন শিক্ষা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন তেমন নারীকেও শিক্ষা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লহর বিধানে শিক্ষা অর্জন করা নর-নারীর সমান অধিকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পবিত্র কোরআন নাজিল করে মহান আল্লহপাক সর্ব প্রথম যে নির্দেশ দিয়েছেন সেই নির্দেশটাই হচ্ছে নর-নারীর জন্য শিক্ষা বিষয়ক। ইরশাদ হচ্ছে-‘পড় তোমার প্রভুর নামে” (সূরা আলাক: আয়াত-১)।
 শিক্ষা ছাড়া আল্লহকে জানা বুঝা যাবে না বিধায় শিক্ষা অর্জন করা প্রথম ও প্রধান ফরজ। এই ফরজ কাজ থেকে বিরত থাকা মানেই সকল ক্ষেত্রে ধ্বংস ডেকে আনা। মানবতার ইহ-পরকালীন শান্তির একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষা। আর এই শিক্ষা নর-নারী উভয় কেই অর্জন করতে হবে। ইলম অর্জন করা সকল নর-নারীর উপর ফরজ ঘোষণা করে হযরত আনাস রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূল সা. ইরশাদ করেন- ‘ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুছলীম  নর-নারীর উপর ফরজ’ (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)

رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيْهِ ۚ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ

হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি মানুষকে সমবেত করবেন এমন একদিন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।

(সূরা আলে ইমরান - ৩:৮-৯)

মহান আল্লহ সবাইকে সঠিক টা বুঝার মত জ্ঞান   দিন আমিন ছুম্মা আমিন।

পর্বঃ ৬
ইসলামে নারীর সন্মান, এবং ইসলাম দিয়েছে সকল মা কে সর্বোচ্চ সন্মানিত আসন।

ইসলাম ই একমাত্র নারীর মর্যাদা দিয়েছে সর্বোচ্চ সন্মানের। আলহামদুলিল্লাহ আমি এই ইসলাম ই পেয়েছি আমার ধর্ম।আমি মুছলিম আলহামদুলিল্লাহ। আমিই নারী আমি আল্লহর একজন গুনাহগারী বান্দী।আলহামদুলিল্লাহ

ওগো মা তুমি এই ধরনীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত, তোমারী পদতলে রয়েছে জান্নাত। মা কে কষ্ট দিয়েননা কেউ, মা যেমনই হোক না কেন সে আপনারই মা,,

মানুষ সামাজিক জীব, অন্যদিকে প্রকৃতির অংশ। তাই মানুষকে জীবন ধারণ, বেঁচে থাকা ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় বিধানই মেনে চলতে হবে। প্রাকৃতিক বিধান লঙ্ঘন করলে ধ্বংস অনিবার্য। আর সামাজিক বিধান ভঙ্গ করলে নেমে আসে বিপর্যয়। সামাজিক নিয়মগুলো প্রকৃতি থেকে মানুষের লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে ওঠে। বিধানসমূহের মধ্যে ধর্মীয় বিধানই শ্রেয়।
ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ‘নিছা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কুরআনে ‘নিছা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।

ইসলাম নারীকে মহান মর্যাদা দিয়েছে। ইসলাম মা হিসেবে নারীকে সম্মান দিয়েছে। মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করা, মায়ের আনুগত্য করা, মায়ের প্রতি ইহসান করা ফরয করেছে। মায়ের সন্তুষ্টিকে আল্লহ্‌র সন্তুষ্টি হিসেবে গণ্য করেছে। ইসলাম জানিয়েছে, মায়ের পদতলে বেহেশত অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার সহজ রাস্তা হচ্ছে- মায়ের মাধ্যমে। মায়ের অবাধ্য হওয়া, মাকে রাগান্বিত করা— হারম; এমনকি সেটা যদি শুধু উফ্‌ উফ্‌ শব্দ উচ্চারণ করার মাধ্যমে হয় তবুও। পিতার অধিকারের চেয়ে মায়ের অধিকারকে মহান ঘোষণা করেছে। বয়স হয়ে গেলে ও দুর্বল হয়ে গেলে মায়ের খেদমত করার উপর জোর তাগিদ দিয়েছে। কুরআন-হাদিসের অসংখ্য স্থানে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-

আল্লহর বাণী:
 “আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি।”[সূরা আহক্বাফ, আয়াত: ১৫]

“আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে ও মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল। আর মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪]

ইবনে মাজাহ (২৭৮১) মুয়াবিয়া বিন জাহিমা আল-সুলামি (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি রছূলুল্লহ্‌ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর কাছে এসে বললাম: ইয়া রছূলুল্লহ্‌! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই; এর মাধ্যমে আল্লহ্‌র সন্তুষ্টি ও আখেরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: ফিরে গিয়ে তার সেবা কর। এরপর আমি অন্যভাবে আবার তাঁর কাছে এসে বললাম: ইয়া রছূলুল্লহ্‌! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। এর মাধ্যমে আল্লহ্‌র সন্তুষ্টি ও আখিরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তার কাছে ফিরে গিয়ে তার সেবা কর। এরপরও আমি তাঁর সামনে থেকে এসে বললাম: ইয়া রছূলুল্লহ্‌! আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। এর মাধ্যমে আল্লহ্‌র সন্তুষ্টি ও আখিরাত অর্জন করতে চাই। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তোমার মা কি জীবিত? আমি বললাম: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তোমার জন্য আফসোস! তুমি তার পায়ের কাছে পড়ে থাক। সেখানেই জান্নাত রয়েছে।”[আলবানী সহিহু সুনানে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসটি সুনানে নাসাঈ গ্রন্থেও (৩১০৪) রয়েছে। সেখানে হাদিসটির ভাষ্য হচ্ছে- “তার পায়ের কাছে পড়ে থাক। তার পায়ের নীচে রয়েছে – জান্নাত।”

সহিহ বুখারী (৫৯৭১) ও সহিহ মুসলিমে (২৫৪৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “এক ব্যক্তি রছূলুল্লহ্‌ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর কাছে এসে বলল: ইয়া রছূলুল্লহ্‌! আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকার কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার মায়ের। লোকটি বলল: এরপর কার? তিনি বললেন: তোমার পিতার।”

ইসলাম মা  হিসেবে কতটা সন্মানিত করেছেন চিন্তা করুন হে আমার বোনেরা। আপনি নিজেকে এমন একজন সন্তানের মা হিসেবে,তৈরী করুন। যে সন্তান আপনার মুখে দিকে তাকিয়ে তার জান্নাত খুজে পাবে। বোন আল্লহর হুকুম পালনেই রয়েছে সন্মান। আপনি হয়ে উঠুন আপনার সন্তান এর চোখে আদর্শ মা। বোন নিজেকে আর নিচে নামাবেননা নিজের সৌন্দর্য স্বামীর জন্য।  আপনার সন্তানদের আদর্শ মা আপনি। আপনি তাদের প্রাথমীক শিক্ষীকা।

আমার জীবন মৃত্যু,রিজক,ও সন্মানের মালীক মহান আল্লহ আমায় ও আমার  প্রতিটা মা বোনকে আপনি ক্ষমা করুন, আর আপনার  এই দাসীদেরকে আপনার হুকুম পালন করার তাওফিক দান করুন।
আমিন ছুম্মা আমিন।

বোন আপনি আজ অর্ধ-উলঙ্গ হয়ে সর্বত্র চলাফেরা করলে আপনার কন্যা শিশুটিও এটা দেখে নিজেকে তৈরী করবে আপনার ই মতো।।আর পূত্র শিশুটি যখন বড় হয়ে তার ওস্তাদ এর কাছে শিখবে পর্দা করা ফরজ। তখন আপনার প্রতি তার একটি ঘৃনার দৃষ্টি তৈরী হবে বোন। হয়তবা সে আপনার কর্মের কারনেই ও রকম কোন ওস্তাদ এর স্বরনাপন্ন হতেও পারবেনা।
কেননা সে শিখবে ফ্রি মিক্সিং, জাস্ট ফ্রেন্ড নামের শয়তানী,সে হারাম প্রেম লিলাকে অনায়েসে গা ভাসিয়ে দিতে শিখবে।। আল্লহু আলাম।

আসর সলাতের পূর্বে চার রাকআত নফল সলাত আদায় করার ফযিলত ও পদ্ধতি

"আসর সালাতের পূর্বে চার রাকআত নফল সালাত আদায় করার ফযিলত ও পদ্ধতি",,,,,,
▬▬▬▬🔸🔹🔸▬▬▬▬
"আসর সালাতের পূর্বে চার রাকআত নফল সালাত আদায় করা ফযিলত পূর্ণ আমল।
▪️কেননা হাদিসে এসেছে,,,,
.
"আলী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,,,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের (ফরয নামাযের) পূর্বে চার রাকাআত নামায আদায় করতেন। তিনি (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা ও তাদের অনুগামী মুসলমান- মুমিনদের প্রতি সালাম করার মাধ্যমে এ নামাযের মাঝখানে বিভক্তি করতেন (অর্থাৎ দুই সালামে চার রাকাআত আদায় করতেন।)
.
(সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] অধ্যায়ঃ ২/ রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে নামাযের সময়সূচী (كتاب الصلاة عن رسول الله ﷺ) হাদিস নম্বরঃ [429], হুসাইন আল-মাদানী।
হাসান। ইবনু মাজাহ– (১১৬১))
▪️অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,,,,
.
"ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,,,নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,,,“আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর রহম করুন,,,যে ব্যক্তি আসরের পূর্বে চার রাকআত সালাত আদায় করে।”
.
[আবু দাউদ ১২৭১, তিরমিযি ৪৩০ম আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলে আখ্যায়িত করেছেন, সহীহুত তরাগীব ওয়াত তরাহীব, হা/৫৮৮]
.
♦️" ইমাম শাফিঈ এবং আহমাদের মতে,,,রাত এবং দিনের (ফরয নামায ছাড়া অন্যান্য সব) নামায দুই রাকাআত করে আদায় হবে। তারা উভয়ে আসরের পূর্বের চার রাকাআতে দুই রাকাআত পর পর সালাম ফিরানোই পছন্দ করেছেন। কেননা আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত,,,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
صلاة الليل والنهار مثنى مثنى “রাত ও দিনের নফল (ফরজ ছাড়া অন্যান্য নামায) দু রাকাআত রাকাআত করে।” (আবুদাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী,
ইবনে মাজাহ-সহীহ)।।
.
"অবশ্য কোনো আলেম আসরের পূর্বে এই চারকআত এক সালামে পড়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন। কিন্তু হাদিসের আলোকে দু রাকআত দু রাকআত করে পড়ার মতটি অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য বলে প্রতিভাত হয়।
.
 উল্লেখ্য যে,,,আসরের পূর্বে চার রাকআত নামায দৈনন্দিন ১২ রাকআত সুন্নাতে রাতেবা/সুন্নতে মুআক্কাদা এর এর অন্তর্ভূক্ত নয়। বরং তা সাধারণ নফল। সুতরাং কেউ যদি তা আদায় করে তাহলে ইন শা আল্লাহ সওয়াব লাভ করবে।
আল্লাহ আলাম।
.
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার.ksa

Monday, November 25, 2019

ইশার সলাত দেরী করে বেশি রাতে আদায় করা উত্তম

 কষ্টকর না হলে বেশি রাতে ইশার সলাত আদায় করাকে রসুলুল্লাহ (স) উত্তম/প্রকৃত সময় বলেছেন। [তথ্যসূত্রঃ বুখারী-হাঃ নঃ ৫৪০; মুসলিম-হাঃ নঃ ১৩২০-২১ ইঃফাঃ]।
 🔵 💜 "মুহাম্মদ ইবনু আলা (রহঃ)......... আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও আমার সঙ্গীরা-যারা (আবিসিনিয়া থেকে) জাহাজ যোগে আমার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন- বাকী’য়ে বুতহানের একটি মুক্ত এলাকায় বসবাসরত ছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থাকতেন মদিনায়। বুতহানের অধিবাসীরা পালাক্রমে একদল করে প্রতি রাতে এশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর খিদমতে আসতেন। পালাক্রমে ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় আমি ও আমার কতিপয় সঙ্গী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর কাছে হাযির হলাম। তখন তিনি কোন কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন, ফলে সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ে বিলম্ব করলেন।  🌺এমন কি রাত অর্ধেক হয়ে গেল। 🌺 তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এলেন এবং সবাইকে নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। সালাত (নামায/নামাজ) শেষে তিনি উপস্থিত ব্যাক্তিদেরকে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে যাও। তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এটি এক নিয়ামত যে, তোমরা ব্যতীত মানুষের মধ্যে কেউ এ মুহূর্তে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছে না। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তোমরা ব্যতীত কোন উম্মাত এ সময় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বাক্যটি বলেছিলেন বর্ণনাকারী তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। . আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর এ কথা শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত মনে বাড়ী ফিরলাম।" [বুখারী-হাঃ নঃ ৫৪০; মুসলিম-হাঃ নঃ ১৩২৬ ইঃফাঃ]।
 🔵 💜 "ইসহাক ইবনু ইবরাহীম, মুহাম্মদ ইবনু হাতিম, হারুন ইবনু আবদুল্লাহ, হাজ্জাজ ইবনু শাঈর, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইশার সালাতে) দেরী করেন।  🌺এমনকি রাতের এক বড় অংশ (অর্ধেকের বেশি) অতিবাহিত হয়ে গেল। 🌺 যারা মসজিদে ছিল তারও ঘূমিয়ে পড়ল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে এসে সালাত আদায় করলেন। এরপর বললেন, ●এটাই সালাতের প্রকৃত সময়, যদি না আমি আমার উম্মাতের জন্য একে কষ্টকর বলে মনে করতাম।● আবদুর রাযযাকের বর্ণনায় রয়েছেঃ যদি আমার উম্মাতের উপর তা কষ্টকর না হতো।" [মুসলিম-হাঃ নঃ ১৩২০ ইঃফাঃ]।
 🔵 💜 "যুহায়র ইবনু হারব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একরাতে আমরা ইশার সালাত আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপেক্ষায় ছিলাম। রাতের এক তৃতীয়াংশ অথবা আরো কিছু বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আমাদের কাছে বেরিয়ে এলেন। আমরা জানতাম না যে, জরুরী কোন কাজ তাঁকে তাঁর গৃহে ব্যস্ত রেখেছিল, না অন্য কোন কাজে তিনি মশগুল ছিলেন। তারপর তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, তোমরা এমন এক সালাতের অপেক্ষা করছ, যার জন্য তোমরা-ছাড়া অন্য কোন ধর্মাবলম্বীগণ অপেক্ষা করেনি। ●আমার উম্মাতের উপর যদি তা ভারী না হতো, তাহলে তাদের নিয়ে এই সময়ই সালাত আদায় করতাম।● তারপর তিনি মু-আযযিনকে আদেশ দিলেন। সে সালাতের ইকামত দিল এবং তিনি সালাত আদায় করলেন।" [মুসলিম-হাঃ নঃ ১৩২১ ইঃফাঃ]।

Sunday, November 24, 2019

বাংলাদেশের আহলেহাদিছদের অনেকের ফিকহী মাসয়ালা নিয়ে গোড়ামীর কিছু উদাহরণ

সৌদির সালাফি আলেম শেইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ ঈদের তাকবিরের ব্যাপারে ৬ এবং ১২ উভয় মতকেই জায়েজ বলে মনে করেন। এবং এই তাকবিরের ব্যাপারে ঈদগাহ আলাদা করে নামাজ পড়াকে গর্হিত বিদআদ বলে মনে করেন।
https://islamqa.info/bn/answers
https://www.youtube.com/watch?v=-e66E9gFElQ
https://www.youtube.com/watch?v=rD49QMaPoWk


সৌদির জেদ্দা মসজিদের খতিব। যিনি বলেছেন ফিকহ শিখার জন্য প্রাথমিক লেভেলে কোনো একটা মাজহাবের কুতুবাদি পড়া উচিত।
https://www.youtube.com/watch?v=JuOqXV-ISL0

কিছু আহলে হাদিছ শাইখ আল্লাহর আকার আছে বলে থাকেন। অথচ, আকার (আরবিতে সেকেল) শব্দটা কুরআন বা হাদিছে আল্লাহর শানে ব্যাবহার হয়নি। তাই আবু বকর জাকারিয়া এটার বিরোধিতা করেছেন।
https://www.youtube.com/watch?v=BmSUr5m5BoA


Thursday, November 21, 2019

মহিলারা কি তালিম করতে গিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারবে?

প্রশ্ন: মহিলারা কি তালিম করতে গিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারবে?
& তারা কিভাবে দ্বীন প্রচার করবে?

উত্তর:
'তালিম' হচ্ছে আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ হলো : উপদেশ /শিক্ষা/ শিষ্টাচার।
ইসলামিক দৃষ্টি কোন থেকে তালিম দেওয়া বলতে বুঝায়, কাউকে ইসলামিক শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া।
আর যদি মহিলারা এই কাজ করে থাকে তাদের বলা হয় 'মহিলা তালিম'।
যা বর্তমানে উপমহাদেশ গুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপকভাবে।
মহিলা তালীমকে আবার মহিলা তাবলীগি ও বলা হয়। তালিম বা তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য হলো 'ইসলাম প্রচার।'
ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে তালীম/তাবলীগ:
আল্লাহ বলেন:
"আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি নির্দেশ দেবে, ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।"(সূরা আল-ইমরান :১০৪)
ইসলামের যারা তালিম করে থাকে তারা মূলত ইসলাম প্রচারের মাধ্যমেই তালিম করে থাকে।
আর রাসূল বলেছেন:
"প্রচার কর একটি আয়াত হলেও, আর সেটা বনি-ঈসরাইলের ঘটনা হলে ও দোষ নেই।"
( সহীহ বুখারী :৩৪৬১ )
আনাস বিন মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন:
রসূলুল্লাহ (স:) বলেছেন :
"জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের(নর-নারী) উপর ফরয।"
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২৪)
সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানেরই ধর্ম শিক্ষা ও প্রচার করা জরুরী।
এবার আসুন দেখি,
ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে মহিলাদের তাবলীগ/তালীম কতটুকু জায়েজ।
আমরা পবিত্র কুরআনের অায়াত গুলোর দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখবো আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের পৃথিবীতে পথ-প্রদর্শণ করানোর জন্য অনেক নবী~রাসূল পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোন নবী , রাসূল ই মহিলা ছিলনা। এবং নবী অর্থ যদি নবুওয়াত প্রাপ্তি হিসেবে নেন, তাহলে দেখবেন ইসলামে কোন মহিলা নবী ই নেই।
অথচ আল্লাহর দ্বীন প্রচারে নবী-রাসূলরাই বিশেষ ভূমিকা রাখেন, রেখেছেন।
রাসূল (স:) এর যুগে যারা দ্বীন প্রচার করতেন তারা সবাই পুরুষ সাহাবী ছিলেন। কখনো রাসূল (স:) নিজেও দ্বীন প্রচারের জন্য কোন স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে যাননি, কখনো তিনি আয়েশা (রা:)কে বলেননি যে, আয়েশা (রা:) তুমি আজ ওমুকের বাড়ীতে ইসলাম বুঝাতে যাবে, আর আমি অন্য পাড়াতে প্রচার করবো। এবং রাসূল (স:) পূর্ণ জীবনে এমন কোন সহীহ হাদিস ও নেই যে, যেখানে বলা আছে মহিলাদের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে দ্বীন প্রচার করতে হবে। এটা মহিলাদের জন্য ফরয নয়।
তবে বুখারী ও মুসলিমের হাদিসে আসছে:
কারোর (নারীর) যদি দ্বীনি বিষয়ে ভাল জানা থাকে তবে তাঁর কাছ থেকে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশিরা দ্বীন শিক্ষার জন্য যাবে।
তাহলে বুঝা যায় , কোন নারী দ্বীন প্রচারের জন্য বাইরে বেরিয়ে যাবেনা। বরং তার কাছ থেকে অন্যরা জেনে নিবে।
তবে কোন কোন আলেম বলেছেন, মহিলাদের যদি গভীর বিশুদ্ধ জ্ঞান থাকে দ্বীন বিষয়ে তাহলে তারা নিজেদের বাড়িতে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে নারীদের জন্য। তবে এতে 'স্বামীর' অনুমতি থাকতে হবে।
মহিলা তালীমে কুরআন হাদিসের নামে মিথ্যা ,জয়ীফ ও মনগড়া কিচ্ছা কাহিনী প্রচার করার ব্যাপারে:
অধিকাংশ মহিলারাই কুরআন হাদিস সমন্ধে সহীহ জ্ঞান রাখে না। বর্তমানে যারা তালীম দিচ্ছে তার ৯৮% ওর বেশি মহিলারা মিথ্যা গল্প গুজুব দিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। তারা যেসব বই পড়ে, তারমধ্যে রয়েছে,ফাযায়েলে নামায, ফাযায়েলে হজ্জ্ব, ফাযায়েলে যাকাত, ফাযায়েলে রোযা, উজীফা শরীফ ও নিয়ামুল কোরআনসহ অন্যান্য বই।
যাতে শির্ক আর কুফরি তে ভরপুর। ফলে তারা সহীহ জ্ঞান রাখে ও না প্রচার ও করতে পারে না। এতে করে প্রায় সবাই অধিকাংশ আমল মিথ্যার উপর করে যাচ্ছে। ফলে পরকাল অসাড়।
পরিনাম:
মহিলাদের তালীম দিতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মহিলারাই অল্প জেনে বেশি বলে, এতে করে ইসলামে নতুন কিছু তৈরী হয়। যাকে বলা হয়'বিদআত'। যার পরিনাম জাহান্নাম।
এছাড়া ও অপ্রীতিকর হলে ও কথাটি বলতে হয় যে, তালীম দিতে গিয়ে কিছু কিছু মহিলারা পরকিয়ায় ও জড়িয়ে যায়। যার শাস্তি ইসলামে ,পাথর মেরে মেরে হত্যা করা।
কখনো কখনো তাদের বাইরে ও রাত যাপন করতে হয়। যেমন আজকের প্রশ্ন ছিল, মহিলারা তালিম দিতে গিয়ে রাত যাপন করতে পারে কিনা।
স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোন মহিলা নফল রোযা ও রাখতে পারবে না। অথচ আল্লাহর কাছে নফল রোযার গুরুত্ব কত যে বেশি, সেটা নফল রোযার গুরুত্বের অধ্যায়ে আলোচনা করবো ইনশা-আল্লাহ্ ।
আর কোন স্বামী যদি অনুমতি দেয় তার স্ত্রীকে নিজের অবর্তমানে অপরিচিত নতুন কোন স্থানে থাকার (মাহরাম ব্যতীত),তাহলে সে স্বামী "দাইউসের"অন্তর্
ভুক্ত হবে।
মহিলারা তালীমের কাছ করতে গিয়ে স্ত্রী হিসেবে স্বামীর সেবা / কামনা যথাযথভাবে পূরণ করতে অক্ষম। কারণ তারা অনেক সময়ই দূরে দূরে অবস্থান করে ও দীর্ঘ সময় পার করে। ফলে স্বামীর হক্ক যথাথত ভাবে স্ত্রী আদায় করতে পারে না।
অথচ আল্লাহ্ বলেন:
স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র ।
তোমরা যখন যেভাবে ইচ্ছে তাদের ব্যবহার কর।( বাকারা: ২২৩)
অনেক সময় তারা তাদের সন্তানদের সেবা শুশুষ্রা ও যথাযথভাবে দেখা-শোনা করতে পারেনা। ফলে মা হওয়ার মহৎ ফযীলত ও পুরষ্কার তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। মাঝে মাঝে তারা Family planning করতে ও বাধ্য হয়।
সবশেষে বলতে চাই , মহিলাদের দ্বীন প্রচার করতে বেরিয়ে পড়া খুূই 'জঘন্য' কাজ। এমনকি দ্বীন প্রচারে আল্লাহ্ নিজে ও মহিলাদের সিলেকশন করেন নি।
উপদেশ: যদি কোন মহিলারা ইসলামের জ্ঞান সহীহ ভাবে থাকে, তাহলে সে দ্বীন প্রচারের জন্য যা করতে পারে তাহলো:
১. তার কাছে আসলে শিখাতে পারে।
২. দ্বীনি বিষয়ে লিখতে পারে..
৩. নারীদের শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান করতে পারে ( স্বামীর অনুমতি ক্রমে)।
৪. মানুষকে ইসলামিক সহীহ বই উপহার দিতে পারে।
৫. স্যোসল নেটওয়ার্কে ইসলাম প্রচার করতে পারে। (তবে সতর্কতার সহীত,মহিলাদের প্রতি ই)
৬/ নিজেদের নিকস্থদের মধ্য আলোচনা করতে পারে। ইত্যাদি।
তবে আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা উপরের গুলো বলেননি। বলেছেন বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার।
এবার শুনুন আল্লাহ্ কি বলেছেন:
"হে নবী পত্নীগণ!
তোমরা অন্য নারীদের মত নও;
যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,
তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কু-বাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে।" (সূরা আহযাব-৩২)
আরো বলেন:
"তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।" (সূরা আহযাব-৩৩)
এছাড়াও আরো বলেন:
"আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানগর্ভ কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয় তোমরা সেগুলো স্মরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষনদর্শী, সর্ববিষয়ে খবর রাখেন।" (সূরা আহযাব-৩৪)
উপরের তিনটি আয়াত থেকে বুঝা গেল, প্রত্যেক মহিলারা যদি কোরআন পাঠ করে, আবৃত থাকে ও নিজের পরিবারকে সংশোধন করার চেষ্টা করে তাহলে নিজ হাতেই পৃথিবীর ৮০% এর বেশি ঘর সংশোধন হয়ে যাবে। এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে। মেয়েদের কে বলি, আপনি আপনার বাবা, স্বামী ও সন্তান দের বেলায় আরো যত্নশীল হোন, তাদের সত্যিকার অর্থেই আপনি তাদের ভাল বাসেন।
নিচের আয়াতটি দিয়েই শেষ করতে চাই,
আল্লাহ্ বলেন:
"নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ, মুসলমান নারী, ঈমানদার পুরুষ, ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ, অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ, সত্যবাদী নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ, ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ, বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী, রোযা পালণকারী পুরুষ, রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ, , যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী-তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার।"
(সূরা আহযাব-৩৫)
আল্লাহ্ সবাইকে কবুল করুক।আমীন।
আরো জানতে জয়েন করুন:
নিজ ঘরের বাহিরে নারীদের দ্বীনি তালিম করা বৈধ কিনা?
একটি এলাকায় নারীদের তালিম করার বর্নণা, ঠিক এমনটাই- একটি আলাদা ঘরে পূর্ণ পর্দার সাথে সপ্তাহে দুই দিন শুক্রবার ও সোমবার বাদ যোহর দ্বীনি বিষয় ও মাসআলা মাসায়েল আলোচনা করা হয়। একজন মহিলা মজলিসটি পরিচালনা করেন। এতে আশপাশের মহিলারাই অংশগ্রহণ করেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল দূরবর্তী এলাকার স্বল্প সংখ্যক মহিলাও অভিভাবকের অনুমতিক্রমে মাহরাম ছাড়া এসে থাকেন। পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে মাহরাম ছাড়া আসাকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলেছে। এখানে জানার বিষয় হলো তিনটি- ক) পার্শ্ববর্তী ও পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে পর্দার সাথে মহিলাদের মাহরাম ছাড়া আসাটা কেমন? খ) পর্দা রক্ষা করে কোনো মহিলা নিজ বাড়িতে তালীমের ব্যবস্থা করতে পারবে কি না?
ক) মহিলাদের শিক্ষার ব্যবস্থা প্রধানত নিজ ঘরেই হওয়া চাই। তারা মাহরাম পুরুষ যথা বাপ, দাদা, আপন ভাই, চাচা, মামার কাছে দ্বীন শিক্ষা করবে। হ্যাঁ, মাহরামদের মধ্যে যোগ্য আলেম না পাওয়া গেলে নিজ মহল্লার কোনো দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত দ্বীনদার মহিলার নিকট গিয়ে দ্বীন শিক্ষা করবে। তবে শর্ত হল, স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে পূর্ণ শরয়ী পর্দার সাথে আসা যাওয়া করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বেই ঘরে পৌঁছে যাবে। তাই কোনো মহল্লায় মহিলারা কর্তৃক আয়োজিত তালীমের মজলিসে অন্য নারীরা আসতে পারেন। তবে পাঁচ-ছয় মাইল দূর থেকে এভাবে তালীমে আসা সমীচীন নয়; তারা নিজেদের মহল্লায় তালীমের ব্যবস্থা করবেন এবং ঘরে বসে দ্বীনী কিতাবপত্র পাঠ করবেন। [সূরা আহযাব : ৩৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৬০]
খ) প্রত্যেক নর-নারীর প্রয়োজনীয় দ্বীন শিক্ষা করা ফরজ। আর পূর্ণ পর্দার সাথে অভিজ্ঞ শিক্ষিকা দ্বারা দ্বীনী শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রশংসণীয় ও ছওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য দ্বীনী তালীমের ব্যবস্থা করেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদীস শরীফে আছে, একদিন মহিলা সাহাবীগণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরয করলেন, পুরুষদের কারণে আমরা আপনার নিকটবর্তী হতে পারি না। তাই আপনি আমাদের জন্য আলাদা একটি দিন নির্ধারণ করুন। তিনি তাদের জন্য বিশেষভাবে এক দিনের ওয়াদা করলেন এবং বললেন, তোমরা অমুক দিন অমুকের বাড়িতে একত্র হও। এরপর তিনি সেদিন তাদের কাছে গিয়ে ওয়াজ করলেন। [সহীহ বুখারী ১/২০; উমদাতুল কারী ২/১২৩

মৃত ব্যক্তির প্রতি সওয়াব প্রেরণের মাসনূন পদ্ধতি সমূহ কি?

মৃত-ব্যক্তির প্রতি সাওয়াব প্রেরণের মাসনূন পদ্ধতি:

মৃত্যু পরবর্তী জীবনের সফলতা, মুক্তি, শান্তি ও নেয়ামত লাভের ইচ্ছা ও চেষ্টা সকল ধর্মের অনুসারিগণই করেন। এই জাতীয় সকল কর্ম একান্তই ধর্মীয় ও বিশ্বাসভিত্তিক। বিভিন্ন জাতির মধ্যে ধর্মহীনতা ও অজ্ঞানতার প্রসারের ফলে এ বিষয়ে অনেক কুসংস্কার ও উদ্ভট ধারণা বিরাজমান। যেমন, অনেক সমাজে মনে করা হয়, মৃতের জীবিত আত্মীয়স্বজনের দান, খাদ্য প্রদান বা কিছু অনুষ্ঠান পালনের উপরে মৃতব্যক্তির পারলৌকিক মুক্তি নির্ভরশীল।
ইসলামে এ সকল কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে মানুষের পারলৌকিক মুক্তি, শান্তি ও সফলতা নির্ভর করে তার নিজের কর্মের উপরে। সৎকর্মশীল মানুষের মৃত্যুর পরে বিশ্বের কোথাও কিছু না করা হলে, এমনকি তাঁর দেহের সৎকার করা না হলেও তাঁর কিছুই আসে যায় না। অপরদিকে জীবদ্দশায় যিনি শির্ক, কুফর, ইসলাম বিরোধিতা, ইসলামের বিধিনিষেধের ও ইসলামী কর্ম ও আচরণের প্রতি অবজ্ঞা, জুলুম, অত্যাচার, অবৈধ উপার্জন, ফাঁকি, ধোঁকা ইত্যাদিতে লিপ্ত থেকেছেন তার জন্য তার মৃত্যুর পরে বিশ্বের সকল মানুষ একযোগে সকল প্রকার ‘শ্রাদ্ধ’, অনুষ্ঠান, ‘প্রার্থনা’ ইত্যাদি করলেও তার কোনো লাভ হবে না।
তবে যদি কোনো ব্যক্তি বিশুদ্ধ ঈমানসহ ইসলামের ছায়াতলে থেকে সৎকর্ম করে মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে জীবিত ব্যক্তিগণ তাঁর জন্য প্রার্থনা করলে প্রার্থনার কারণে দয়াময় আল্লাহ তাঁর সাধারণ অপরাধ ক্ষমা করতে পারেন বা তাকে সাওয়াব ও করুনা দান করতে পারেন। এছাড়া এই ধরনের মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কোনো জীবিত মানুষ দান বা জনকল্যাণমূলক কর্ম করলে সেই কর্মের সাওয়াব করুনাময় আল্লাহ উক্ত মৃতব্যক্তিকে প্রদান করতে পারেন। এই ধরনের কর্মকে সাধারণত আরবিতে ‘‘ ঈসালে সাওয়াব ’’ ও ফারসিতে ‘‘সাওয়াব রেসানী’’ বলা হয় যার অর্থ: সাওয়াব পৌঁছানো।
তাহলে আমরা দেখছি যে, মানুষের মুক্তি নির্ভর করে মূলত নিজের কর্মের উপর। তবে বিশুদ্ধ ঈমানদার সৎ মানুষদের জন্য দু‘আও দান করা যায়। কুরআন কারীমে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, দু‘আ ও দান-সদকা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশ্যে জীবিত ব্যক্তির এ সকল কর্মের সাওয়াব তাঁরা লাভ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মৃতের দায়িত্বে হজ্জপালন বাকি থাকলে তা তাঁর পক্ষ থেকে পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এগুলি সাধারণ নির্দেশনা ও ফযীলতমূলক হাদীস। এখন আমাদের দেখতে হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এই ফযীলতের কর্মটি কী-ভাবে পালন করেছেন। অর্থাৎ এই কর্মটির ক্ষেত্রে ‘সুন্নাত’ কী তা জানতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, দু‘আ বা দান-সদকার জন্য কোনো প্রকার সমাবেশ, অনুষ্ঠান বা দিন তারিখের কোনো প্রকারের ফযীলত বা গুরুত্ব আছে - সে কথা কোনো হাদীসে কখনো বলা হয় নি। এছাড়া কুরআন খতম, কালেমা খতম ইত্যাদি ইবাদত পালন করে মৃত ব্যক্তিদের জন্য সাওয়াব দান করলে তাঁরা এ সকল ইবাদতের সাওয়াব পাবেন বলে কোনো হাদীসে কোনো প্রকারে বলা হয় নি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের যুগে কারো ইন্তেকালের পরে তার জন্য দু‘আ করার উদ্দেশ্যে পরবর্তী সময়ে কখনো কোনোভাবে তাঁরা জমায়েত হন নি। কারো মৃত্যু হলে নিকটাত্মীয়গণের জন্য তিন দিন শোক প্রকাশের বিধান রয়েছে ইসলামে। এই তিন দিনে সমাজের মানুষেরা মৃতের আত্মীয়গণকে সমবেদনা জানাতে ও শোক প্রকাশ করতে তাঁদের বাড়িতে আসতেন। এছাড়া মৃত ব্যক্তির জানাযার নামাযের ও দাফনের পরে আর কখনো তাঁকে কেন্দ্র করে ৩ দিনে, ৭ দিনে, ৪০ দিনে বা মৃত্যুদিনে বা অন্য কোনো সময়ে মাসিক, বাৎসরিক বা কোনোভাবে তাঁর কবরের কাছে, অথবা বাড়িতে বা অনুষ্ঠানকারীর বাড়িতে বা অন্য কোথাও কোনোভাবে তাঁরা কোনো অনুষ্ঠান করেননি বা কোনো জমায়েতও করেন নি।
মৃত ওলী, প্রিয়জন বা বুজুর্গের জন্য দু‘আ ও ঈসালে সাওয়াবের ক্ষেত্রে তাঁদের সুন্নাত ছিল ব্যক্তিগতভাবে দু‘আ করা এবং সুযোগ সুবিধা ও আগ্রহ অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের জন্য দান-সাদকা ও হজ্ব ওমরা বা কুরবানি করা। সুযোগমত কোন প্রকারের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তাঁদের কবর যিয়ারত করে তাঁদেরকে সালাম দেওয়া ও তাঁদের জন্য দু‘আ করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যুর পরে প্রায় একশত বৎসরের মধ্যে খুলাফায়ে রাশেদীন ও সাহাবীগণ একটিবারও তাঁর কুলখানী, ইসালে সাওয়াব, ওরস ইত্যাদি উপলক্ষ্যে তাঁর ওফাত দিনে বা অন্য কোনো দিনে, কোনো রকম দিন নির্ধারণ করে বা না-করে, মদীনায় বা অন্য কোথাও কখনোই কোনো অনুষ্ঠান, সমাবেশ, মাহফিল, খানাপিনা কিছুই করেন নি।
মৃত বুজুর্গ বা প্রিয়জনদের জন্য দু‘আ করার ও সাওয়াব প্রেরণের আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তা তাঁদের ছিল। এ বিষয়ের হাদীসগুলি তাঁরা জানতেন। এজন্য জমায়েত হওয়া, বিভিন্ন দিনে, নিয়মিত বা অনিয়মিত মৃতের কবরে, বাড়িতে বা অন্য কোথাও কোনো অনুষ্ঠান করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল। কিন্তু কখনই তাঁরা তা করেন নি। তাঁরা সকল প্রকারের জমায়েত, আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করেছেন। কোনো প্রকারের দিন তারিখ মাস বার পালন-করা বর্জন করেছেন। সকল প্রকারের কুলখানী, ওরস, জমায়েত বা অনুষ্ঠান তাঁরা বর্জন করেছেন। তাঁরা ব্যক্তিগত ও অনানুষ্ঠানিক দু‘আ ও দানকেই এ সকল ক্ষেত্রে একমাত্র পদ্ধতি বলে মনে করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে মৃত বুজুর্গ বা প্রিয়জনের জন্য সদা সর্বদা সুযোগ ও আবেগ অনুসারে দু‘আ করাই ছিল তাঁদের স্থায়ী ও নিয়মিত সুন্নাত। এছাড়া কোনো কিছুই তাঁরা নিয়মিত করেন নি। কারো পিতামাতা বা কোনো আপনজন মারা গেলে হয়ত মৃত্যুর পরেই তাঁদের জন্য কিছু দান করেছেন, জমি ওয়াকফ করেছেন বা অনুরূপ জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ করেছেন। কেউ বা তাঁদের হজ্ব বাকি থাকলে হজ্ব আদায় করে দিয়েছেন। ঈসালে সাওয়াব বা মৃতের জন্য সাওয়াব প্রেরণের জন্য সর্বদা দু‘আ করাই ছিল তাঁদের নিয়মিত সুন্নাত। এ ক্ষেত্রে নিম্নের হাদীসসমূহ প্রনিধানযোগ্য।
প্রথমত: ব্যক্তির মৃত্যুর পরও যে সব আমলের সাওয়াব সে অব্যাহতভাবে পেতে থাকে এবং জীবিতরাও মৃতের জন্য এ সকল কাজের আঞ্জাম দিতে পারে এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে –
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﺍﻟْﺈِﻧْﺴَﺎﻥُ ﺍﻧْﻘَﻄَﻊَ ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﻤَﻠُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻣِﻦْ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٍ ﺇِﻟَّﺎ ﻣِﻦْ ﺻَﺪَﻗَﺔٍ ﺟَﺎﺭِﻳَﺔٍ ﺃَﻭْ ﻋِﻠْﻢٍ ﻳُﻨْﺘَﻔَﻊُ ﺑِﻪِ ﺃَﻭْ ﻭَﻟَﺪٍ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻟَﻪُ »
‘‘আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, মানুষ যখন মারা যায় তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার সকল আমলই বন্ধ হয়ে যায়।
১. সাদাকায়ে জারিয়া,
২. মানুষ উপকৃত হয় এমন ‘ইলম এবং
৩. নেক সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করে।’’[1]
অপর এক হাদীসে এসেছে –
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺃُﻣَﺎﻣَﺔَ ﺍﻟْﺒَﺎﻫِﻠِﻲِّ ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﺃَﺭْﺑَﻌَﺔٌ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺃُﺟُﻮﺭُﻫُﻢْ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕِ ﻣُﺮَﺍﺑِﻂٌ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﻋَﻤَﻠًﺎ ﺃُﺟْﺮِﻱَ ﻟَﻪُ ﻣِﺜْﻞُ ﻣَﺎ ﻋَﻤِﻞَ ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺗَﺼَﺪَّﻕَ ﺑِﺼَﺪَﻗَﺔٍ ﻓَﺄَﺟْﺮُﻫَﺎ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺟَﺮَﺕْ ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺗَﺮَﻙَ ﻭَﻟَﺪًﺍ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻓَﻬُﻮَ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻟَﻪُ»
‘‘আবু উমামাহ আল বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, চারটি বিষয়ের সাওয়াব প্রাপ্তি মানুষের মৃত্যর পরও অব্যাহত থাকে।
১. আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত প্রহরী,
২. ব্যক্তির এমন (মাসনূন) আমল যা অন্যেরাও অনুসরণ করে,
৩. এমন সাদাকাহ যা সে স্থায়ীভাবে জারী করে দিয়েছে,
৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে তার জন্য দু‘আ করে।’’[2]
দ্বিতীয়ত: সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাঁদের মৃত পিতা-মাতার প্রতি সাওয়াব প্রেরণের জন্য কী ব্যবস্থা প্রহণ করতেন নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে আমরা আরো স্পষ্ট নির্দেশনা পেতে পারি:
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ‏« ﺇِﻥَّ ﺃَﺑِﻲ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﺗَﺮَﻙَ ﻣَﺎﻟًﺎ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻮﺹِ ﻓَﻬَﻞْ ﻳُﻜَﻔِّﺮُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻥْ ﺃَﺗَﺼَﺪَّﻕَ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻌَﻢْ »
‘‘আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জানতে চাইলেন যে, আমার পিতা কিছু সম্পদ রেখে মারা গেছেন কিন্তু তিনি কোনো ওসীয়ত করে যান নি। আমি কি তাঁর জন্য কিছু সাদাকাহ করতে পারি; যাতে তাঁর গুনাহের কাফফারা হতে পারে ? তিনি বললেন, হ্যা পার।’’[3]
অপর এক হাদীসে এসেছে :
ﻋَﻦْ ﺳَﻌْﺪِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﺒَﺎﺩَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﻣَﺎﺗَﺖْ ﺃَﻓَﺄَﺗَﺼَﺪَّﻕُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻧَﻌَﻢْ ﻗُﻠْﺖُ ﻓَﺄَﻱُّ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻘْﻲُ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ»
‘‘সা‘দ ইবন ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার আম্মা মারা গেছেন। আমি কি তাঁর জন্য কিছু সাদাকাহ করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পার। আমি বললাম, কোন সাদাকাহ উত্তম? তিনি বলরেন, পানি পান করানো (অর্থাৎ কূপ খনন করে দেয়া)।’’[4]
অপর এক হাদীসে এসেছে :
» ﺃَﻥَّ ﺳَﻌْﺪَ ﺑْﻦَ ﻋُﺒَﺎﺩَﺓَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻨْﻪ ﺗُﻮُﻓِّﻴَﺖْ ﺃُﻣُّﻪُ ﻭَﻫُﻮَ ﻏَﺎﺋِﺐٌ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺃُﻣِّﻲ ﺗُﻮُﻓِّﻴَﺖْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻏَﺎﺋِﺐٌ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺃَﻳَﻨْﻔَﻌُﻬَﺎ ﺷَﻲْﺀٌ ﺇِﻥْ ﺗَﺼَﺪَّﻗْﺖُ ﺑِﻪِ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻧَﻌَﻢْ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﺃُﺷْﻬِﺪُﻙَ ﺃَﻥَّ ﺣَﺎﺋِﻄِﻲَ ﺍﻟْﻤِﺨْﺮَﺍﻑَ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ »
‘‘সা‘দ ইবন ‘উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মা তার অনুপস্থিতিতে মারা যান। পরে তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার অনুপস্থিতিতে আম্মা মারা গেছেন। আমি যদি তাঁর জন্য কিছু সাদাকাহ করি তবে কি তা তাঁর উপকারে আসবে ? তিনি বললেন, হ্যা। তিনি বললেন, আপনি সাক্ষী, আমার মিখরাফ নামক বাগানটি তাঁর জন্য সাদাকাহ করলাম।’’[5]
তৃতীয়ত: মৃত্যুর পরও পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কিছু দায়িত্বের কথা নিম্নের হাদীসগুলো থেকে জানতে পারি :
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻣَﻦْ ﻣَﺎﺕَ ﻭَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻِﻴَﺎﻡٌ ﺻَﺎﻡَ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻟِﻴُّﻪُ »
‘‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রোজা আদায় না করে মারা গেল, তার পক্ষ থেকে তার ওলী (দায়িত্বশীল) সে রোজা আদায় করবে।’’[6]
অপর এক হাদীসে এসেছে :
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺃُﺳَﻴْﺪٍ ﻣَﺎﻟِﻚِ ﺑْﻦِ ﺭَﺑِﻴﻌَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﺑَﻴْﻨَﻤَﺎ ﻧَﺤْﻦُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀَﻩُ ﺭَﺟُﻞٌ ﻣِﻦْ ﺑَﻨِﻲ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺑَﻘِﻲَ ﻣِﻦْ ﺑِﺮِّ ﺃَﺑَﻮَﻱَّ ﺷَﻲْﺀٌ ﺃَﺑَﺮُّﻫُﻤَﺎ ﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﻮْﺗِﻬِﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻧَﻌَﻢِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﻭَﺍﻟِﺎﺳْﺘِﻐْﻔَﺎﺭُ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺇِﻳﻔَﺎﺀٌ ﺑِﻌُﻬُﻮﺩِﻫِﻤَﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﻮْﺗِﻬِﻤَﺎ ﻭَﺇِﻛْﺮَﺍﻡُ ﺻَﺪِﻳﻘِﻬِﻤَﺎ ﻭَﺻِﻠَﺔُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻢِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻟَﺎ ﺗُﻮﺻَﻞُ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﻬِﻤَﺎ »
‘‘আবু উসায়দ মালিক ইবন রবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম, এমতাবস্থায় বনী সালামার এক ব্যক্তি এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর এমন কোন সদাচরণ কি বাকী আছে যা আমি তাঁদের সাথে করতে পারি ? তিনি বললেন, হ্যা, তাঁদের জন্য দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের কৃত প্রতিশ্রুতিগুলো পূর্ণ করা, তাঁদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করা এবং সে আত্মীয়গুলো রক্ষা করা, যেগুলো শুধু তাঁদের বন্ধনের কারনেই রক্ষা করা হয়ে থাকে।’’[7]
অপর এক হাদীসে এসেছে :
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺠَّﺎﺝِ ْﺑﻦِ ﺩِﻳْﻨَﺎﺭٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ُﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ‏« ﺃَﻥَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒِﺮِّ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﺒِﺮِّ ﺃَﻥْ ﺗُﺼَﻠِّﻲ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﻣَﻊَ ﺻَﻼَﺗِﻚَ ﻭَﺃَﻥْ ﺗَﺼُﻮْﻡَ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻣَﻊَ ﺻِﻴَﺎﻣِﻚَ ﻭَﺃَﻥْ ﺗُﺼَﺪِّﻕَ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﻣَﻊَ ﺻَﺪَﻗَﺘِﻚَ
‘‘হাজ্জাজ ইবন দীনার হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (পিতা-মাতার প্রতি জীবিতাবস্থায়) সদাচরণের পর (মৃত্যু পরবর্তী) সদাচরণ হলো - তোমার নামাযের সাথে তাদের পক্ষ থেকেও নামায পড়া, রোজার সাথে তাদের পক্ষ থেকেও রোজা রাখা এবং তোমার সাদাকার সাথে তাদের জন্যও কিছু সাদাকাহ করা।’’[8] ( বিঃ দ্রঃ- হাদিসটি সহীহ না - শায়খ আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী )
অপর এক হাদীসে এসেছে :
ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀَ ﻗَﺎﻝَ ‏« ﻳُﻘْﻀَﻰ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖِ َﺃْﺭَﺑﻊٌ َﺍﻟْﻌِﺘَﻖُ ﻭَﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔُ ﻭَﺍﻟْﺤَﺞُّ ﻭَﺍﻟْﻌُﻤْﺮَﺓُ » .
‘‘আতা (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, মৃতের পক্ষ হতে চারটি কাজ করণীয়: গোলাম আযাদ করা, সাদাকাহ করা, হজ্জ করা এবং ওমরা করা।’’[9]
এছাড়াও সাদাকার পুরস্কার সম্পর্কে এক হাদীসে এসেছে :
« ﻇِﻞُّ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺻَﺪَﻗَﺘُﻪُ »
‘‘সাদাকাহ কিয়ামতের দিন মু‘মিনের ছায়া হবে।’’[10]
• উপরোক্ত হাদীসসমূহের সারসংক্ষেপ যা দাড়ায় তা হলো :
১. মৃত্যুর পরও মৃত ব্যক্তি পাঁচটি কাজের সাওয়াব পেতে থাকে। কাজগুলো হলো : সাদাকায়ে জারিয়া করে যাওয়া, উপকারী ইলম রেখে যাওয়া, এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া যে তার জন্য দু‘আ করবে, জীবিত থাকাকালে আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারা দেয়া এবং মৃত ব্যক্তির এমন (মাসনূন) আমল যা পরবর্তীতে অন্যরা অনুসরণ করে।
২. সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য সাদাকায়ে জারিয়ার ব্যবস্থা করতেন। যেমন- ফসলের বাগান ওয়াকফ করতেন, পানির কূপ খনন করে দিতেন ইত্যাদি।
৩. তাঁদের রোজা বাকী থাকলে তাঁদের পক্ষ হতে তাঁরা তা আদায় করতেন।
৪. তাঁরা তাঁদের জন্য দু‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তাঁদের কৃত প্রতিশ্রুতিগুলো পূর্ণ করতেন, তাঁদের বন্ধু-বান্ধবদের সম্মান করতেন এবং সে আত্মীয়গুলোও রক্ষা করতেন, যেগুলো তাঁদের বন্ধনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
৫. তাঁরা তাঁদের পক্ষ হতে গোলাম আযাদ করতেন, হজ্জ করা বাকী থাকলে হজ্জ এবং ওমরা করতেন। এ ছাড়াও তাঁরা তাঁদের জন্য নফল নামায এবং নফল রোজাও করতেন বলে জানা যায়।
এখন আমাদের সমাজে মৃতব্যক্তিদের জন্য দু‘আর উদ্দেশ্যে অথবা তাদের জন্য দান-সদকার সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা জমায়েত হই ও অনুষ্ঠান করি। এ সকল অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে খেলাফে-সুন্নাত বা সুন্নাত বিরোধী। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, কেউ যদি পূর্ণ সুন্নাত অনুযায়ী অনানুষ্ঠানিকভাবে দান-সাদকা ও দু‘আ করেন তাহলে অনেক মুসলিম তাঁর কর্মকে খুবই অপছন্দ করবেন। এভাবে তাঁরা ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতকে’ অপছন্দ করছেন।
• আমাদের সমাজের মুসলিমগণ কিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত অপছন্দ ও অবহেলা করেন তার কিছু নমুনা এখানে আলোচনা করছি :
(১). দু‘আকে অবহেলা করা ও আনুষ্ঠানিকতাকে উত্তম মনে করা :
আমরা দেখলাম যে, মৃত বুজর্গ বা আপনজনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে সর্বদা দু‘আ করাই ছিল তাঁদের একমাত্র নিয়মিত সুন্নাত। অপরদিকে আমরা অনেক সময় ‘‘দু‘আ’’ করাকে তত গুরুত্ব প্রদান করি না। চিন্তা করি দু‘আতে আর কি হবে, নিজে কিছু নেক কাজ করে সেই কাজের সাওয়াব তাঁদেরকে প্রদান করতে হবে। চিন্তাটি সঠিক নয়। মৃত মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের দু‘আই সবচেয়ে বড় দান। দু‘আর বিনিময়ে আল্লাহ তাঁদেরকে অফুরন্ত সাওয়াব ও রহমত প্রদান করেন। মৃতদের জন্য কুরআনে অনেক দু‘আ উল্লেখিত হয়েছে।
এক্ষেত্রে দু‘আর জন্য তাঁরা কখনো কোনো প্রকার অনুষ্ঠান করেন নি। আমরা অনুষ্ঠানহীন ব্যক্তিগত দু‘আর কোনো গুরুত্ব আছে বলে মনে করি না। অন্তত ব্যক্তিগত দু‘আর চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু আলেম ও বুজুর্গকে ডেকে মৃতের জন্য দু‘আ করাকে উত্তম মনে করি। অথচ সাহাবীগণকে দেখুন। সাইয়্যেদুল মুরসালীন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মধ্যে রয়েছেন। অথচ ২৩ বৎসরের নবুয়তী জিন্দেগিতে একদিন একজন সাহাবীও এসে বললেন না, হুজুর আমার পিতামাতা বা কোনো বুজুর্গের জন্য দু‘আর মাজলিস করেছি, আপনি যেয়ে একটু দু‘আ করে দেবেন। অথবা মসজিদে নববীতেই আজ নামাযের পরে সবাইকে নিয়ে আপনি একটু দু‘আ করে দেবেন। এরূপ একটি ঘটনাও দেখতে পাবেন না। অনুরূপভাবে পরবর্তী প্রায় ২ শত বৎসরে সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের যুগেও এই ধরনের কোনো ঘটনা দেখা যায় না।
(২) কুরআন খতম, কালেমা খতম ইত্যাদিকে গুরুত্ব প্রদান ও উত্তম ভাবা :
কুরআন খতম, কালেমা খতম ইত্যাদিকে আমরা দান ও দু‘আর চেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করি। অপরদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ কখনো মৃতের জন্য কুরআন খতম, কালেমা খতম ইত্যাদি অনুষ্ঠান করেন নি। এগুলির সাওয়াব মৃতব্যক্তি পাবেন বলে কোনো হাদীসে বলা হয় নি। তবে, অনেক আলেম বলেছেন যে, যেহেতু দান, দু‘আ, হজ্ব ইত্যাদির সাওয়াব মৃতব্যক্তি পাবেন বলে হাদীসে বলা হয়েছে, সেহেতু আমরা আশা করতে পারি যে, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর, তাসবীহ ইত্যাদি ইবাদতের সাওয়াবও তাঁরা পাবেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, কুরআন কারীম পূর্ণ পাঠ করা বা খতম করা একটি মাসনূন ইবাদত হলেও ‘‘কালেমা খতম’’ কোনো মাসনূন ইবাদত নয়। ‘‘কালেমা খতম’’, ‘‘দু‘আ ইউনূস খতম’’, ‘‘খতমে খাজেগান’’ ইত্যাদি সবই বানোয়াট ‘‘খতম’’। কালেমা বা ‘‘লাইলাহা ইল্লল্লাহ’’ একটি মাসনূন যিকর এবং শ্রেষ্ঠ যিকর। এই যিকর যতবার করা হবে তত বেশি সাওয়াব পাওয়া যাবে।[11] এক লক্ষ বা সোয়া লক্ষ বার পাঠ করলে বিশেষ কোনো সাওয়াব আছে বলে মনে করা খেলাফে-সুন্নাত।
অন্য অনেক আলেম বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দান, দু‘আ ইত্যাদির কথা বললেন, অথচ কুরআন খতম বা যিকর-তাসবীহ ইত্যাদির সাওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছাবে বলে জানান নি বা উম্মতকে এগুলি পালন করে মৃতদের জন্য সাওয়াব রেসানী করতে শেখান নি। এখন আন্দাজে এরূপ আশা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষাকে অপূর্ণ বলে দাবি করা হবে।
সর্বাবস্থায়, আমরা বুঝতে পারছি যে, আমরা যদি মৃত বুজুর্গ বা আপনজনের জন্য দান করি বা দু‘আ করি তাহলে তাঁরা তার সাওয়াব পাবেন বলে নিশ্চিত; কারণ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তা বলেছেন। আর কুরআন খতম, কালেমা খতম ইত্যাদির সাওয়াব পাবেন বলে বড়জোর আশা করা যায়।
যে সকল আলেম কুরআন খতম বা তাসবীহ-তাহলীলের সাওয়াব মৃত ব্যক্তি পেতে পারেন বলে আশা করেছেন তাঁরা বলেছেন যে, যদি কেউ শরীয়ত-সম্মতভাবে ইখলাসের সাথে এগুলি পাঠ করে তাহলেই সাওয়াবের আশা করা যায়। আর সে যদি নিজেই এমনভাবে পাঠ করে যাতে তারই কোনো সাওয়াব হবে না, তাহলে সে আর কী পাঠাবে! এজন্য কোনো মুসলিম যদি তাঁর মৃত পিতামাতা, স্বজন বা উস্তাদ-বুজুর্গের জন্য মনের ইখলাস ও আবেগ নিয়ে কুরআন পাঠ করে তিলাওয়াতের সাওয়াব তাঁদেরকে প্রদানের নিয়্যাত করে, তাহলে হয়ত তাঁরা পেতেও পারেন। কিন্তু কেউ যদি টাকার বিনিময়ে, খাদ্যের আশায় বা লোক দেখানোভাবে এসকল ইবাদত করে, তাহলে তার তো কোনো সাওয়াবই হবে না, উপরন্তু সে গোনাহগার হবে। এক্ষেত্রে সাওয়াব পাঠানোর চিন্তা বাতুলতা।
এখন আমাদের সমাজের মুসলিমগণের অবস্থা চিন্তা করুন। সকলেই দান ও দু‘আর চেয়ে এ সকল খতমকে গুরুত্ব বেশি দিচ্ছেন। প্রয়োজনে অনেক টাকাপয়সা খরচ করে এ সকল খতমের আয়োজন করছেন। কিন্তু তিনি খতম ছাড়া নিঃশর্তভাবে এই টাকাগুলি হাফেজ বা খতম পাঠকারীদেরকে দিতে রাজি নন। তিনি সকল দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কেউ যদি মৃতের ‘‘ঈসালে সাওয়াব ’’ বা সাওয়াব প্রেরণের উদ্দেশ্যে কোনো হাফেজ, আলেম, এতিম, বিধবা, দরিদ্র বা অন্য কাউকে হাদিয়া, সাহায্য বা দান হিসাবে কিছু টাকা দেন, তাহলে হয়ত তা দান হিসাবে আল্লাহর কাছে গৃহীত হতে পারে ও মৃত ব্যক্তি সাওয়াব পেতে পারেন। কিন্তু তিনি এদেরকে দিয়ে ‘‘খতমের কাজ ’’ আদায় করে এদেরকে পারিশ্রমিক দান করেন। এ ভাবে তিনি:
প্রথমত, একটি খেলাফে-সুন্নাত কাজ করছেন।
দ্বিতীয়ত, দু‘আ ও দানের সুন্নাত পরিত্যাগ করে বা অপছন্দ করে গোনাহগার হচ্ছেন।
তৃতীয়ত, টাকা বা খাদ্যের আশায় যারা খতম পড়ছেন তাঁরা যেহেতু কোনো সাওয়াবই পাচ্ছেন না, সেহেতু মৃতের জন্য কিছু লাভের ক্ষীণতম আশাও নেই।
চতুর্থত, এভাবে যাদেরকে দিয়ে খতম পড়ালেন তাঁরাও গোনাহগার হলেন। এভাবে সুন্নাত ছেড়ে সকল দিক থেকেই তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হলেন। অথচ তিনি যদি এতকিছু না করে নিজে দু‘আ করতেন এবং খরচের টাকাগুলি দান করতেন আর সেটার অসিলায় মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করতেন, তাহলে সুন্নাত অনুসারে কর্মের জন্য নিজেও সাওয়াব পেতেন, আর দু‘আ ও দানের সাওয়াব মৃতব্যক্তি পেতেন।
আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, আমরা কুরআন পাঠ করতে পারি না বলে কি পিতামাতাকে কিছু দিতে পারব না? আমি বলেছি, দান করুন তাহলেই তো হলো। কিন্তু তাঁদের তৃপ্তি হয় না। মনে হয় তারা চিন্তা করেন, হাফেজদেরকে দিয়ে কিছু কুরআন না পড়িয়ে শুধু শুধু এতগুলি টাকা তাদেরকে দিয়ে কী হবে?
(৩). দানের ক্ষেত্রে সুন্নাত পদ্ধতির চেয়ে আনুষ্ঠানিকতাকে গুরুত্ব প্রদান :
দানের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের সুন্নাত হলো অনানুষ্ঠানিক দান। জমি ওয়াকফ, কূপ খনন ইত্যাদি। কিন্তু আমরা কখনোই এই প্রকার দানে তৃপ্ত হতে পারি না। আপনি যতই বুঝান-না কেন, যত সুন্নাতের কথাই বলুন-না কেন, মনের চিন্তা একটিই - কিছু একটু না-করলে কিভাবে হয়! শ্রা্দ্ধ জাতীয় একটা অনুষ্ঠান করাই দরকার। সমাজের মানুষেরও একই কথা : বাপটা মরে গেল, কিছুই করল না! কিছু অর্থ ‘‘শ্রাদ্ধ’’।
অনেক মানুষকে বুঝিয়েছি, আপনারা খানাপিনা করানোর টাকা দিয়ে পিতামাতার বা বুজুর্গের জন্য একটি মসজিদ, মাদ্রাসা, দাতব্য হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র বা এতিমখানা তৈরি করুন বা শরীক হোন। খাবার পানি বা সেচের জন্য গভীর বা অগভীর নলকূপ স্থাপন করে জনগণ বা চাষীদের জন্য ওয়াকফ করুন। না হলে টাকাগুলি কোনো দরিদ্র, বিধবা, এতিম, কন্যাদায়গ্রস্থ, অসুস্থ বা অনুরূপ কাউকে দান করুন। এভাবে আপনি সুন্নাতের মধ্যে থাকবেন, আপনি ও আপনার মৃত আপনজন বা ওলী-বুজুর্গ অফুরন্ত সাওয়াব ও রহমত লাভ করবেন।
কেউ বুঝতে চান না। কেউ এসকল খাতে কিছু ব্যয় করলেও ‘‘কিছু একটা’’ না করে পারেন না। অথচ এই ‘‘কিছু’’ বা খানাপিনা শুধু সুন্নাত বিরোধীই নয়, এতে নিয়্যাত, পরিবেশনা, সামাজিকতা ইত্যাদি করাণে সাওয়াবের চেয়ে গোনাহই বেশি হয়। সামাজিক আচার কিভাবে আমাদের মনমগজকে কব্জা করেছে এবং এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের সুন্নাতকে মেরে ফেলেছে তা চিন্তা করুন।
(৪). এ সকল কাজের জন্য কোনো দিন বা মৃত্যু দিনকে নির্ধারণ করা :
মৃত স্বজন বা বুজুর্গের জন্য দু‘আ ও সাওয়াব প্রেরণ অর্থাৎ ঈসালে সাওয়াব বা সাওয়াব রেসানীর জন্য হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য অমুসলিম সম্প্রদায়ের অনুকরণে আরেকটি বিষয় আমাদের মধ্যে প্রবেশ করেছে, তা হলো এসকল কাজের জন্য দিন নির্ধারণ। মৃত্যুর পরে প্রথমত ৩য়, ৭ম, ৪০তম বা এই জাতীয় দিনে অনুষ্ঠান করা। পরে মৃত্যু দিনে অনুষ্ঠান করা।
আগেই বলেছি, নেককার বা বদকার, স্বজন বা বুজুর্গ কারো জানাযা ও দাফনের পরে দু‘আ বা খানাপিনার জন্য কোনো প্রকার অনুষ্ঠান করাই সুন্নাত বিরোধী কাজ। আর এ সকল অনুষ্ঠানের জন্য এভাবে দিন নির্ধারণ অতিরিক্ত একধাপ সুন্নাত বিরোধিতা।
কুলখানী, দু‘আর মাহফিল, খতম, ঈসালে সাওয়াব, সাওয়াব রেসানী, ওরস ইত্যাদি যে নামেই তা করা হোক সবই সুন্নাত বিরোধী কর্ম। এগুলি করার অর্থ হলো এ সকল বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের সুন্নাতকে অপছন্দ করা।
(৫). সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী রহ. এর নসীহত :
সমাজের অপ্রতিরোধ্য চাপের কাছে নতি স্বীকার করে উপরের সকল খেলাফে-সুন্নাত কর্মকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, বিভিন্ন ওজরখাহি করে, পূর্বে আলোচিত বিভিন্ন প্রকারে অপ্রাসঙ্গিক আয়াত ও হাদীসকে ‘‘অকাট্য দলিল’’ হিসাবে পেশ করে ‘‘জায়েয’’ বলেছেন কেউ কেউ। তবে কেউ বলেন নি যে, এগুলি সুন্নাত বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ কখনো এগুলি করেছেন।
অপরদিকে অনেক আলেম সমাজের কাছে নতি স্বীকার করতে চান নি। তাঁরা চেষ্টা করেছেন যেন আমাদের সমাজ অন্য সকল বিষয়ের মতো এ বিষয়েও অবিকল সুন্নাত অনুযায়ী চলেন। যাতে সুন্নাত জীবিত হয় এবং মুসলিমগণ নিশ্চিতরূপে সাওয়াব ও বরকত লাভ করেন।
এ সকল আলেম ও বুজুর্গগণের একজন সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী (রহ.)। তিনি এ বিষয়ে আলোচনা কালে বলেন: এখন কেউ যদি প্রচলিত রুসূম অনুযায়ী এ সকল ফাতেহা, ইসালে সাওয়াব, কুলখানী, ওরস ইত্যাদি পালন না-করেন তাহলে সুন্নাত বিষয়ে অজ্ঞ মানুষেরা বলবে যে, তিনি আল্লাহর ওলী ও বুজুর্গগণের ভক্তি করেন না, তাঁদের হক্ক আদায় করেন না বা তাঁদের প্রতি আদব রক্ষা করেন না। তার এই চিন্তার মাধ্যমে তিনি বলতে চান যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আহলে বাইত, সাহাবীগণ, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী ও অন্যান্য নেককার বুজুর্গগণ, যাঁরা এ সকল রেওয়াজ সমাজে প্রচলিত হওয়ার আগে চলে গিয়েছেন তাঁরা সবাই তাঁদের পূর্ববর্তী বুজুর্গ ও আউলিয়াগণের প্রতি বেয়াদবী করেছেন। উপরন্তু আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পূর্বপুরুষ ও আল্লাহর খলীল ইবরাহীম এর প্রতিও একই রকম বেআদবী করেছেন বলে দাবি করা হবে। নাঊযু বিল্লাহ!! নাঊযু বিল্লাহ!!!
এ বিষয়ে তিনি কিছু মূল্যবান নসীহত করেছেন :
প্রথমত, সকল মৃত বুজুর্গ ও আপনজনের ক্ষেত্রেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের সুন্নাত হুবহু পালন করা ও প্রতিষ্ঠা করাই সর্বোত্তম। এজন্য কাফন, দাফন, জানাযা ও মাসনূন তিন দিনের শোক প্রকাশের বাইরে কোনো প্রকারের রুসূম না-মানা প্রয়োজন। বিবাহের ওলীমা ছাড়া সকল প্রকার খানাপিনার আয়োজন ও রুসূম রেওয়াজ পরিত্যাগ করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কেই পেশওয়া, মুরববী ও আদর্শ মানতে হবে। তাঁর আদর্শকে সামনে রেখে পারসিক, রোমীয়, মধ্য এশিয়, ভারতীয় ইত্যাদি সকল রুসূম রেওয়াজ পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ এগুলি সবই তাঁর ও তাঁর সাহাবীগণের প্রচলিত রীতি ও তাঁদের তরীকার অতিরিক্ত কর্ম। এগুলি বর্জন করতে হবে এবং এগুলির প্রতি নিজের ঘৃণা ও না-রাজি প্রকাশ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, এ সকল রুসূমাতের মধ্যে নিয়্যাতগত ও কর্মগত অনেক গোনাহের কাজ রয়েছে, যার ফলে কেয়ামতের দিন এ সকল রুসূমাত পালনকারীকে কঠিন বিপদে পড়তে হবে। কেউ যদি একান্তই খালেস নিয়্যাতে, খালেসভাবে কোনোরকম দিনতারিখ স্থান বা পদ্ধতি নির্ধারণ না-করে কিছু খাওয়া দাওয়া করান তাহলে হয়ত তিনি সাওয়াব পাবেন। তবে তাকে মনে রাখতে হবে যে, মৃতকে সাওয়াব পাঠনো খানাপিনা করানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দু‘আ ও দানই মৃতের সাওয়াব পাঠানোর সুন্নাত-সম্মত পদ্ধতি। খানাপিনা করানো দানের একটি প্রকরণ মাত্র। সাহাবীগণ এক্ষেত্রে এই প্রকরণ ব্যবহার করেন নি, বরং কূপ খনন, জমি বা বাগান ওয়াকফ করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে দানের সাওয়াব প্রেরণ করেছেন। আমাদেরও এ সকল পদ্ধতিতে দান করা উচিত।
তৃতীয়ত, যদি আমরা এ সকল খেলাফে-সুন্নাত ও বিদ‘আত রুসূম রেওয়াজ পরিত্যাগ করতে না-পারি, তাহলে অন্তত সুন্নাতকে পূর্ণাঙ্গ মনে করতে হবে। কেউ যদি অবিকল সুন্নাত পদ্ধতিতে হুবহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণের মতো দু‘আ ও দানে রত থাকেন এবং সকল প্রকার কুলখানী, ইসালে সাওয়াব, ওরশ ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিত্যাগ করেন, তাহলে তাঁকে উত্তম ও পরিপূর্ণ সুন্নাতের অনুসারী বলে মহববত করতে হবে। এভাবে সকল বিষয়ে সুন্নাতকে পরিপূর্ণ ও আমাদের রুসূমকে খেলাফে সুন্নাত ও বিশেষ প্রয়োজনে বা বাধ্য হয়ে করছি বলে মনে করতে হবে।[12]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সকল বিষয়ে সুন্নাত তরীকা অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। আমীন !!
সম্পাদকের কথা:
মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় কাজসমূহের দ্বারা তার কাছে কী সাওয়াব পৌঁছে না কি সেটার অসীলা দ্বারা দো‘আ করা হলে সেটা কাজে লাগে এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ইমামগণের মধ্যে দু’টি মত পাওয়া যায়।
এক. শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা, ইবনুল কাইয়েম রহ. সহ একদল আলেম মনে করেন যে তাদের কাছে সাওয়াব পৌছে। এ ব্যাপারে তারা তাদের গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
দুই. পক্ষান্তরে অধিকাংশ আলেম মনে করেন, সওয়াব কেউ কাউকে দিতে পারে না, বরং উচিত হবে সৎকাজ করে সেটার অসীলা দিয়ে দো‘আ করা। শাইখুল আলবানী রহ. সহ অনেক বিদগ্ধ আলেম এমতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
এ দ্বিতীয় মতটিকে আমি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের লেখককে মনে হচ্ছে প্রথম মতের প্রবক্তা। এ ব্যাপারে আমি তার মতামতের উপর হস্তক্ষেপ না করে বিষয়টি বর্ণনা করে দেওয়া যুক্তিযু্ক্ত মনে করেছি।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতভেদটি দ্বান্দ্বিক নয় বরং প্রকারান্তিক। কারণ, সবাই মনে করেন যে
শরী‘আতে অনুমোদিত নয় এমন কোনো কাজ করলে সেটা বিদ‘আত হবে। যেমন উরস, চল্লিশা (চেহলাম), পঞ্চ দিনের অনুষ্ঠান, কিংবা খতমে তাহলীল, খতমে খাজেগান, নির্দিষ্ট দিনে দো‘আ অনুষ্ঠান, কুলখানি ইত্যাদি সকল বিষয় বিদ‘আত ও পথভ্রষ্টতা। এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই।
আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাতের উপর পরিপূর্ণভাবে আমল করার তৌফিক দিন। আমীন।
[সম্পাদক]
_______________________________________________________________________________________
[1] মুসলিম, কিতাবুল ওয়াসিয়্যাহ, হাদীস নং ৩০৮৪।
[2] আহমদ, বাকী মুসনাদিল আনসার, হাদীস নং ২১২১৭। ৫/২৬০। সহীহ লিগাইরিহী।
[3] মুসলিম, কিতাবুল ওসীয়্যাহ, হাদীস নং ৩০৮১।
[4] নাসাঈ, কিতাবুর ওয়াসায়া, হাদীস নং ৩৬০৪।
[5] বুখারী, কিতাবুর ওয়াসায়া, হাদীস নং ২৫৫১।
[6] মুসলিম, কিতাবুস-সাওম, হাদীস নং ১৮১৬।
[7] ইবন মাজাহ, কিতাবুল আদব, হাদীস নং ৩৬৫৪।
[8] মুসান্নিফু ইবনি আবী শায়বা, ৩খ, ৫৯পৃ, হাদীস নং ১২০৮৪।
[9] মুসান্নিফু ইবনি আবী শায়বা, ৩খ, ৫৯পৃ, হাদীস নং ১২০৮৫।
[10] আহমদ, বাকী মুসনাদিল আনসার, হাদীস নং ২২৩৯২।
[11] কালেমার যিকিরের ফযীলত সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন: রাহে বেলায়াত, পৃ: ৫০-৫৯।
[12] সেরাতে মুস্তাকীম (উর্দ্দু তরজমা), পৃ: ৫০-৭৫।
* খুতবাহ খানা ড. আ.ন,ম. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের অমর গ্রন্থ ‘এহ্ইয়াউস-সুনান’ অবলম্বনে লিখিত।
লেখক: আ.শ.ম শোয়াইব আহমাদ
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...