Monday, May 22, 2023

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ 

১। 

মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে -

দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস প্রতিটি ৩বার করে পড়ে ডান কানে হালকা করে ফুঁ দিয়ে অতঃপর সমস্ত শরীরে ফুঁ দিয়ে দিতে হবে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায়। 

আর ঘুমাতে যাওয়ার সময় এগুলো পড়েই নিজ দুই হাতের তালু একত্র করে ফুঁ দিয়ে বাচ্চার শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত হাত দিয়ে মুছে/মাসেহ করে দিতে হবে এবং নিজের উপরেও প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ডান হাত দিয়ে প্রথমে মাথা থেকে সামনের দিকে পা পর্যন্ত আবার মাথা থেকে পেছনের দিকে পা পর্যন্ত। অতঃপর দুই হাত দিয়ে মাথা থেকে দুই পার্শ্ব একই সাথে কিংবা আলাদা ভাবে মুছে দিতে হবে। 

২। 

এই দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ৩ বার করে পড়ে ফুঁ দিয়ে দিতে হবেঃ 

রছুল ছঃ হাসান ও হুসাইন রঃ -এর জন্য এই বলে (আল্লাহ্‌র) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন-

أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ

অর্থঃ আমি তোমাদের দু’জনকে আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি যাবতীয় শয়তান ও বিষধর জন্তু থেকে এবং যাবতীয় ক্ষতিকর চক্ষু (বদনযর) থেকে।

উচ্চারণঃ উ‘ইযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তাম্মাতি মিং কুল্লি শাইত্ব-নিওঁয়া হা-ম্মাহ্‌, ওয়ামিং কুল্লি য়া'ইনিল্লা-ম্মাহ্‌ 

(বুখারী ৪/১১৯, নং ৩৩৭১; ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীস থেকে) 


৩। 

এই দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ১ বার পড়ে ফুঁ দিয়ে দিতে হবেঃ 

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রব্বান্নাসি আযহিবিল বা’স,   ইশফিহি ওয়া আংতাশ শা-ফী-,   লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উক,   শিফা-আন লা-ইউ গ-দিরু সাক্বমা-


৪। 

উত্তমরূপে পানি পড়া তৈরি করে নিতে হবে যা প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ বেলা খাওয়াতে হবে এবং চোখে মুখে ছিটা দিয়ে দিতে হবে। 

গোসলের সময় মগের পানির সাথে পড়া পানি বিসমিল্লাহ বলে একটু মিশিয়ে নিয়ে পানি মাথায় ঢেলে দিতে হবে। 

পানি পড়া তৈরির পদ্ধতিঃ 

ক) অজুসহ পাকপবিত্র অবস্থায় মানুষ ও জ্বীনের বদনজর এবং জ্বীনের আছর ও শয়তানের কুপ্রভাব থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়ত মনে মনে করে নিতে হবে।

খ) প্রথমে আউজুবিল্লা বলে শুরু করে দুরুদে ইব্রাহিম (৩বার) এরপর বিসমিল্লাহ সহকারে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস প্রতিটি ৭বার করে ধীরস্থীর সহিহ উচ্চারণে পড়ে হাত স্পর্শ ব্যতিত পরিস্কার পানিতে ফুঁ দিতে হবে। ফুঁ দেয়ার ক্ষেত্রে একেকবার পড়ার পরেই একবার ফুঁ দিতে হবে। অর্থাৎ দুরুদ একবার পড়া হলে একবার ফুঁ পুনরায় পড়ে আবার ফুঁ এভাবে ফুঁ দিতে হবে। 

গ) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ১ বার পড়ে ফুঁ দিতে হবে।  

ঘ) একবার তৈরী করা পানি কয়েকদিন ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে পড়া পানির পাত্র নিচে না রেখে উঁচুতে রাখতে হবে। 



বিধিনিষেধঃ 

১। মাগরিবের ১০-১৫ মিনিট পূর্ব থেকে পরের ১০-১৫ পর্যন্ত বাচ্চাদের নিয়ে বের হওয়া যাবে না। 

২। বাচ্চাদের রুমে (পুরো বাসাতেই রাখা ঠিক না) কোন প্রকাশমাণ প্রাণীর ছবি ও পুতুল রাখা যাবে না।

৩। মাগরিবের ২০মিনিট পুর্বে দরজা ও জানালা বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করে দিতে হবে এবং মাগরিবের ১৫-২০ মিনিট পর খুলে দেয়া যাবে যদি প্রয়োজন হয়। খোলার সময় বিসমিল্লাহ বলে খুলতে হবে। 

৪। রাতের বেলা অযথা বাচ্চাকে বাহিরে নেয়া যাবেনা। 

৫। বাচ্চাকে জাগ্রত অবস্থায় বিশেষ করে রাতে বেলা একাকি রাখা যাবে না। 

৬। ছলাত আদায়ের সময় বাচ্চাকে সাথে নিয়ে ছলাত শুরু করা উচিত এরপরে সে যা করে করুক। 

রুকইয়াহ এবং দোয়া

কেউ যাদু আক্রান্ত হলে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দোয়া করা।

আমরা জানি জাদুর জিনিসগুলো যদি পাওয়া যায় আর সেগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়, তাহলে মানুষ খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। তাই তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত যেন আল্লাহ জানিয়ে দেন, যাদুর জিনিশগুলো কোথায় পাওয়া যাবে, কিভাবে পাওয়া যাবে, কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

এটা কিন্তু রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ।

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে যে ঘটনাটি বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন যাদু করা হয়েছিল, উনি কয়েকদিন খুব বেশি বেশি দোয়া করেছেন, এরপর একদিন হঠাৎ বললেন “আয়েশা তুমি কি বুঝতে পেরেছ যে ব্যাপারে আমি দোয়া করছিলাম আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন?

ওই সময়েই রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুকইয়ার জন্য সুরা ফালাক সুরা নাস নাযিল হয়। রাসুলুল্লাহকে জানিয়ে দেয়া হয়, আপনাকে এভাবে যাদু করা হয়েছে, অমুক যায়গায় আছে যাদুর জিনিস। ইত্যাদি… (বুখারি ৫৪৩০, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, মুসনাদে আহমাদ)

তো এখানে মুল যে বিষয়ে আমি ফোকাস করতে চাচ্ছি, তা হচ্ছে দোয়া করা। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই রুকইয়াহ অসম্পূর্ণ যেখানে দোয়া নেই। তাই আমাদের অবশ্যই দোয়া করা উচিত।

১. বেলাল রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের সম্পদ হিফাজত কর যাকাত প্রদানের মাধ্যমে, তোমাদের রোগের চিকিৎসা কর সাদকার মাধ্যমে, আর তোমাদের বিপদ দূর কর দু’আর মাধ্যমে। (মুজামুল আওসাত ২০০৬, বায়হাক্বি ৩২৭৪)

২. জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী ﷺ কে বলতে শুনেছি, রাতে এমন একটি সময় রয়েছে যে, কোন মুসলমান ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখিরাতের কোন কল্যাণের প্রার্থনা করা অবস্থায় যদি সময়টি পেয়ে যায়, তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। আর এই সময় আছে প্রতিটি রাতেই। (মুসলিম ৭৫৭)

৩. আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমাদের বরকতময় ও মহান প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকার সময় পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আছে আমাকে ডাকবে, তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে আমার কাছে চাইবে, তবে আমি তাকে দিয়ে দিব। কে আছে আমার কাছে ইস্তিগফার করবে, তবে আমি তাকে মাফ করে দেব। (বুখারি ৫৯৬২, তিরমিযি)

সংগৃহীত 

বাচ্চাদের রুকইয়াহ করতে লক্ষণীয় বিষয়সমূহ

 বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহ করা বড়দের রুকইয়াহ করার চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ, আবার ফলাফল পাওয়া যায়ও তাড়াতাড়ি। বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি-


১) বাচ্চার মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিতভাবে পাওয়া না যায়ঃ


যদি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া না যায় যেমন- “এমন কোন শারীরিক সমস্যা যেটা “দেখে মনে হয়” মেডিক্যালে এর কোন “ব্যাখা নেই” অথবা “মনে হচ্ছে” যে নজর লেগেছে অথবা বাচ্চারা তাদের স্বাভাবিক আচরণ করছে না” এক্ষেত্রে আমরা বাচ্চাদের জন্য “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” বা দীর্ঘ মেয়াদি কোন রুকইয়ার পরামর্শ দিবো না। বরঞ্চ এই পর্যায়ে আমরা “বদনজরের সাধারণ রুকইয়া” অথবা “৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম” করার পরামর্শ দিবো। বাচ্চার বয়স যদি এক বছরের নিচে হয় তাহলে ডিটক্স প্রোগ্রাম থেকে মধু বাদ দিবেন। ছোট বাচ্চা এক কাপ বা আধা গ্লাস পানি না খেতে পারলে সেটারও অর্ধেক খাওয়ান। আর তিলাওয়াত বাবা অথবা মা করে দিতে পারেন। ৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম সাধারণত সব বয়সের মানুষের জন্যই উপযোগী।


২) বাচ্চার মধ্যে নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু জ্বিনও হাজির হচ্ছে না এবং বাচ্চার খুব বেশি ইফেক্টও হচ্ছে নাঃ


যদি আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া যায় কিন্তু বাচ্চা শক্ত কোন প্রতিক্রিয়াও না দেখায় আবার জ্বিন দ্বারা আসর নাও হয় তাহলে সেটা হতে পারে উপরে উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি নেওয়ার কারণে (৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম)। এক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিবো সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম করার জন্য। কিন্তু রুকইয়াহ করতে হবে আরমাদায়ক ভাবে। অর্থাৎ বাচ্চাকে জোর করে মূর্তির মত এক জায়গায় বসিয়ে রাখা যাবে না, বাচ্চা ভয় পায় এমন কিছু করা যাবে না। আর এসব ক্ষেত্রে সাধারণত হিজামাও করার দরকার পরে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এত টুকুতেই বাচ্চা ভাল হয়ে যায়। এতে বাচ্চার কোন অসুবিধাও হয় না আবার জ্বিনের আসরের মত কিছুও ঘটে না।


৩) যদি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে, যেমন বাচ্চা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে বা চিৎকার চেঁচামেচি করে, বাচ্চার ওপর জ্বিন হাজির হয়ে যায় বা আসর করে বসে তাহলে এক্ষেত্রে প্রতিদিন সরাসরি রুকইয়ার পাশাপাশি আমরা সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম অনুসরণ করার পরামর্শ দিবো। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে প্রয়োজনে হিজামাহ করানো যেতে পারে। আর একটু খেয়াল রেখে (সতর্কভাবে) রুকইয়াহ করতে হবে। যেমন বাচ্চাকে কাছে বসিয়ে রাখতে হবে, রুকইয়াহ এর আয়াতগুলোতে বেশি বেশি জোর দিতে হবে।


বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ


ক) বাচ্চার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। যেহেতু বাচ্চার আচরণ ও মানসিকতা পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত নয়, তাই বাচ্চার সাথে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত আচরণ করা যাবে না। রুকইয়াহ করার সময় বাচ্চা যেন পরিপূর্ণ আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রুকইয়াহ করার সময় একটু পর পরে চেক করতে হবে, বাচ্চারা রিল্যাক্সড ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে কিনা। তাদের সাথে হালকা খেলাধূলাও করতে পারেন, তাদেরকে বলতে পারেন “আমার সাথে সাথে পড়।” যদি আপনি বাচ্চার অপরিচিত কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে রুকইয়াহ করার আগে ও পরে তার সাথে কিছু সময় কাটান। যেন সে আপনাকে সহজ ভাবে নিতে পারে।


খ) কখনোই, কখনোই বাচ্চাকে প্রহার বা আঘাত করবেন না। সত্যিকার অর্থে রুগী যেই হোক না কেন, বাচ্চা অথবা পূর্ণবয়স্ক, তাকে প্রহার করা সাধারণত ভালো রেজাল্ট দেয় না। বরং এর কারণে অনেক সময় জ্বিন আরো দীর্ঘ সময় শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে। আর বাচ্চার গায়ে আঘাত করা হলে, বাচ্চা সিরিয়াস ইনজুরিতে পড়ে যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রে রুকইয়াহ চলাকালীন সময়ে “জ্বিনকে” প্রহার করার কারণে বাচ্চা মারাও যায়। তাই প্রহার করা এক্ষেত্রে জ্বিনকে সাহায্য করারই নামান্তর।


যদি বুঝতে পারেন জ্বিন শরীরের এখানে সেখানে ছুটোছুটি করছে, তাহলে মৃদুভাবে সেই জায়গায় মালিশ করবেন। ফলে বাচ্চাও আরাম বোধ করবে আর জ্বিনও প্রেশারে থাকবে।


গ) বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে, বাচ্চারা বড়দের মত তাদের অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারে না। স্বভাবগত ভাবেই বাচ্চারা একটু ছুটোছুটি বা দৌড়াদৌড়ি পছন্দ করে। এটাকে জ্বিনের লক্ষণের সাথে গুলিয়ে ফেললে হবে না। সময় নিয়ে বাচ্চার আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে; বিশেষ করে রুকইয়াহ করার সময় ও রুকইয়াহ করার আগে বা পরের সময়ের আচরণে পার্থক্য ভালো করে খেয়াল করতে হবে। তাহলে আপনি বাচ্চার স্বাভাবিক আচরণ আর অস্বাভাবিক আচরণের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারবেন।


ঘ) যদি বাচ্চা বয়সে একটু বড় হয়, নিজের কথা বুঝিয়ে বলতে পারে; তাহলে বাচ্চার সাথে তার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তার মন থেকে শয়ত্বান জ্বিনের ভয় দূর করতে হবে। বাচ্চাদের মনে বড়দের তুলনায় শয়ত্বান জ্বিনের ভয় বেশি প্রভাব ফেলে। এমন যেন না হয়, জ্বিনের ভয়ে বাচ্চা ঘুমাতেই পারছে না। বাচ্চার কাছে শয়ত্বান জ্বিনের দূর্বলতাগুলো তুলে ধরবেন। তাদেরকে বুঝান শয়ত্বান জ্বিন কিভাবে কুর’আনের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। বাচ্চাদেরকে শয়ত্বান জ্বিন থেকে সুরক্ষার জন্য মাসনূন দু’আ গুলো শিখিয়ে দিন।


ঙ) যদি জ্বিন হাজির হয়েই যায় এবং কথাও বলা শুরু করে, তাহলে জ্বিনের সাথে অপ্রয়োজনীয় ও বেশি কথা বার্তা বলবেন না। জ্বিনকে “ইসলাম গ্রহণ করে বাচ্চার শরীর থেকে বের” হয়ে যেতে বলবেন। আর যদি “ইসলাম” গ্রহণ করতে না চায়, তাহলে বলবেন যেন “চলে যায় এবং আর ফিরে না আসে।” জ্বিনের কোন গাল-গল্পই বিশ্বাস করবেন না, তাদের সাথে কোন বোঝাপড়াতেও যাবেন না।


চ) রুকইয়াহ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় ধরাবাঁধা নেই। কিন্তু আপনি যদি দেখেন কোন নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চার মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকট হয় (যেমনঃ মাগরিবের পর), তাহলে সে সময়ে রুকইয়াহ করাটাই সবচেয়ে ভালো। অন্যথায় যে সময় বাচ্চা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সে সময়ই রুকইয়াহ করবেন।


ছ) অবস্থা বুঝে রুকইয়াহ করার পদ্ধতি ও সময় পরিবর্তন করতে পারেন। তবে খুব দ্রুত রুকইয়াহর পদ্ধতি পরিবর্তন করবেন না, কারণ এতে জ্বিন শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলা করার বা ম্যানুপুলেট করার সুযোগ পাবে।


আল্লাহই ভালো জানেন।

Collected from Ruqyah Support BD

বাচ্চাদের জন্য সহজ রুকইয়াহ ও নিরাপত্তার প্রেসক্রিপশন

 ১. মাগরিবের ১০-১৫ মিনিট পূর্ব থেকে পরের ১০-১৫ পর্যন্ত বাচ্চাদের নিয়ে বের হবেন না। (updated)

২. বাচ্চাদের রুমে(পুরো বাসাতেই রাখা ঠিক না) কোন প্রকাশমাণ প্রাণীর ছবি ও পুতুল রাখবেন না।

৩. ফজর ও মাগরিবের পর আয়াতুল কুরসি-১ বার, ইখলাস, ফালাক ও নাস ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিবেন।

৪. রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস ১বার করে পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে শরীর মুছে দিবেন -৩বার।

৫. মাগরিবের ২০মিনিট পুর্বে দরজা ও জানালা বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ করে দিবেন এবং মাগরিবের ১৫-২০ মিনিট পর খুলে দিতে পারবেন যদি প্রয়োজন হয়। খোলার সময় বিসমিল্লাহ বলে খুলবেন।

৬. মানুষ ও জ্বীনের বদনজর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে :- দুরুদে ইব্রাহিম (১বার), সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক ও নাস (প্রতিটি ৭বার করে পড়বেন), দুরুদে ইব্রাহিম (১বার) পড়ে ডান কানে হালকা করে ফুঁ দিয়ে দিবেন এবং সমস্ত শরীরে ফুঁ দিয়ে দিবেন।

৭. পানি(উপরে উল্লেখিত সুরা ও আয়াত পড়ে পানি তৈরি করবেন) অল্প করে পান করাবেন এবং অল্প পানি দিয়ে মাথা, আইভ্রু, হাত ও‌ পায়ের তালুতে মাসেহ করে দিবেন(দিনে কমপক্ষে ৩বার)

৮. এই দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ১/৩/৫/৭ বা এর বেশি বেজোড় সংখ্যকবার পড়ে ফুঁ দিবেন:-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-এর জন্য এই বলে (আল্লাহ্‌র) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন-
أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
আমি তোমাদের দু’জনকে আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে নিচ্ছি যাবতীয় শয়তান ও বিষধর জন্তু থেকে এবং যাবতীয় ক্ষতিকর চক্ষু (বদনযর) থেকে।
উ‘ইযুকুমা বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁয়া হা-ম্মাহ্‌, ওয়ামিন কুল্লি আইনিল্লা-ম্মাহ্‌(একজনের ক্ষেত্রে উ’ইযুকা পড়বেন)।
বুখারী ৪/১১৯, নং ৩৩৭১; ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার হাদীস থেকে।

Collected from Ruqyah Support BD

বাচ্চাদের সমস্যার জন্য প্রাথমিক রুকইয়াহ

 বাচ্চাদের নজর লাগা ও এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য নিয়ত করে রুকইয়াহ করতে পারেন। দ্রত ফল পাবেন ইনশা আল্লাহ্‌

রুকইয়া করার নিয়মঃ

বাচ্চাকে সামনে বসিয়ে মাথায় হাত রেখে (হাত রাখতে অসুবিধা হলে দরকার নাই) সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস এগুলো বার বার করে পড়ে পড়ে ফুঁ দিতে থাকুন। অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট করেন। সাথে এই দুটি দোয়া পড়তে পারেন-

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উচ্চারণ: উঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তাম্মাহ। মিন কুল্লি শাইত্বা-নিন ওয়া হা-ম্মাহ ওয়ামিন কুল্লি ‘আইনিন লা-ম্মাহ।

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রাব্বান নাস আযহিবিল বা’স । ইশফিহি ওয়া আনতাশ শা-ফী । লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উক। শিফা-আন লা-ইউগা-দিরু সাকামা ।
এভাবে দিনে দুই-তিনবার রুকইয়াহ করতে পারেন। সমস্যা বেশি থাকলে এর সাথে রুকইয়ার গোসল দেয়াবেন এবং পানি খাওয়াবেন।

রুকইয়াহ গোসলঃ
গোসলের পানিতে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস যতবার ইচ্ছা পড়ে ফুঁ দিয়ে ঐ পানি দিয়ে গোসল করান। গোসল আবশ্যক না, সমস্যা বেশি দেখলে করাবেন।

পানি খাওয়ানোঃ
গোসলের পানি তৈরির মতই পানি তৈরি করে খাওয়ান দিনে ২/৩ বার। পানি খাওয়ানোও আবশ্যক না।

অন্যান্যঃ

  • কারো নজর লেগেছে বলে অনুমান করতে পারলে ঐ ব্যক্তির অযুর পানি নিয়ে বাচ্চার গায়ে ঢেলে দিবেন। দ্রুত উপকার পাবেন ইনশা আল্লাহ
  • বাচ্চার কিছু সমস্যা মায়ের কারনেও হতে পারে। বিশেষ করে মা-র স্তন্যপান না করতে চাইলে মায়ের উচিত নিজেরও সমস্যা আছে কিনা যাচাই করে রুকইয়াহ করা। 
  • অভিভাবকদের ফরজ, ওয়াজিবগুলো ভালভাবে আদায়ের সাথে সাথে সুরক্ষার আমলগুলি করা উচিত। আর নিজে আমলগুলো করার পর বাচ্চাকেও ফুঁ দিয়ে দিবেন। অথবা হিফাজতের নিয়াতে শুধু ৩ কুল পড়ে ফুঁ দিবেন – 
  • সন্ধ্যার আগে দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়া উচিত। সন্ধ্যার খানিক পরে খুলে দিতে পারে। বাচ্চাদের চেহারাওয়ালা পুতুল ইত্যাদির খেলনা দেয়া উচিত না। সন্ধ্যার সময় বাইরে থাকতে দেয়া উচিত না। আরো কিছু বিষয় এখানে জানতে পারবেন –
  • হাদীসে আরো কিছু দুয়ার কথা পাওয়া যায় রুকইয়ার জন্য। সেসব দিয়ে রুকইয়াহ করতে চাইলে এবং বাচ্চাদের সমস্যার জন্য রুকইয়ার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে এই গাইডটি পড়ুন… 
Collected from Ruqyah Support BD

শিশুদের জন্য যেভাবে রুকইয়াহ করবেন

ছোট বাচ্চাদের ওপর রুকইয়াহ করা বেশ সহজ। উপরন্তু তাদের গুনাহ থাকে না বিধায় রুকইয়াহ করলে অল্পতেই অনেক বেশি উপকার হয়।

প্রথমত: বাচ্চাদের সাথে কোন তাবিজ-কবচ, নজর লাগার টিপ থাকলে নষ্ট করার ব্যবস্থা করুন। কোন সমস্যা না থাকলেও এসব জিনিসের কারণে সমস্যা তৈরি হয়।


দ্বিতীয়ত: ঘরে কোন প্রাণীর ছবি, পুতুল, বাদ্যযন্ত্র বা এমন কিছু যেন না থাকে, যা রহমতের ফেরেশতা প্রবেশে প্রতিবন্ধক।


তৃতীয়ত: বাচ্চাদের সরাসরি জিন বা জাদুর সমস্যা খুব কম হয়, তাই একটু অস্বাভাবিক আচরণ দেখলেই ঘাবড়ানোর কিছু নেই। হ্যা! বদনজর লাগতে পারে, এজন্য বদনজরের রুকইয়াহ করতে পারেন।


আরেকটি বিষয় হলো, যেহেতু সমস্যা অনেক কারণেই হয়, তাই নির্দিষ্টভাবে বদনজরের নিয়াত না করে, যে সমস্যা হচ্ছে সেই নিয়াতে রুকইয়াহ করাই ভালো। তবে নিশ্চিতভাবে বোঝা গেলে ভিন্ন কথা।


বাচ্চাদের রুকইয়ার নিয়ম খুবই সহজ— কাছে ডেকে স্বাভাবিকভাবে বসান, অথবা কোলে নিন। আপনার সম্পূর্ণ মনযোগ বাচ্চার প্রতি নিবদ্ধ করুন। এরপর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার রুকইয়ার দোয়া বা আয়াতগুলো পড়ুন। পড়ার মাঝেমাঝে ফুঁ দিন। এতটুকুই!


হাদীসে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়তে পারেন:


أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ


উচ্চারণ: উ‘ইযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ, মিন কুল্লি শাইত-নিন ওয়াহা-ম্মাহ, ওয়ামিন কুল্লি ‘আইনিন লা-ম্মাহ।


সাথে সূরা ফাতিহা এবং তিন কুল পড়া যায়। এছাড়া এই কিতাবের বিভিন্ন যায়গায় (অথবা ওয়েবসাইটের পিডিএফগুলোতে) লেখা দুআ বা আয়াতগুলো থেকেও পড়তে পারেন।

প্রয়োজনে পরপর কয়েকদিন সকাল বিকাল রুকইয়াহ করুন। পানি বা খাবারে ফুঁ দিয়ে খাইয়ে এবং গোসল করিয়ে দিন।


তবে সমস্যা যদি জটিল হয়, অর্থাৎ জাদু অথবা জিনের আসরের লক্ষণগুলো প্রকট আকারে দেখা যায়। তাহলে বড়দের মত একটু দীর্ঘ সময় রুকইয়াহ করা এবং সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে।

এক্ষেত্রে বাচ্চার বয়স, শারিরীক এবং মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে পরিমাণে কম-বেশি করতে হবে। প্রয়োজনে ৭ দিনের ডিটক্স রুকইয়াও করানো যাবে।


খেয়াল রাখার বিষয় হলো,

১. রুকইয়ার সময় বাচ্চাদের কখনো মারধর করবেন না।

২. একই যায়গায় বা একইভাবে বসে থাকতে বাধ্য করবেন না। এমন কোন কাজ করবেন না, যাতে সে ঘাবড়ে যাবে।

৩. জিন বা শয়তানের ব্যাপারে ভয় না দেখিয়ে সাহস দিন। গল্পে গল্পে আল্লাহর কালামের শ্রেষ্ঠত্ব এবং শয়তানদের দূর্বলতা বোঝান।

৪. একদম শুরু থেকেই ছোট ছোট জিকির-আজকারগুলো মুখস্ত করান এবং সেগুলো পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৫. সকাল-সন্ধ্যার আমলগুলো সে নিজে না করতে পারলে অন্য কেউ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিন।

৬. পরিবারের সবাই পাক-সাফ থাকার প্রতি গুরুত্ব দিন।

৭. আর ছোট থেকেই মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।


Collected from Ruqyah Support BD

Sunday, April 2, 2023

ইফতার কেন দ্রুত করবো?

 ইফতার কেন দ্রুত করবো?

• মহান আল্লাহ বলেন, ثم اتموا الصيام الى الليل অর্থাৎ অতঃপর তোমরা রাতের প্রারম্ভ পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো (২/২৮৭)।

আয়াতে বলা হয়েছে الى الليل (রাত পর্যন্ত), بعد النهار (দিন শেষে) বলা হয়নি। যদি "দিন শেষে" বলা হতো তাহলে দিনের শেষে আপনার যতক্ষণ ইচ্ছা দেরি করার এখতিয়ার থাকতো। কিন্তু যখন বলা হয়েছে "রাত পর্যন্ত" তখন বিনা ওজরে সিয়ামকে রাতে প্রবেশ করানোর সুযোগ নেই। কেননা, الى আসে কোন বিষয়কে সম্বন্ধিত করে উদ্দিষ্ট বিষয়ের অন্তসীমা বুঝানোর জন্য। উদ্দিষ্ট বিষয়কে সম্বন্ধিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নয়। যেমন কেউ বললো, আমার উঠোনের শেষ সীমানা হলো সিটি কর্পোরেশনের দেয়াল পর্যন্ত। এর অর্থ এই নয় যে সে দেয়ালের ওপার থেকেও দুয়েক ফুট দাবি করতে পারবে। কাজেই সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই ইফতার সেরে নিতে হবে। সতর্কতার বাহানায় ২/৩ মিনিট দেরিতে ইফতারকারী হলো ঐ সমস্ত বোকা দৌঁড়বিদের মত যারা নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করেও মনে করে আমাকে আরো ২/৩ কদম যেতে হবে।

• ইফতারের সঠিক সময়..

 عن عمر بن الخطاب: إذا أقْبَلَ اللَّيْلُ مِن ها هُنا، وأَدْبَرَ النَّهارُ مِن ها هُنا، وغَرَبَتِ الشَّمْسُ فقَدْ أفْطَرَ الصّائِمُ..

"ওমর বিন খাত্তাব (রা.) হতে বর্ণিত, যখন এদিক থেকে রাত ঘনিয়ে আসবে আর ওদিক থেকে দিন চলে যাবে এবং সূর্য ডুবে যাবে সঙ্গে সঙ্গে সিয়াম পালনকারী ইফতার সেরে নিবে।"

صحيح البخاري ١٩٥٤ 

ইমাম ইবনে হাজম (রহ.) বলেন,

وَمِنْ السُّنَّةِ تَعْجِيلُ الْفِطْرِ وَتَأْخِيرُ السُّحُورِ ، وَإِنَّمَا هُوَ مَغِيبُ الشَّمْسِ عَنْ أُفُقِ الصَّائِمِ وَلا مَزِيدَ

"সুন্নাহ হলো দ্রুত ইফতার করা ও দেরিতে সাহরী খাওয়া। আর সাহরীর অন্তসীমা থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্তই হলো সিয়ামের নির্ধারিত সময়। এর অতিরিক্ত নয়।"

المحلى، ٤/٣٨٠

অনেকেই মনে করে আজান হলে পরে ইফতার। অথচ আজানের সাথে ইফতারের কোন সম্পর্কই নাই। আজান যিনি দেন তিনিও ইফতার করেই দেন। তাছাড়া বিশ্বের বহু অমুসলিম দেশে কোন আজানই হয় না। সেখানকার মুসলমানরা কি ইফতার করবে না?

মুলত ইফতারের সম্পর্ক সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে। কোনভাবেই আজানের সাথে নয়। হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বলানী (রহ.) এ বিষয়ে ইজমা নকল করে বলেন,

واتَّفَقَ العُلَماءُ عَلى أنَّ مَحَلَّ ذَلِكَ إذا تَحَقَّقَ غُرُوبُ الشَّمْسِ بِالرُّؤْيَةِ أوْ بِإخْبارِ عَدْلَيْنِ وكَذا عدل واحِد فِي الارجح

"সমস্ত ওলামায়ে কেরাম একথার উপর একমত যে ইফতারের সঠিক সময় হলো যখন সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখার মাধ্যমে কিংবা দুইজন বিশ্বস্ত লোকের সংবাদের মাধ্যমে নিশ্চিত জানা যাবে। অনুরূপ গ্রহণযোগ্য মতানুসারে একজন বিশ্বস্ত লোকের সংবাদের মাধ্যমে হলেও চলবে।"

فتح الباري، ٤/١٩٩

তিনি আরো বলেন,

مِنَ البِدَعِ المُنْكَرَةِ ما أُحْدِثَ فِي هَذا الزَّمانِ مِن إيقاعِ الأذانِ الثّانِي قَبْلَ الفَجْرِ بِنَحْوِ ثُلُثِ ساعَةٍ فِي رَمَضانَ وإطْفاءِ المَصابِيحِ الَّتِي جُعِلَتْ عَلامَةً لِتَحْرِيمِ الأكْلِ والشُّرْبِ عَلى مَن يُرِيدُ الصِّيامَ زَعْمًا مِمَّنْ أحْدَثَهُ أنَّهُ لِلِاحْتِياطِ فِي العِبادَةِ ولا يَعْلَمُ بِذَلِكَ إلّا آحادُ النّاسِ وقَدْ جَرَّهُمْ ذَلِكَ إلى أنْ صارُوا لا يُؤَذِّنُونَ إلّا بَعْدَ الغُرُوبِ بِدَرَجَةٍ لِتَمْكِينِ الوَقْتِ زَعَمُوا فَأخَّرُوا الفِطْرَ وعَجَّلُوا السُّحُورَ وخالَفُوا السُّنَّةَ فَلِذَلِكَ قَلَّ عَنْهُمُ الخَيْر وكثير فِيهِمُ الشَّرُّ واللَّهُ المُسْتَعانُ

"এই জমানায় যে গর্হিত বিদাতগুলো প্রবর্তিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রমযান মাসে ফজর হওয়ার ২০ মিনিট আগে দ্বিতীয় আযান দেয়া এবং বাতিগুলো নিভিয়ে দেয়া। যে বাতিগুলো রোযা রাখতে ইচ্ছুক ব্যক্তির জন্য পানাহার নিষিদ্ধ হওয়ার আলামত হিসেবে রাখা হয়। যে ব্যক্তি এটি প্রবর্তন করেছে সে এই ধারণা থেকে করেছে যে, এতে ইবাদতের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা হবে। গুটি কতেক মানুষ ছাড়া আর কাউকে বিষয়টি জানায় না। একই চিন্তা থেকে তারা সূর্য ডোবার কিছু সময় পরে আযান দেয়; তাদের ধারণা অনুযায়ী যাতে করে সময় হওয়াটা জোরদার হয়। এভাবে তারা দেরিতে ইফতার করে ও তড়িঘড়ি সাহরী সেরে মুলত সুন্নাহ'র বিপরীতে আমল করে যাচ্ছে। তাই তাদের মাঝে কল্যাণ হ্রাস পেয়েছে এবং অকল্যাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আল্লাহ সহায় হোন।"

فتح الباري، ٤/١٩٩

• দ্রুত ইফতার করা সুন্নাহ..

حَدَّثَنا وكِيعٌ، عَنْ أبِي العَنْبَسِ عَمْرِو بْنِ مَرْوانَ، قالَ: سَمِعْتُ إبْراهِيمَ، يَقُولُ: إنَّ مِنَ السُّنَّةِ تَعْجِيلَ الإفْطارِ

"ইব্রাহীম নখয়ী (রহ.) বলেন, সুন্নাহ হলো দ্রুত ইফতার করা।"

مصنف ابن أبي شيبة، ٢/‏٢٧٨ 

ইমাম রাফেয়ী (রহ.) বলেন,

من سنن الصوم تعجيل الفطر قال صلي الله عليه وسلم لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر

"দ্রুত ইফতার করা হলো রোযার সুন্নাহ। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জাতি ততদিন কল্যাণের উপর থাকবে যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে।"

الشرح الكبير للرافعي، ٦/‏٤١٧

• দ্রুত ইফতার সুন্নাত হওয়ার উপর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে..

قال ابن عبد البر وغيره : وأجمع العلماء على أنّ تعجيل الفطر، وتأخير السحور، سنة متبعة، حكاه الوزير ابن هبيرة، وجزم به الشيخ تقي الدين.

"হাফেজ ইবনে আব্দিল বার (রহ.) ও অন্যান্যরা নকল করেন, ওলামায়ে কেরামগণ এ কথার উপর একমত হয়েছেন যে, দ্রুত ইফতার করা ও  দেরিতে সাহরী খাওয়া হলো অনুসরণীয় সুন্নাহ। এটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ওজির ইবনে হুবায়রা (রহ.) এবং শায়খুল ইসলাম তকি উদ্দিন ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এটির সত্যায়ন করেছেন।"

توضيح الأحكام من بلوغ المرام، ٣/‏٤٧١

ইমাম ইবনুল আছীর (রহ.) নকল করেন,

وتعجيل الإفطار سنة متفق عليها

"দ্রুত ইফতার করা সুন্নাত এ বিষয়ে সবাই একমত।"

الشافي في شرح مسند الشافعي، ٣/‏١٩٨

• দ্রুত ইফতার আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম..

 عن أبي هريرة: قال اللهُ : أحَبُّ عبادِي إلَيَّ، أعْجَلُهُم فِطْرًا.

"আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, মহান আল্লাহ বলেন আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হলো যারা দ্রুত ইফতার করে।"

سنن الترمذي ٧٠٠ 

ইমাম তিরমিজি (রহ.), বাগভী (রহ.), ইবনে হাজার আসক্বলানী (রহ.), ইবনুল মুলাক্কিন (রহ.), মুনযিরী (রহ.), বিন বায (রহ.) প্রত্যকেই স্ব স্ব গ্রন্থে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। ইবনে হিব্বান (রহ.) তাঁর সহিহ'তে উল্লেখ করেছেন। শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত (রহ.) ও আহমাদ শাকের উভয়ে সহিহ বলেছেন।

• সাহাবীদের নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দ্রুত ইফতার..

 عن عبد الله بن أبي أوفى: كُنّا مع رَسولِ اللهِ ﷺ في سَفَرٍ فَقالَ لِرَجُلٍ: انْزِلْ فاجْدَحْ لِي، قالَ: يا رَسولَ اللهِ، الشَّمْسُ؟ قالَ: انْزِلْ فاجْدَحْ لِي، قالَ: يا رَسولَ اللهِ الشَّمْسُ؟ قالَ: انْزِلْ فاجْدَحْ لِي، فَنَزَلَ فَجَدَحَ له فَشَرِبَ، ثُمَّ رَمى بيَدِهِ ها هُنا، ثُمَّ قالَ: إذا رَأَيْتُمُ اللَّيْلَ أقْبَلَ مِن ها هُنا، فقَدْ أفْطَرَ الصّائِمُ، تابَعَهُ جَرِيرٌ، وأَبُو بَكْرِ بنُ عَيّاشٍ، عَنِ الشَّيْبانِيِّ، عَنِ ابْنِ أبِي أوْفى قالَ: كُنْتُ مع النبيِّ ﷺ في سَفَرٍ..

"আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে সফর অবস্থায় ছিলাম। পথিমধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সাহাবীকে বললেন, সওয়ারী হতে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সূর্য এখনো অস্ত যায়নি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সওয়ারী হতে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সূর্য এখনো ডুবেনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) আবারো বললেন, সওয়ারী হতে নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। অতঃপর সেই সাহাবী সাওয়ারী হতে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) তা পান করলেন। তারপর হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, যখন দেখবে রাত এদিক হতে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সওম পালনকারী ব্যক্তির ইফতারের সময় হয়েছে।"

 صحيح البخاري ١٩٤١  

কিছু অজমুজতাহিদ এই হাদীসে সূর্য ডুবার পর ২/৩ মিনিট দেরি করার দলিল খুঁজে পেয়েছে। তাদের দাবি হলো সূর্য ডুবার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কথাবার্তা বলা এবং সাহাবীর সওয়ারী হতে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনা, তারপর ইফতার করা এতে ২/৩ মিনিট তো লেগেছেই। তাছাড়া একটু দেরি হলেই যদি সুন্নাহ বিরোধী হয় তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.) সূর্য ডুবার আগে কেন ইফতার তৈরি করলেন না?

হাদীসটি আরেকবার পড়ে আসুন। দেখুন সাহাবী কিন্তু বারবার বলছিলেন হে আল্লাহর রাসুল! সূর্য এখনো ডুবেনি। তাহলে এই অজমুজতাহিদরা এটাকে সূর্য ডুবার পরের ঘটনা কেমনে বানালো? আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করুন, সাহাবী বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন হে আল্লাহর রাসুল! সূর্য এখনো ডুবেনি। অর্থাৎ ইফতারের সময় এখনো হয়নি। এত তাড়াহুড়া কেন করছেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) চাইলে তৎক্ষনাৎ মাসআলা হল করে দিতে পারতেন। যেহেতু দ্রুত ইফতারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেহেতু তিনি কোন কথাবার্তা ছাড়াই আগে ইফতার করে নিলেন, তারপর মাসআলা বললেন। ২/৩ মিনিট দেরি হলে যদি সমস্যা না থাকতো তাহলে তিনি অবশ্যই আগে মাসআলা সমাধান করতেন। যাতে সবাই নিঃসন্দেহে প্রশান্ত মনে ইফতার করতে পারেন।

আর রাসুলুল্লাহ (সা.) কেন সূর্য ডুবার আগে ইফতার তৈরি করলেন না?

মুলত ইফতার তৈরি প্রক্রিয়া সূর্য ডুবার আগেই হয়েছে। যেই সাহাবী ইফতার তৈরি করেছেন তিনিই বারবার জানান দিচ্ছিলেন হে আল্লাহর রাসুল! সূর্য এখনো ডুবেনি। তাছাড়া সফর অবস্থার হালচাল স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে একটু ব্যতিক্রম হতেই পারে।

স্বাভাবিক অবস্থায় সাহাবায়ে কেরামগণ সূর্য ডুবার আগেই ইফতার তৈরি করে নিতেন।..

عَنْ أبِي رَجاءٍ قالَ: كُنْتُ أشْهَدُ ابْنَ عَبّاسٍ عِنْدَ الفِطْرِ فِي رَمَضانَ، فَكانَ يُوضَعُ طَعامُهُ، ثُمَّ يَأْمُرُ مُراقِبًا يُراقِبُ الشَّمْسَ، فَإذا قالَ: وجَبَتْ قالَ: كُلُوا قالَ: ثُمَّ كُنّا نُفْطِرُ قَبْلَ الصَّلاةِ

"আবু রাজা (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রমযান মাসে ইফতারের সময় ইবনে আব্বাস (রা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করতাম। তাঁর খাবার তৈরি করে রাখা হতো। তারপর তিনি একজন পর্যবেক্ষককে সূর্য দেখার নির্দেশ দিতেন। যখন পর্যবেক্ষক বলতো সূর্য অস্ত গেছে, তখন তিনি বলতেন তোমরা খাও। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আমরা সালাতের আগে ইফতার করে নিতাম।"

مصنف عبد الرزاق الصنعاني، ٤/‏٢٢٧ 

• সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর দ্রুত ইফতারের অভ্যাস ও আম্মাজান আয়িশা (রা.) এর ফতোয়া..

 عن مالك بن عامر أبي عطية الوادعي: قلتُ لعائشةَ: فينا رجُلانِ، أحَدُهما يُعَجِّلُ الإفطارَ ويُؤخِّرُ السُّحورَ، والآخَرُ يُؤخِّرُ الفِطرَ ويُعَجِّلُ السُّحورَ. قالت: أيُّهما الذي يُعجِّلُ الإفطارَ ويُؤخِّرُ السُّحورَ؟ قلتُ: عبدُ اللهِ بنُ مَسعودٍ. قالتْ: هكذا كان رسولُ اللهِ ﷺ يَصنَعُ..

"আবু আত্বিয়া (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি আয়িশা (রা.) কে বললাম আমাদের মাঝে দুজন ব্যক্তি এমন আছেন যাঁদের একজন দ্রুত ইফতার করেন এবং দেরিতে সাহরী করেন। অন্যজন দেরিতে ইফতার করেন এবং দ্রুত সাহরী খেয়ে নেন। আয়িশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, দ্রুত ইফতার করা এবং দেরিতে সাহরী খাওয়া ব্যক্তিটা কে? আমি বললাম আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। আম্মাজান আয়িশা (রা.) বললেন, এই আমলটাই রাসুলুল্লাহ (সা.) করতেন।"

سنن النسائي ٢١٥٨ ، اسناده صحيح

• দ্রুত ইফতার নববী চরিত্রের চিহ্ন..

 عن أبي الدرداء: ثلاثٌ من أخلاقِ النُّبوةِ: تَعجيلُ الإفطارِ، وتأخيرُ السُّحورَ، ووضْعُ اليمينِ على الشِّمالِ في الصلاةِ.

"আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনটি বিষয় নববী আদর্শের অন্তর্ভুক্ত। তা হলো দ্রুত ইফতার করা, দেরিতে সাহরী খাওয়া এবং সালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।"

صحيح الجامع ٣٠٣٨ 

ইমাম মালেক (রহ.) বলেন,

سمعت عبد الكريم بن المخارق يقول: من عمل النبوة تعجيل الإفطار، والاستيناد بالسحور

"আমি আব্দুল কারীম ইবনে মুখারাক (রহ.) কে বলতে শুনেছি যে, দ্রুত ইফতার করা ও ধীরস্থিরে সাহরী খাওয়া নববী কর্মের অন্তর্ভুক্ত।"

شرح الرسالة للقاضى عبد الوهاب، ١/١٧١

• প্রত্যেক নবী-রাসুলের প্রতি দ্রুত ইফতার করার নির্দেশ ছিল..

 عَنِ ابْنِ عَبّاسٍ قالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: إنّا مَعاشِرَ الأنْبِياءِ أُمِرْنا أنْ نُعَجِّلَ فِطْرَنا، وأنْ نُؤَخِّرَ سُحُورَنا، وأنْ نَضَعَ أيْمانَنا عَلى شَمائِلِنا فِي الصَّلاةِ

"আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, আমাদের সমস্ত নবী-রাসুলদের উপর নির্দেশ  ছিল যাতে আমরা দ্রুত ইফতার করি, সাহরীতে দেরি করি এবং সালাতে আমাদের ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখি।"

مجمع الزوائد ٣‏/١٥٨،  رجاله رجال الصحيح 

• দেরিতে ইফতার করা হলো ইহুদী-খৃস্টানের নীতি..

عن أبي هريرة: لا يزالُ الدِّينُ ظاهرًا ما عجَّل النّاسُ الفِطْرَ إنّ اليهودَ والنَّصارى يؤخِّرونَ.

"আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, দ্বীন ততদিন পর্যন্ত বিজয়ী থাকবে যতদিন পর্যন্ত মুসলমান দ্রুত ইফতার করবে। অবশ্যই ইহুদী খৃষ্টানরা ইফতারে দেরি করে।"

صحيح ابن حبان ٣٥٠٣ 

ইমাম ত্বিবী (রহ.) এই হাদীসের ব্যাখায় বলেন,

قالَ الطِّيبِيُّ: فِي هَذا التَّعْلِيلِ دَلِيلٌ عَلى أنَّ قِوامَ الدِّينِ الحَنِيفِيِّ عَلى مُخالَفَةِ الأعْداءِ مِن أهْلِ الكِتابِ، وأنَّ فِي مُوافَقَتِهِمْ تَلَفًا لِلدِّينِ

"উল্লেখিত কারণে এ কথার দলিল রয়েছে যে, নিশ্চয় দ্বীনে হানীফে প্রতিষ্ঠিত থাকার অর্থ হলো দ্বীনের শত্রু আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করা। আর অবশ্যই দ্বীনের খাতিরে তাদের আনুকূল্যতাকে ঘৃণা করা।"

مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح، ٤/‏١٣٨٧

আবেগের জোরে অনেকেই বলে ফেলে তের/চৌদ্দ ঘন্টা না খেয়ে থেকেছি, আর দুই/তিনটা মিনিট পারবো না? তাদেরকে বলবো, কোন কারণ ছাড়া এই ২/৩ মিনিট অপেক্ষা করলে আপনার সিয়ামের আদৌ কোন উপকার হবে কিনা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে ঐ ২/৩ মিনিট অপেক্ষা না করলে আপনার সিয়াম নিশ্চিত দ্বীন বিজয়ের সহযোগী হবে। এবার সিদ্ধান্ত আপনার। তাছাড়া তের/চৌদ্দ ঘন্টা না খেয়ে থেকে দিনশেষে বোকার মতো নিজের পুতঃপবিত্র সিয়ামটাকে ইহুদী খৃষ্টানদের সাথে মিলাতে যাবেন কোন দুঃখে? অথচ আমরা আদিষ্ট হয়েছি ইহুদী-খৃস্টানদের রীতি রেওয়াজের বিরোধিতা করার জন্য। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন..

 ليس منا من تشبَّهَ بغيرِنا، ولا تشبَّهوا باليهودِ ولا بالنصارى، 

"যে ব্যক্তি অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপন করবে সে আমার উম্মত নয়। কাজেই তোমরা ইহুদী-খৃস্টানদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপন করো না।"

السلسلة الصحيحة ٢١٩٤، قوي بالطرق

• দ্রুত ইফতারেই রয়েছে জাতীয় কল্যাণ..

 عن سهل بن سعد الساعدي: أنّ رَسولَ اللهِ ﷺ، قالَ: لا يَزالُ النّاسُ بخَيْرٍ ما عَجَّلُوا الفِطْرَ..

"সাহল বিন সা'দ আস সায়েদী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন জাতি ততদিন কল্যাণের উপর থাকবে যতদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে।"

متفق عليه

একই হাদীস আবু যর গিফারী (রা.) ও সায়িদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহ.) থেকেও বর্ণিত হয়েছে।হাফেজ ইবনে আব্দির বার (রহ.) বলেন,

أحاديث تعجيل الإفطار وتأخير السّحور صحاحٌ متواترةٌ.

"দ্রুত ইফতার ও দেরিতে সাহুর সংক্রান্ত যাবতীয় হাদীস মুতাওয়াতির পর্যায়ের সহিহ।"

অনেকে দ্রুত ইফতার করাকে সামাজিকতা রক্ষার অন্তরায়ও বলে থাকেন। আরো বলেন, সবাই যেখানে আজানের জন্য অপেক্ষা করছে সেখানে গুটিকয়েক লোক স্রোতের বিপরীতে গিয়ে সূর্য ডুবার সাথে সাথে ইফতার করবে এটা তো ফেতনা! জানিনা সুন্নাহ'র উপর অবিচল থাকলে সেটা ফিতনা কীভাবে হয়।

অথচ, সমস্ত ইমামদের মতে দেরিতে ইফতার করাই হলো ফিতনা। যেমন ইমাম নববী (রহ.) বলেন,

قال النووي : فيه الحث على تعجيل الفطر بعد تحقق غروب الشمس , ومعناه : لا يزال أمر الأمة منتظماً وهم بخير ما داموا محافظين على هذه السنَّة , وإذا أخروه كان ذلك علامة على فسادٍ يقعون فيه

"এ হাদিসে সূর্য ডুবা নিশ্চিত হওয়ার পর অবিলম্বে ইফতার করার প্রতি উৎসাহ রয়েছে। যতদিন উম্মত এ সুন্নাত রক্ষা করে যাবে ততদিন তারা সুশৃঙ্খল থাকবে এবং তারা কল্যাণে থাকবে। যদি তারা ইফতার করতে বিলম্ব করতে থাকে তাহলে সেটা হবে তাদের ফাসাদে লিপ্ত হওয়ার আলামত।"

شرح مسلم ، ٢/٢٠٨

ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন,

وقال القرطبيّ : إنما كان تعجيل الفطر خيرًا؛ لأنه أحفظ للقوّة، وأرفع للمشقّة، وأوفق للسنّة، وأبعد عن الغلوّ والبدعة، 

"অবশ্যই দ্রুত ইফতার করাতেই রয়েছে কল্যাণ। কেননা এর দ্বারা শক্তি সংরক্ষিত হয়, কষ্ট দূর হয়, সুন্নাহ'র অনুকূলে থাকা যায় এবং অতিরঞ্জন ও বিদআত থেকে দূরে থাক যায়।"

البحر المحيط الثجاج في شرح صحيح الإمام مسلم بن الحجاج، ٢٠/‏٥٦٧

ইমাম মাজেরী (রহ.) বলেন,

قال المازريّ : أشار هذا الحديث إلى أن تغيير هذه السنة عَلَمٌ على فساد الأمر، ولا يزالون بخير ما داموا محافظين عليها

"এই হাদীসটি ঐ কথার দিকে ইঙ্গিত করে যে, দ্রুত ইফতার করার এই সুন্নাহ'কে পরিবর্তন করা হলো ফাসাদ সৃষ্টির আলামত। জাতি যতদিন এই সুন্নাহ'কে হেফাজত করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।"

البحر المحيط الثجاج، ٢٠/٥٦٩

ইমাম ইবনে দাক্বিক্বীল ঈদ (রহ.) বলেন,

قال ابن دقيق العيد : في هذا الحديث ردّ على الشيعة في تأخيرهم الفطر إلى ظهور النجوم، ولعل هذا هو السبب في وجود الخير بتعجيل الفطر؛ لأن الذي يؤخره يدخل في فعل خلاف السنة

"এই হাদীসে শিয়াদের তারকা প্রকাশ পাওয়া পর্যন্ত দেরি করে ইফতার করার খন্ডন রয়েছে। হতে পারে দ্রুত ইফতারে কল্যাণ নিহিত থাকার কারণও এটাই। কেননা যে ব্যক্তি দেরিতে ইফতার করবে সে সুন্নাহ বিরোধী কাজে প্রবেশ করবে।"

البحر المحيط الثجاج، ٢٠/٥٦٩

হাফেজ জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ.) বলেন,

لما فِيهِ من المُحافظَة على السّنة فَإذا خالفوها إلى البِدْعَة كانَ ذَلِك عَلامَة على إفْساد يقعون فِيهِ

"দ্রুত ইফতার করাতে যখন সুন্নাহ'র হেফাজতের ব্যাপার রয়েছে, সুতরাং এটার বিরোধিতা করে বিদআতের দিকে ধাবিত হওয়াই হলো ফাসাদ সৃষ্টির আলামত, যেখানে তারা নিপতিত হবে।"

شرح السيوطي على مسلم، ٣/‏١٩٨

ইমাম ইবনুল আছীর (রহ.) বলেন,

وقوله: "بخير" الظاهر أنه أشار إلى أن فساد الأمور يتعلق بتغير هذه السنة التي هي تعجيل الفطر، وأن تأخيره ومخالفة السنة في ذلك كالعَلَم على فساد الأمور

"আর কল্যাণের মধ্যে থাকবে কথাটি সুস্পষ্ট এ কথারই ইঙ্গিত যে, ফাসাদ সৃষ্টির সম্পর্ক মুলত দ্রুত ইফতার করার যে সুন্নাহ সেটাকে পরিবর্তন করার সাথে। অবশ্যই ইফতারে দেরি করা ও ইফতারের সুন্নাহ'র বিরোধিতা করা যেন ফাসাদ সৃষ্টির আলামত।"

الشافي في شرح مسند الشافعي، ٣/‏١٩٨

ইমাম মানাভী (রহ.) বলেন,

(لا يزال الناس بخير ما عجلوا الفطر) أي ما داوموا على هذه السنة لأن تعجيله بعد تيقن الغروب من سنن المرسلين فمن حافظ عليه تخلق بأخلاقهم ولأن فيه مخالفة أهل الكتاب في تأخيرهم إلى اشتباك النجوم وفي ملتنا شعار أهل البدع فمن خالفهم واتبع السنة لم يزل بخير

"(লোকেরা ততদিন কল্যাণের উপর থাকবে যতদিন দ্রুত ইফতার করবে) অর্থাৎ তারা এই সুন্নাহ'র উপর অটল থাকবে। কেননা সূর্যের অস্ত যাওয়া নিশ্চিত হবার পর তাড়াতাড়ি ইফতার করে নেয়া হলো প্রত্যেক নবী-রাসুলের সুন্নাত। কাজেই যে ব্যক্তি এই সুন্নাতের হেফাজত করবে সে হবে নববী আদর্শের অধিকারী। কারণ এই সুন্নাহ পালনে আহলে কিতাবরা যে তারকার সংঘর্ষ হওয়া পর্যন্ত দেরি করে সেটার বিরোধিতা রয়েছে। আর ঐ সমস্ত বিদআতীরা যারা এই সুন্নাহ'র বিরোধিতা করবে তারা অবনতির মধ্যে এবং যারা এই সুন্নাহ'র অনুসরণ করবে তারা সর্বদা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।"

فيض القدير، ٦/‏٤٥٠

অতএব, দেরিতে ইফতার করাই হলো ফিতনা ও সুন্নাহ বিরোধী কর্মকান্ড। জাতীয় কল্যাণের অন্তরায় ও জমিনে ফাসাদ সৃষ্টির আলামত। জঘন্য বাড়াবাড়ি ও নিকৃষ্ট বিদআত। পক্ষান্তরে দ্রুত ইফতার করাই হলো সুন্নাহ এবং এতেই রয়েছে কল্যাণ।

• সাহাবায়ে কেরামগণ দ্রুত ইফতার করতেন..

 عن عمرو بن ميمون: كانَ أصحابُ محمَّدٍ ﷺ أسرعَ النّاسِ إفطارًا وأبطأَهُم سحورًا.

"আমর বিন মায়মুন (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন মুহাম্মদ (সা.) এর সাহাবীরা ছিলেন লোকেদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত ইফতারকারী ও ধীরগতিতে সাহরী আদায়কারী।"

فتح الباري لابن حجر ٤‏/٢٣٤، إسناده صحيح

"দ্রুত ইফতার করা সুন্নাত এ বিষয়ে সবাই একমত।"

الشافي في شرح مسند الشافعي، ٣/‏١٩٨

• দ্রুত ইফতারের তাগিদ দিয়ে ওমর বিন খাত্তাব (রা.) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি..

عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ طارِقِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنِ ابْنِ المُسَيِّبِ قالَ: كَتَبَ عُمَرُ بْنُ الخَطّابِ إلى أُمَراءِ الأمْصارِ: أنْ لا تَكُونُوا مِنَ المُسَوِّفِينَ بِفِطْرِكُمْ، ولا المُنْتَظِرِينَ بِصَلاتِكُمُ اشْتِباكَ النُّجُومِ

"সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বিভিন্ন প্রাদেশিক শাসকদের প্রতি ফরমান জারি করেন এই মর্মে যে, আপনারা ইফতার করার ক্ষেত্রে বিলম্বকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। আর সালাতে তারকার সংঘর্ষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।"

مصنف عبد الرزاق الصنعاني، ٤/‏٢٢٥

• ফারুকে আযম (রা.) লোকেরা দ্রুত ইফতার করে কিনা সেটারও খোঁজখবর রাখতেন..

عَبْدُ الرَّزّاقِ قالَ: أخْبَرَنا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ المُسَيِّبِ، عَنْ أبِيهِ قالَ: كُنْتُ جالِسًا عِنْدَ عُمَرَ إذْ جاءَهُ رَكْبٌ مِنَ الشّامِ فَطَفِقَ عُمَرُ يَسْتَخْبِرُ عَنْ حالِهِمْ، فَقالَ: هَلْ يُعَجِّلُ أهْلُ الشّامِ الفِطْرَ؟ قالَ: نَعَمْ قالَ: «لَنْ يَزالُوا بِخَيْرٍ ما فَعَلُوا ذَلِكَ، ولَمْ يَنْتَظِرُوا النُّجُومَ انْتِظارَ أهْلِ العِراقِ

"সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ওমর (রা.) এর মজলিসে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় শামের একজন অশ্বারোহী প্রতিনিধি সেখানে এসে উপস্থিত হন। তারপর ওমর (রা.) তার কাছ থেকে শামবাসীর অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে আরম্ভ করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, শামের লোকেরা কি দ্রুত ইফতার করে? ঐ ব্যক্তি বললেন, জ্বি হ্যাঁ। ফারুকে আযম (রা.) বললেন, তারা যতদিন এটা করতে থাকবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। আর তারা যেন ইরাকবাসীর মতো তারকার অপেক্ষা না করে।"

مصنف عبد الرزاق الصنعاني، ٤/‏٢٢٥ 

অনেকে ২/৩ মিনিট দেরিতে ইফতার করার পক্ষে নিম্নোক্ত আছারটিও পেশ করে থাকেন।..

أخْبَرَنا مالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، أنَّ عُمَرَ، وعُثْمانَ، كانا يُصَلِّيانِ المَغْرِبَ حِينَ يَنْظُرانِ إلى اللَّيْلِ الأسْوَدِ ثُمَّ يُفْطِرانِ بَعْدَ الصَّلاةِ، وذَلِكَ فِي رَمَضانَ

"ওমর (রা.) ও উসমান (রা.) উভয়ে রমযান মাসে এমন সময় মাগরিবের সালাত আদায় করতেন, যখন তাঁরা কালো অন্ধকার দেখতে পেতেন। এরপর সালাত শেষে ইফতার করতেন।"

مسند الشافعي، ١/‏١٠٤ 

প্রথমত, যারা আছারটিকে দলিল বানিয়েছে তারা নিজেরাই এর উপর আমল করে না। কেননা, তারা কালো অন্ধকার ঘনিয়ে আসলে মাগরিবের সালাত, তারপর ইফতার এভাবে ইফতার করে না। কাজেই এতে তাদের পক্ষে কোন দলিল নেই।

দ্বিতীয়ত, এটি হতে পারে তাঁদের বিশেষ কারণ বশত অনিয়মিত একটি আমল; যা কোনভাবেই অভ্যাসগত নয়। কেননা, কোন খুলাফায়ে রাশেদের পক্ষে এটা সম্ভব নয় যে তাঁরা রাসুলুল্লাহ (রা.) এর সুন্নাহ বিরোধী কোন কাজকে অভ্যাসে পরিনত করবেন। যে কারণে সাহাবীদের কেউ তাঁদের এই আমলের গুরুত্ব দেয়নি।

তৃতীয়ত, এটি সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমলের সাথে সাংঘর্ষিক। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতার না করে কখনো সালাতে যেতেন না।..

حَدَّثَنا حُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ، عَنْ زائِدَةَ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أنَسٍ، أنَّ النَّبِيَّ ﷺ كانَ لا يُصَلِّي، حَتّى يُفْطِرَ، ولَوْ بِشَرْبَةٍ مِن ماءٍ

"আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় নবী (সা.) ইফতার না করা পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। একটু পানি পান করে হলেও আগে ইফতার সেরে নিতেন।"

مصنف ابن أبي شيبة، ٩٧٨٩

চতুর্থত, হতে পারে তাঁদের এই আমল দ্বারা এ কথা বুঝানো উদ্দেশ্য যে, তাড়াতাড়ি ইফতার করা ওয়াজিব নয় এবং বিশেষ কোন ওজর বশত দেরিও করা যেতে পারে। তবে তাতে কোন ফযিলত নেই। যেমন ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন,

كَأنَّهُما يَرَيانِ تَأْخِيرَ ذَلِكَ واسِعًا، لا أنَّهُما يَعْمَدانِ الفَضْلَ لِتَرْكِهِ بَعْدَ أنْ أُبِيحَ لَهُما، وصارا مُفْطِرَيْنِ بِغَيْرِ أكَلٍ وشُرْبٍ، لِأنَّ الصَّوْمَ لا يَصْلُحُ فِي اللَّيْلِ،

"তাঁরা বুঝাতে চেয়েছেন দেরি করাতে প্রশস্ততা রয়েছে (অর্থাৎ বিশেষ কারণ বশত দেরি করা যেতে পারে)। তবে এমন নয় যে তাঁদের (দ্রুত ইফতারের) সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এটাকে ফযিলতের আশায় ইচ্ছাকৃত ছেড়ে দিয়েছেন এবং কোন পানাহার ছাড়াই তারা ইফতার করেছেন। কারণ রাতের বেলা সিয়াম শুদ্ধ নয়।"

معرفة السنن والآثار، ٦/‏٢٨٦ 

তিনি তাঁর কিতাবুল উমে আরো বলেন,

ولا يُكْرَهُ تَأْخِيرُهُ إلّا لِمَن تَعَمَّدَهُ ورَأى الفَضْلَ فِيهِ ومُقْتَضاهُ أنَّ التَّأْخِيرَ لا يُكْرَهُ مُطْلَقًا

"ইফতারে দেরি করা তার জন্য মাকরুহ হবে যে এটাতে ফযিলত আছে মনে করে ইচ্ছাকৃত দেরি করবে। যদিও দেরি করাতে সাধারণত মাকরূহ না হওয়ারই দাবি রাখে।"

فتح الباري لابن حجر، ٤/‏١٩٩

তবে ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর উক্ত বক্তব্যকে রদ করে শায়খ মুহাম্মদ আদম আল আছয়ুভী বলেন,

وفيه نظر لا يخفى؛ إذ كونه مكروهًا هو الذي دلّ عليه ظاهر النصّ؛ لأنه نصّ على أن التعجيل فيه مخالفة لليهود والنصارى، كما سلف من حديث أبي هريرة ، وقد أُمِر -ﷺ- بمخالفتهم..  وفي تأخير الفطر موافقة لهم، ومخالفة لهديه -ﷺ-، فكيف يقال: إنه غير مكروه؟ بل الذي يظهر من النصوص المذكورة التحريم، فتأمّل بالإنصاف.

"এতে যে আপত্তি রয়েছে একথা গোপন নয়। যখন এটি মাকরূহ হওয়া সুস্পষ্ট নস দ্বারা সাব্যস্ত, কেননা নস এ কথার উপর প্রতিষ্ঠিত যে দ্রুত ইফতার করার অর্থ হলো ইহুদী-খৃস্টানদের বিরোধিতা করা, যেমনটা আবু হুরায়রা (রা.) এর হাদীসে গত হয়েছে, আর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তাদের বিরোধিতা করার জন্য, এছাড়াও যখন ইফতার দেরি করাতে ইহুদী-খৃস্টানের মুয়াফেক ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশের মুখালেফ হয়, তখন কীভাবে বলা যায় এটি মাকরূহ নয়? বরং এটি উল্লেখিত নস দ্বারা সুস্পষ্ট হারাম হওয়ার দাবি রাখে। অতএব ইনসাফের সহিত বিবেচনা করুন।"

البحر المحيط الثجاج في شرح صحيح الإمام مسلم بن الحجاج، ٢٠/‏٥٦٨ 

ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) বলেন,

فَهُوَ لِبَيانِ جَوازِ التَّأْخِيرِ لِئَلّا يُظَنَّ وُجُوبُ التَّعْجِيلِ

"তাঁরা এটি করেছেন মুলত (ওজর বশত) বিলম্বে ইফতার জায়েয হওয়া বুঝাতে। যাতে লোকেরা দ্রুত ইফতার করাকে ওয়াজিব মনে না করে।"

مرقاة المفاتيح ، ٤/‏١٣٨٥  

ইমাম মাওয়ারদী (রহ.) বলেন,

بِأنَّهُما أرادا بَيانَ جَوازِ ذَلِكَ لِئَلّا يُظَنَّ وُجُوبُ التَّعْجِيلِ

"তাঁরা উভয়ে এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে (ওজর বশত) এটা জায়েয। যাতে লোকেরা এটাকে ওয়াজিব মনে না করে।"

المجموع شرح المهذب، ٦/٣٦٢

পঞ্চমত, আলোচ্য আছারটি দলিলের উপযুক্তই নয়। কেননা একদিকে আছারটি মুনকাতি। অন্যদিকে উক্ত আছারের বুনিয়াদি রাবী হুমায়দ বিন আব্দুর রহমান (রহ.) থেকেই এ বিষয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত বর্ণনা পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়েছে ফারুকে আযম (রা.) ও জিন্নুরাইন (রা.) উভয়ে সালাতের পূর্বেই ইফতার করতেন। যেমন..

حَدَّثَنا عَبْدُ الأعْلى، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أنَّ عُمَرَ، وعُثْمانَ، كانا يُصَلِّيانِ المَغْرِبَ إذا رَأيا اللَّيْلَ، كانا يُفْطِرانِ قَبْلَ أنْ يُصَلِّيا

"নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব (রা.) ও উসমান বিন আফ্ফান (রা.) উভয়ে অন্ধকার দেখলেই মাগরিবের সালাত আদায় করতেন। তাঁরা উভয়ে সালাতের আগে ইফতার করতেন।"

مصنف ابن أبي شيبة، ٩٧٩٢

এছাড়াও উপরে উল্লেখ করেছি, ওমর বিন খাত্তাব (রা.) দ্রুত ইফতার করার জন্য বিভিন্ন প্রাদেশিক শাসকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি করতেন। পাশাপাশি লোকেরা দ্রুত ইফতার করে কিনা সে বিষয়েও তিনি খোঁজখবর রাখতেন। কাজেই ফারুকে আযম (রা.) এর মাগরিব পড়ে ইফতার করার ঘটনা সত্য হলেও সেটা কোনভাবেই তাঁর অভ্যাসগত ছিল না। 

• দ্রুত ইফতারের হেকমত..

১। সুন্নাহ'র অনুসরণ করা।

২। নববী আদর্শ ধারণ করা।

৩। ইহুদী-খৃস্টানদের বিরোধিতা করা।

৪। রাফেযীদের রদ করা।

৫। হুদুদে শরিয়ার উপর অটল থাকা।

৬। সিয়ামের সাথে সখ্যতা স্থাপন করা।

৭। যথাসময়ে হালাল নিয়ামত ভোগ করা।

৮। কল্যাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা।

৯। দ্বীন বিজয়ে সহযোগিতা করা।

১০। ইবাদতের জন্য দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করা।

• ফিতনার যুগে সুন্নাহ'কে আঁকড়ে ধরলে বিনিময়ে একশ শহীদের সওয়াব..

عن أبي هريرة: من تمسَّكَ بسنَّتي عندَ فسادِ أمَّتي فلهُ أجرُ مئة شهيدٍ.

"আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিপর্যয়ের সময় আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য রয়েছে একশত শাহীদের সাওয়াব।"

مشكاة المصابيح، ١‏/١٣٦

• কারোর কথায় সুন্নাহ পরিত্যাগ করা যাবে না..

 قالَ علي بن أبي طالب : ما كُنْتُ لأدَعَ سُنَّةَ النبيِّ ﷺ لِقَوْلِ أحَدٍ..

"আলী ইবনে আবি তালেব (রা.) বলেন, কারোর কথায় আমি নবী (সা.) এর সুন্নাহ পরিহার করতে পারবো না।"

صحيح البخاري ١٥٦٣  

সারকথাঃ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ'র বিপরীতে তথাকথিত মনুষ্য তৈরি সতর্কতার কোন মূল্য নেই। বরং এটি একটি সম্পূর্ণ শয়তানী ওয়াসওয়াসা, যা থেকে প্রত্যেক মুসলমানের বেঁচে থাকা জরুরী। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

বাচ্চাদের প্রাথমিক রুকইয়াহ ও বিধিনিষেধ

প্রাথমিক রুকইয়াহ পদ্ধতিঃ  ১।   মানুষ ও জ্বীনের বদনজর ও জ্বীনের আছর থেকে হিফাযত ও শিফার নিয়তে - দুরুদে ইব্রাহিম, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি,...